সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস বদলায়, বদলায় মানুষ, বদলায় সমাজ। কিন্তু কিছু প্রশ্ন চিরন্তন থেকে যায়। কেন আমাদের বোয়ালখালী এখনও অবহেলিত? কেন এখানকার মানুষ প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখে, অথচ সেই স্বপ্ন বাস্তবতার মুখ দেখে না? কেন যুগে যুগে প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়, কিন্তু উন্নয়নের বাতাস এসে এই জনপদের আকাশকে শীতল করে না?
তবে আজ, এক নতুন দিনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এক নতুন স্বপ্ন বুনছে বোয়ালখালী। আর সেই স্বপ্নের কারিগর একজন মানুষ—রবিউল হোসেন। তিনি কোনো কাল্পনিক চরিত্র নন, তিনি কোনো ক্ষমতাবান পরিবারের উত্তরসূরি নন। তিনি নিজের হাতের পরিশ্রমে, নিজের মেধার শক্তিতে, নিজের সাহসের আলোকচ্ছটায় এক বাস্তব মানুষ। যিনি প্রবাসে থেকেও শিকড়ের কথা ভোলেননি, যিনি নিজেকে নিয়ে ভাবেননি, বরং নিজের জনপদের মানুষদের ভাগ্য বদলের চিন্তায় প্রতিনিয়ত জেগে থাকেন।
একটি স্বপ্নের যাত্রা- রবিউল হোসেন বেড়ে উঠেছেন বোয়ালখালীর মাটিতে। এখানকার মেঠোপথে তার শৈশব কেটেছে, এখানকার বাতাসে তার কিশোরের দৌড় ছিল দুরন্ত। কিন্তু জীবন যখন তাকে ভিন্ন পথে নিয়ে গেল, তিনি তখনও এই জনপদের মাটি আঁকড়ে রেখেছেন হৃদয়ের গভীরে। ওমানে প্রবাসী জীবনের কঠোর সংগ্রামের মধ্যেও তিনি শুধু নিজের উন্নতি নিয়ে ভাবেননি। বরং কিভাবে বোয়ালখালীর মানুষদের জন্য কিছু করা যায়, কিভাবে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া যায়—সেই ভাবনাই তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িত করেছে।
তিনি চেয়েছেন, বোয়ালখালীর সন্তানদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে। আর তাই নিজের প্রচেষ্টায় ওমানে অন্তত দশ হাজার মানুষকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যারা একসময় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, আজ তারা নিজ হাতে কোটি কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন দেশে। বাংলাদেশ তাদের শ্রমের ঘাম দিয়ে আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে, আর এই পুরো ব্যবস্থার পেছনে রয়েছেন একজন স্বপ্নবান মানুষ—রবিউল হোসেন। কিন্তু তার কীর্তি এখানেই শেষ নয়। তিনি নিজেও প্রতিবছর শত কোটি টাকা বৈধ পথে দেশে পাঠান। তার উপার্জন শুধু নিজের জন্য নয়, তার সফলতা শুধু তার ব্যক্তিগত সুখের জন্য নয়। তিনি চান, তার জন্মভূমির প্রতিটি কোণ আলোকিত হোক, যেন বোয়ালখালী আর অবহেলিত না থাকে, যেন এ অঞ্চলের তরুণদের আর হতাশায় ডুবে থাকতে না হয়।
বোয়ালখালী: এক অবহেলিত স্বপ্নরাজ্য-যে বোয়ালখালী হতে পারত চট্টগ্রামের একটি আধুনিক শহর, যে বোয়ালখালী হতে পারত শিল্প-বাণিজ্যের কেন্দ্র, সেই বোয়ালখালী আজও পড়ে আছে উন্নয়ন বঞ্চিত এক জনপদ হিসেবে। অথচ এখানেই রয়েছে নদীর রাণী কর্ণফুলী, রয়েছে পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য, রয়েছে শহরের একেবারে কাছাকাছি থাকার সুবিধা। শুধু একটি সেতু—কালুরঘাট সেতু—এখানে হয়ে গেলে বদলে যেতে পারে গোটা এলাকার দৃশ্যপট। তৈরি হতে পারে নতুন নতুন শিল্প কারখানা, সৃষ্টি হতে পারে হাজার হাজার কর্মসংস্থান, বোয়ালখালী হয়ে উঠতে পারে চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু সরকার যায়, সরকার আসে, প্রতিশ্রুতি আসে, প্রতিশ্রুতি মিলিয়ে যায়। বোয়ালখালীর ভাগ্য বদলায় না।
এবার সেই পরিবর্তনের ডাক দিচ্ছেন রবিউল হোসেন। তিনি বোয়ালখালীর মানুষের সামনে একটি স্বপ্নের রূপরেখা এঁকেছেন। তিনি বোয়ালখালীর তরুণদের ডেকেছেন, বলেছেন—”এগিয়ে আসো, তোমাদের হাতেই এই জনপদের ভবিষ্যৎ। এই মাটি তোমাদের, এই স্বপ্ন তোমাদের। যদি এক হয়ে কাজ করো, যদি নিজেদের নিয়তি নিজেরা বদলাতে চাও—তবে কেউ তোমাদের থামাতে পারবে না।”
তারুণ্যের আহ্বান: বোয়ালখালীর ভবিষ্যৎ–
রবিউল হোসেন নিজেকে বোয়ালখালীর সন্তান হিসেবেই পরিচয় দেন। তিনি বলেন, “আমি কোনো নতুন আগন্তুক নই। আমি এই মাটির সন্তান। এখানে আমার শৈশব কেটেছে, এখানে আমার শেকড়। আমি চাই, এই বোয়ালখালীর হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে। আমি চাই, অবহেলিত বোয়ালখালীকে অবহেলার অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে।”
তার চোখে স্বপ্ন—একটি আধুনিক, উন্নত, সম্ভাবনাময় বোয়ালখালী। যেখানে তরুণরা চাকরির আশায় হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, যেখানে পরিবারগুলো অভাব-অনটনের যন্ত্রণায় কাতর হবে না, যেখানে অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে, যেখানে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে, যেখানে নদীর স্রোতের সঙ্গে মানুষের স্বপ্নও বহমান থাকবে।
এখন সময় এসেছে বোয়ালখালীবাসীর জেগে ওঠার। সময় এসেছে রবিউল হোসেনের মতো স্বপ্নবানদের পাশে দাঁড়ানোর। যদি আমরা সবাই একসঙ্গে এগিয়ে আসি, তবে বোয়ালখালী আর অবহেলিত থাকবে না। তারুণ্যের শক্তিতে, ঐক্যের দীপ্তিতে, পরিকল্পিত উদ্যোগে বদলে যাবে এই জনপদের ভাগ্য।
আজকের এই ঈদ শুধু আনন্দের বার্তা নয়, এটি এক নতুন প্রতিজ্ঞার মুহূর্ত। রবিউল হোসেন পথ দেখিয়েছেন, স্বপ্ন দেখিয়েছেন—এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা কি এই স্বপ্নের অংশ হব? আমরা কি নিজেরা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ব?
ইতিহাস একদিন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে, সময় একদিন প্রমাণ করবে—বোয়ালখালী সত্যিই বদলেছে কি না। আর আমরা কি সেই পরিবর্তনের নায়ক হতে পারব, নাকি আবারও সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাব? সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে, কারণ সময় আর অপেক্ষা করে না।