বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জাতির গর্ব। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা সবসময় নিরপেক্ষ, পেশাদার এবং সংবিধান সম্মতভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। অথচ এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সম্প্রতি যে ভয়ংকর ও হুমকিসূচক বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু সেনাবাহিনীর মর্যাদার ওপর আঘাত নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি। ফুয়াদ প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীকে হুমকি দিয়ে বলেছেন যে, ক্যান্টনমেন্ট উড়িয়ে দেওয়া হবে! একজন আইনজীবীর মুখ থেকে এমন কথা শোনা শুধু অস্বাভাবিক নয়, বরং এটি সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহমূলক। প্রশ্ন হলো, তিনি কীসের বলে এত বড় দুঃসাহস দেখালেন? কী তার উদ্দেশ্য? তিনি কি নিছক রাজনৈতিক চমক সৃষ্টি করতে চেয়েছেন, নাকি এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে?
একজন আইনজ্ঞ হয়েও বেআইনি কথা বলার দুঃসাহস কীভাবে পেলেন?
ব্যারিস্টার হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল সংবিধান এবং রাষ্ট্রীয় আইন মেনে কথা বলা। কিন্তু তার বক্তব্য কোনো আইনি ব্যাখ্যার মধ্যেই পড়ে না। বরং এটি চরম উসকানিমূলক, রাষ্ট্রদ্রোহমূলক এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার প্রয়াস। একজন আইনজ্ঞ হয়ে তিনি কীভাবে এত বড় অপরাধমূলক বক্তব্য দিতে পারেন? এটি কি তার অসচেতনতা, নাকি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ?
একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে এমন হুমকিসূচক কথা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তার বক্তব্য সেনাবাহিনীকে অপমান করার শামিল, যা কোনো স্বাধীন দেশের নাগরিক মেনে নিতে পারে না। সেনাবাহিনী দেশের রক্ষক, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষ নয়। অথচ ফুয়াদ এমনভাবে কথা বলেছেন যেন তিনি তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে? বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী, এমন উসকানিমূলক ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যের জন্য কয়েকটি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে— রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা (দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ১২৪(ক) ধারা অনুযায়ী) –
এই আইনে বলা হয়েছে, যদি কেউ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায় বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাহলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা যেতে পারে। ফুয়াদের বক্তব্য সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা যায়, তাই এই আইনের আওতায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ (ধারা ২৫, ২৯, ৩১, ৩৫, ৪৩) –
এই আইনের আওতায় ফুয়াদের বক্তব্য যদি ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়ে থাকে, তবে এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করার প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিশেষ করে ধারা ৩১ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি জাতীয় নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্বের ক্ষতি সাধন করে এমন কিছু প্রচার করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।
সন্ত্রাস দমন আইন, ২০০৯ (সংশোধিত ২০১২ ও ২০১৯) –
সেনাবাহিনীকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়াটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সংজ্ঞায় পড়ে। এই আইনের অধীনে ফুয়াদের বক্তব্যের জন্য তাকে গ্রেফতার করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা যেতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ –তার বক্তব্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এই আইনের আওতায় দ্রুততম সময়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
মানহানি আইন (দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৫০০ ও ৫০৫ ধারা অনুযায়ী) – ফুয়াদের বক্তব্য শুধু সেনাবাহিনীকে অপমান করেনি, বরং দেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তির ক্ষতি করেছে। ফলে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা যেতে পারে। সেনাবাহিনী নিয়ে রাজনীতি কতটা বিপজ্জনক?
বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শুধুমাত্র জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে না, তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সম্মানজনক ভূমিকা রাখছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অবদান বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। অথচ ফুয়াদের মতো কিছু ব্যক্তি নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে এই গৌরবময় প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। এ ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এটি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে আঘাত করার এক বিপজ্জনক প্রবণতা, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবেশ ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব- বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, দেশের নিরাপত্তাবাহিনীকে টার্গেট করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া যাবে।
ফুয়াদের বক্তব্য শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত উগ্র চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি হতে পারে একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ। এর পেছনে কি কোনো গোষ্ঠী কাজ করছে? কেউ কি ইচ্ছাকৃতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা জরুরি।
ফুয়াদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান-
এ ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আরও অনেকেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এমন বেপরোয়া মন্তব্য করতে উৎসাহী হবে। রাষ্ট্রদ্রোহ এবং আইনশৃঙ্খলা অবনতির মতো অপরাধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমরা আশা করি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। সেনাবাহিনী দেশের গর্ব, তাদের নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দেওয়া মানে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা। এ ধরনের অপরাধীরা যাতে ভবিষ্যতে এমন দুঃসাহস দেখাতে না পারে, সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র—এখানে কোনো ষড়যন্ত্রকারীর স্থান নেই!