1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১২:৫২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
মুরাদনগরে চাচার উপর ভাতিজার হামলা; বাড়িঘর ভাংচুর কুষ্টিয়ায় ব্জ্রপাতে কৃষক ও ট্রলি চালকের মৃ’ত্যু মানবিকতার অভাবে উৎপলের মৃত্যু: গার্মেন্টস খাতে আর কত জীবন ঝরবে! ১৯৯১-এর সেই বিভীষিকাময় ২৯ এপ্রিল: চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও স্মৃতিচারণ” আলোর দীপ্তি: এক নারী শিক্ষকের জীবনচিত্র আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন সহায়তা সংস্থার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি অনুমোদিত — ফরহাদুল হাসান সভাপতি, সাহেদ চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক প্যাকেজ ব্যবসার আড়ালে পতিতাবৃত্তি, চোলাই মদ ও অস্ত্র সরবরাহে ওয়াসীমের অপরাধ সাম্রাজ্য! চট্টগ্রামে ওয়াসার পানিতে কেচু! জনস্বাস্থ্যের হুমকি, নাগরিক ফোরামের জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান! হামিদচরে শোকের ছায়া: কিশোর গ্যাংয়ের অমানবিক আগ্রাসন চট্টগ্রামে চোরাচালানবিরোধী অভিযানে ১৪টি বিদেশি স্বর্ণের বারসহ গ্রেপ্তার ১

ঈদের দিন ছিল যেন ফিরে আসা শৈশবে

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

পাঁচ দিন পেরিয়ে এসেও মন থেকে ঝরে না ঈদের সুবাস। হৃদয়ের গহীনে বাঁধা পড়ে আছে এবারের ঈদ উদযাপনের প্রতিটি মুহূর্ত। বহু বছর পর আবারও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পেরেছি আমার চিরচেনা গ্রাম, আমার শেকড়, আমার জন্মভূমি চরণদ্বীপ, বোয়ালখালীতে – সেই নজর মোহাম্মদ বাড়ীতে। এইবার শহরের ব্যস্ততা ছাড়িয়ে, ঈদের আগের দিনই আমরা পুরো পরিবার মিলে রওনা দিলাম গ্রামের পথে। রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট—কিন্তু সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর চেষ্টায় কালুরঘাট সেতুর জট খুলে গেলে আমাদের যাত্রা সহজ হয়। ইফতারের ঠিক আগেই পৌঁছে গেলাম বাড়িতে। বহুদিন পর নিজের ভিটেমাটিতে ইফতারের তৃপ্তি যেন বেহেশতির স্বাদ হয়ে ধরা দিল। ঈদের আগের রাত থেকেই শুরু হলো সেই চেনা উচ্ছ্বাস। আত্মীয়স্বজনের পদচারণায় প্রাণ ফিরে পেল পুরোনো বাড়ি। ভাতিজা এডভোকেট মফিজ, জসিম মেম্বার, আবুল কালাম, হিরোসহ আরও অনেকেই চলে এলো। রাতভর চলল আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণ। সেই আড্ডার মধ্যেই আমি আমার নাতিদের নিয়ে নদীর ধারে গিয়েছিলাম। ঈদের দিন কর্ণফুলীর কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর দেখে মন যেন আটকে গেল শৈশবে—যখন ঈদের দিন আমরা এই নদীর জলে স্নান করে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যেতাম। সেই সকালটা ছিল এক অপার বিস্ময়ের অভিজ্ঞতা। দীর্ঘ তিরিশ বছর পর ঈদের দিন ভোরবেলা গ্রামে হাঁটলাম। চারদিকে শিশিরভেজা ঘাস, নদীর বুক ছুঁয়ে আসা হালকা কুয়াশা, আর কর্ণফুলীর শান্ত স্রোত – সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, আমি সময়ের গায়ে হাত বুলিয়ে ফিরে যাচ্ছি সেই শৈশবে, যেটা আজও আমার হৃদয়ে ধরা দেয় জোছনার মতো। ঈদের দিন সকালবেলা আমরা সবাই মিলে নজর মোহাম্মদ ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় ঈদের জামাতে অংশ নিলাম। নাতি কাশিব আর কাইয়েনকে নিয়ে কাতারে দাঁড়িয়ে যখন তাকবির দিলাম, তখন মনে হলো – এই তো আমার সত্যিকার ঈদ। নামাজ শেষে কোলাকুলির ঢেউ বয়ে গেল সমাজজুড়ে। অনেকেই আর নেই – কিন্তু যাদের পেয়েছি, তাদের ভালোবাসায় এই ঈদ পূর্ণতা পেয়েছে।তবে একটু কষ্ট পেয়েছিলাম মৌলভী সাহেবের জন্য অর্থসংগ্রহের সময়। আমাদের সমাজে কেউ আর অভুক্ত নয়, কিন্তু মন থেকে অনেকেই যেন দরিদ্র। আমি ভেবেছিলাম এক হাজার টাকা দেবো, কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হলো, এবার দ্বিগুণ দেওয়া উচিত। দিলাম দুই হাজার টাকা। আমার ছেলে সাকিবও হুজুরকে নিজে থেকে পাঁচশ টাকা দিয়েছে। আল্লাহ যেন এই দানকে কবুল করেন।
এরপর আমরা সবাই কবরস্থানে গেলাম। দাদাজান, আম্মা-আব্বা, প্রিয়জনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা কাঁপা কণ্ঠে দোয়া করলাম। সেই জমির উপর যে ষড়যন্ত্র চলে, তার রেহাই চেয়ে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানালাম।বাড়ি ফিরে দেখি মেহমানদের ভিড়। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এসে সালাম করে সালামি চায়। আমাদের শৈশবে ঈদের সালামির তেমন রেওয়াজ ছিল না। আমরা ঈদের আনন্দ খুঁজতাম মাঠে, নদীর পাড়ে, কুসুম কুসুম রোদে ছুটে চলায়। এখন সময় বদলেছে, কিন্তু ঈদের প্রাণটা এক – ভালোবাসা, সম্পর্ক আর ফিরে আসার আহ্বান। ঈদের পরদিন যেন বাড়ি রূপ নিলো এক বিয়ে বাড়িতে। সাকিবের শ্বশুরবাড়ি থেকে ৬০-৭০ জন মেহমান এলো। তাদের জন্য আয়োজন করলাম সুস্বাদু খাবার, মিষ্টি আপ্যায়ন। আমাদের বাড়িতে এলেন বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম সারোয়ারও – ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে। ছুটি না নিয়ে দায়িত্বে ছিলেন, সেই সাথেই বন্ধুত্বের অটুট বন্ধনে বাঁধা মানুষটিকে আমি হৃদয়ের খোলা দরজা দিয়ে বরণ করলাম। তৃতীয় দিন গেলাম আমার নানার বাড়ি – প্রায় চল্লিশ বছর পর। মা বেঁচে থাকতে সেখানে গেছি, কিন্তু মায়ের মৃত্যু যেন আমাকে সেই বাড়ি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। এখনো সেখানে শিক্ষার আলো কম, কিন্তু রক্তের সম্পর্ক তো কমে না! ঈদের উপলক্ষ্যে তাঁদের ভালোবাসার সেই সহজ সরল রূপ আমাকে নরম করে দিল।
ঈদের শেষ বিকেলে আমরা সবাই একসাথে ছবি তুললাম। ছবির ফ্রেমে ধরা পড়লো শত শত ভালোবাসার মুখ, আমাদের হৃদয়ের হাসি, নাতিদের কৌতুহলী দৃষ্টি, ভাইবোনের মিলন আর একত্রে কাটানো সময়ের অমূল্য মুহূর্তগুলো। মনে হলো—এই ছবিগুলো কেবল দৃশ্য নয়, এগুলো সময়ের পাতায় লেখা এক একটি কবিতা।
শেষে যখন শহরের ইট-পাথরের কারাগারে ফিরে এলাম, মনে হলো কিছু ফেলে এলাম পেছনে। সেই নদী, সেই কুয়াশা, সেই মানুষ, সেই গ্রাম – সব যেন হৃদয়ে গেঁথে রইল চিরদিনের মতো। জানি না ভবিষ্যতের ঈদ এমন হবে কিনা, কিন্তু এই বছরের ঈদ—এই ফিরে পাওয়া, এই আপনভূমির আহ্বান—আমার মনের খাতায় চিরকাল রয়ে যাবে এক অমলিন চিত্র হয়ে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট