1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
নিরাপদ সড়ক চাই সফল সামাজিক সংগঠন তারেক রহমান ফিরতে চাইলে একদিনেই ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব ঘোড়াঘাটে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালক সীমিত গঠন ও বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত শ্রীমঙ্গলে ১১মাস ধরে ঘরবন্দী এক পরিবার লামায় ট্রাক্টর মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ৪ চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক ব্লকেড, ৬ লেনে উন্নীতকরণের দাবি রূপগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও  আলোচনা সভা  গৌরনদীতে বিএনপি’র আঞ্চলিক কার্যালয়ে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড গাইবান্ধা, ক্রয়কৃত জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা হত্যার হুমকি থানায় অভিযোগ  ৩২ তম বাৎসরিক ওরশ মোবারক ও গুনীসম্মাননা ২০২৫

মানবিকতার অভাবে উৎপলের মৃত্যু: গার্মেন্টস খাতে আর কত জীবন ঝরবে!

তানহা ইসলাম
  • প্রকাশিত: বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

চট্টগ্রামের সিইপিজেড এলাকার এলসিবি গার্মেন্টসে এক নির্মম ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে। জীবন নিয়ে, মানবিকতার সমস্ত অনুশাসন ভেঙে আদিবাসী তরুণ শ্রমিক উৎপল তঞ্চঙ্গ্যাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তিনি ফ্যাক্টরিতে ফিনিশিং হেলপার পদে কর্মরত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উৎপল গতকাল থেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রচণ্ড অসুস্থ ছিলেন। দুর্বল শরীর নিয়ে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেন। কিন্তু তার আবেদন আমলে নেওয়া হয়নি। চাকরি হারানোর ভয়, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আতঙ্ক, এবং শ্রমিক জীবনের চিরচেনা নিরাপত্তাহীনতায় জর্জরিত উৎপল বাধ্য হয়ে অসুস্থ শরীর নিয়েই কাজে যোগ দেন। আজ সকালে, আরও ক্লান্ত, আরও দুর্বল শরীরে আবার ছুটির জন্য আবেদন করেন তিনি। সাড়া মেলেনি তখনও। বরং তাকে কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। দুপুর একটার দিকে শরীরের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। হালকা কণ্ঠের আর্তিতে, চোখের কোণে কান্না জমে তৃতীয়বারের মতো ছুটির আবেদন করেন উৎপল। তবুও ছুটি মেলেনি। যখন অবশেষে বিকেল চারটায় ছুটি মঞ্জুর করা হয়, তখন তার শরীর এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না। তাকে দ্রুত বেবজা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সে সময়ের অবহেলা ও দেরির মাশুল দিতে হলো প্রাণ দিয়ে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তরুণ শ্রমিক উৎপল তঞ্চঙ্গ্যা।
উৎপলের মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি শ্রমিকের জীবন নিয়ে প্রতিষ্ঠানিক অবহেলার ভয়াবহ দলিল। কোনো শ্রমিক যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন তার প্রতি ন্যূনতম মানবিক আচরণ প্রদর্শন করার যে দায় প্রতিষ্ঠানগুলোর, তা এখানে চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। উৎপলের সহকর্মী পূর্ণা চাকমা কান্নাভেজা কণ্ঠে জানান, “উৎপলের মৃত্যুর জন্য কারখানার অমানবিক আচরণ সরাসরি দায়ী। যদি সময়মতো ছুটি দিত, মানবিকভাবে একটু সহানুভূতির আচরণ করত, তাহলে হয়তো আজ উৎপল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকত।” আজকের বাস্তবতা হলো, শ্রমিকদের ওপর এই অবহেলা আর নির্যাতনের সংস্কৃতি দিনে দিনে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডের রূপ নিচ্ছে। রোগে-শোকে ভেঙে পড়া শ্রমিকের মুখে মুঠোফোনের ক্যামেরা ঠেকিয়ে ‘শুধু উৎপাদন বাড়াও’ — এই মানসিকতা যতদিন চলবে, ততদিন উৎপলের মতো আরও অনেক তরুণ শ্রমিক অকালমৃত্যুর মুখোমুখি হবে।
একটি সমাজের সভ্যতা নিরূপিত হয় তার দুর্বলতম নাগরিকের প্রতি আচরণ দিয়ে। যেখানে শ্রমিকের জীবন এত সস্তা, যেখানে শ্রমিকের অসুস্থ শরীরেও লাভের খাতা ভরাতে বাধ্য করা হয়, সেখানে মানবিকতার স্থান কোথায়?
উৎপলের মৃত্যু আমাদের সামনে এক কঠিন প্রশ্ন রেখে গেল— শ্রমিক কি কেবল মেশিন? তাদের মানবিক অনুভূতি, যন্ত্রণা, দুর্বলতা কি কোনো মূল্য রাখে না? আজ প্রয়োজন, এই নির্মমতা, এই অবহেলার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান প্রতিবাদ। প্রয়োজন একটি কাঠামোগত পরিবর্তন— যেখানে শ্রমিকের জীবন, মর্যাদা এবং মানবাধিকার থাকবে সবার আগে।
আমরা দাবি জানাই: উৎপল তঞ্চঙ্গ্যার মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকের ন্যূনতম মানবিক অধিকার নিশ্চিত করা হোক।
অসুস্থ শ্রমিকের জন্য বাধ্যতামূলক চিকিৎসা সহায়তা ও ছুটি প্রদানের আইনি নিশ্চয়তা তৈরি হোক।
উৎপল ভাইয়ের মৃত্যু যেন নিষ্ফল না যায়।
শ্রমিকের জীবন নিয়ে নির্মমতার অবসান চাই।
মানবিকতা হোক শ্রমনীতির প্রথম শর্ত

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট