গত ৯ ই ফেব্রুয়ারী, ফিয়োদর মিখাইলোভিচ দস্তয়েভস্কির ১৪৪ মৃত্যু দিবস অতিবাহিত হলো, যিনি ১৮৮১ সালে পৃথিবী থেকে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর রচনাগুলি শুধু সাহিত্যিক জীবনের এক অধ্যায় নয়, বরং একটি যুগান্তকারী চিন্তা ও মানবিক সংকটের প্রকাশ। দস্তয়েভস্কির লেখা মানবিক সত্তার গভীরতর অনুভূতি, সামাজিক দ্বন্দ্ব এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে অসীম আগ্রহের পরিচায়ক। তার সাহিত্যিক ভ্রমণ একদিকে যেমন তাকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে, তেমনি সাহিত্যপ্রেমীদের মনে গভীর প্রভাবও বিস্তার করেছে। দস্তয়েভস্কির সেরা রচনা হিসেবে আমি “ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট” (Crime and Punishment) বইটি উল্লেখ করতে চাই, যা আমি পড়েছি এবং পড়ার পর আমি তাঁর লেখার এক নিবেদিত ভক্ত হয়ে গেছি। এই বইটি মানবিক মনস্তত্ত্ব, নৈতিক দ্বন্দ্ব, অপরাধ এবং তার পরিণতি নিয়ে দস্তয়েভস্কির গভীর চিন্তার প্রতিফলন। বিশেষভাবে, বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র রডিয়ন রাসকলনিকভের সঙ্গেই আমি যেন এক আত্মিক যোগাযোগ অনুভব করি। সে যখন নিজের অপরাধের জন্য অপরাধবোধ এবং পাপবোধের মধ্যে আটকে যায়, তখন তার জীবন এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, যা পাঠককে গভীর চিন্তা করতে বাধ্য করে।
“ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট” শুধুমাত্র একটি অপরাধের কাহিনী নয়, বরং মানুষের আত্মসংকট, পরিত্রাণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, এবং জীবন-মৃত্যুর প্রশ্নে এক তীব্র বিবেচনা। দস্তয়েভস্কি তার চিরকালীন মূল্যবান অনুসন্ধান এখানে তুলে ধরেছেন। আমি যখন এই বইটি পড়ি, তখন দস্তয়েভস্কির ভাষা ও চিন্তার গভীরতা আমাকে এক নতুন জগতে নিয়ে যায়, যেখানে মানুষের মনস্তত্ত্ব ও জীবনের অস্তিত্বের অর্থ নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। বইটির প্রতিটি পাতায় তার গুণগত বিশ্লেষণ এবং চরিত্রগুলির মানসিক পরিস্থিতি আমাকে চিরকালীনভাবে প্রভাবিত করেছে।
ফিয়োদর দস্তয়েভস্কির লেখার প্রতি আমার যে আকর্ষণ তৈরি হয়েছে, তার মূল কারণ হল এই ধরনের গভীর মানবিক প্রশ্নগুলি তিনি সযত্নে চিত্রিত করেছেন। আজকের দিনে তার লেখা পৃথিবীজুড়ে পাঠকদের কাছে প্রাসঙ্গিক এবং জীবন্ত হয়ে রয়েছে, এবং তার সাহিত্যকর্ম এমন এক চিরকালীন ঐতিহ্য তৈরি করেছে যা আজও আমাদের চিন্তার গতিপথকে প্রভাবিত করে।
আজকের লেখাটি যখন লিখছি, তখন আমি গভীর এক অনুভূতির মাঝে ডুবে আছি। সাহিত্যিক ফিয়োদর দস্তয়েভস্কির প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করতে আমি আমার সব অনুভূতি খুঁজে পাচ্ছি। তার লেখা, তার জীবন, তার সংগ্রাম—সবকিছুই আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। দস্তয়েভস্কির প্রতি এই অনুভূতি শুধু একজন পাঠকের নয়, একজন লেখকেরও। এমন একজন লেখক, যিনি তার জীবনযাত্রার অসীম সংগ্রাম এবং দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে শিখে মানবজীবনের অন্ধকার দিকগুলোকে প্রকাশ করেছেন, যেগুলি আমরা হয়তো সচরাচর দেখতে পাই না। তার লেখা আজও আমাকে অনুপ্রাণিত করে, আমাকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে কঠিন পরিস্থিতিতেও মানুষের অদম্য চেষ্টার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মানবিকতা রক্ষা করতে হয়। দস্তয়েভস্কির প্রতি আমার এই গভীর শ্রদ্ধা ও অনুভূতি থেকেই আজকের এই লেখাটি।
ফিয়োদর মিখাইলোভিচ দস্তয়েভস্কি, যার জীবনের গল্প একটি নাটকীয় সংগ্রামের মতোই, শুধু তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে নয়, তার জীবনযাপনের ভেতরও এক অভূতপূর্ব অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। সেন্ট পিটার্সবার্গের ১৮৪৯ সালের এক শীতল সকালে যখন ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়িয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে যাচ্ছিল, তখন তাঁর অনুভূতিগুলো ছিল পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার ভয়াবহতা এবং মৃত্যুর অনিবার্যতার সঙ্গী। সেই মুহূর্তে তাঁর কাছে সময়টুকু যেন অমিতান্তিক হয়ে উঠেছিল। পাঁচ মিনিট—এটা ছিল তার জীবনের শেষ মুহূর্ত। মৃত্যুর আগে, দস্তয়েভস্কি সেই সময়টাকে এমনভাবে ভাগ করেছিলেন যা সত্যিই এক অজানা দুঃসহ যন্ত্রণা তৈরি করেছিল। প্রথম দুই মিনিট তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে বিদায় নিয়েছিলেন। পরের দুই মিনিট তাঁর নিজের জীবনের প্রতি গভীর বিশ্লেষণ ও রোমন্থন ছিল। আর শেষ এক মিনিট, পৃথিবীকে দেখতে চেয়েছিলেন শেষবারের মতো।
এই অভিজ্ঞতা দস্তয়েভস্কির জীবনব্যাপী যে নানান সংকট, উদ্বেগ এবং যন্ত্রণার প্রতিফলন ছিল, তা পরবর্তীতে তাঁর সমস্ত রচনাতেই ফুটে উঠেছে। মৃত্যু এবং জীবনের মাঝে যখন সে সময়টুকু থমকে দাঁড়ায়, তখন তা এক বিপুল অভ্যন্তরীণ কোলাহল সৃষ্টি করে। ফিয়োদর দস্তয়েভস্কির সাহিত্যে এক চিরন্তন বিষয়—মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব, নৈতিক সংকট, জীবনের অস্থিরতা এবং অন্তর্নিহিত ত্যাগের বিষয়গুলিই প্রধানত আলোচিত হয়েছে।
দস্তয়েভস্কি যখন ১৮৪৯ সালের ২২ ডিসেম্বর মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন তাঁর সামনে ছিল একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যত। রাশিয়ার সেই সময়ের জাঁকজমকপূর্ণ ক্ষমতাসীন প্রশাসন বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। দস্তয়েভস্কির মতো একজন প্রগতিশীল চিন্তাবিদকে যখন দণ্ডিত করা হয়েছিল, তখন তাঁর সামনে এক ভয়ানক দুঃখজনক সময়ের ঘনিয়ে আসা উপস্থিতি ছিল। তবে, সেই মুহূর্তে মৃত্যুর প্রতি তার যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছিল, তা ছিল অনন্য—একদিকে মৃত্যুর শঙ্কা, অন্যদিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার দুর্বিষহ কষ্ট। প্রথম দিকে তিনি আশায় ছিলেন যে, হয়তো কিছু হবে না। পরবর্তীতে তিনি একসময় এই সত্যটি মেনে নিয়েছিলেন এবং তার সঙ্গীরা যখন মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, তিনি নিজেও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তবে, তাঁর জীবনের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক ছিল যে, মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এই মানুষটি শুধু সাহিত্যের পথেই নয়, তার জীবনযাত্রায়ও এক অনন্য রোল মডেল হয়ে উঠেছিলেন। এক কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়া দস্তয়েভস্কি পরবর্তীকালে তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে প্রতিফলিত করেছেন। মৃত্যুর আগে তার জীবনের কাছে এই সময়টা এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতার মতো পরিণত হয়েছিল, আর এই অভিজ্ঞতা তাঁকে সাহিত্য রচনায় অনুপ্রাণিত করেছিল। তাঁর সাহিত্য যেন এক গভীর আবেগ ও তীক্ষ্ণ মনোবিজ্ঞানকে প্রতিফলিত করে, যা আজও মানুষের অন্তর্গত সত্যের সন্ধান দেয়।
ফিয়োদর দস্তয়েভস্কির জীবনের এই অভিজ্ঞতা এবং তাঁর সাহিত্যের মধ্যে গভীর সংবেদনশীলতা, বিদ্রোহ, সামাজিক অস্থিরতা, নৈতিক সংকট, এবং মানুষের অস্তিত্বের অস্পষ্টতা, আমাদের বর্তমান সমাজের বাস্তবতার সাথে অদ্ভুতভাবে মিল খায়। তাঁর সাহিত্যের মধ্যে মানবিক যন্ত্রণা, আদর্শবাদ, নৈতিক সংকট এবং জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে। এসব বিষয় আজও আমাদের জীবনে প্রতিধ্বনিত হয়।
যেহেতু আমি একজন লেখক হতে চাই, তাই আমার মনে হয় দস্তয়েভস্কির মত একজন বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক হতে পারলে আমার জীবনের এক নতুন অর্থ তৈরি হতো। তাঁর মতো একজন লেখক হতে পারলে তা আমার জন্য ছিল একটি স্বপ্ন, যা লেখালেখির প্রতি আমার এক অবিচলিত আকর্ষণ সৃষ্টি করেছিল। লেখক হিসেবে তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রবেশ করে আমি বুঝতে পারি, কোন পরিস্থিতিতেও একজন লেখক যদি সঠিকভাবে তাঁর অভ্যন্তরীণ অনুভূতি, জীবনের সংকট ও আত্মবিশ্বাসকে বহিরঙ্গনভাবে প্রকাশ করতে পারেন, তবে তার সাহিত্য অমর হয়ে থাকে। আজকের লেখাটি মূলত ফিয়োদর দস্তয়েভস্কির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন হিসেবে লেখা, যার সাহিত্য আজও আমাকে অনুপ্রাণিত করে। ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি শুধু একটি নাম নয়, তিনি একটি শক্তিশালী সাহিত্যের প্রতীক। তার রচনা জীবনের সবচেয়ে গভীর মুহূর্তগুলোকে ছুঁয়ে যায়। তাঁর লেখায় এমন এক আবেগ, এমন এক অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে যা প্রতিটি পাঠককে গভীরভাবে প্রভাবিত করে এবং চিন্তার জগতকে আলোড়িত করে।
ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি: জীবন বৃত্তান্ত
ফিয়োদর মিখাইলোভিচ দস্তয়েভস্কি (রাশিয়ান: Фёдор Михайлович Достоевский) ১৮২১ সালের ১১ নভেম্বর রাশিয়ার মস্কো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত, যাকে আধুনিক সাহিত্যের অন্যতম প্রভাবশালী লেখক হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর রচনাগুলির মধ্যে সমাজের অন্ধকার দিক, মানবিক সংকট, নৈতিক দ্বন্দ্ব এবং অস্তিত্বের গভীর প্রশ্নগুলো উঠে আসে, যা আজও পাঠকদের হৃদয় স্পর্শ করে। দস্তয়েভস্কি তাঁর জীবনব্যাপী সৃজনশীলতা, ত্যাগ, বিপ্লবী চিন্তাধারা এবং গভীর মানবিক অনুভূতির মাধ্যমে সাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনকরেছেন।শৈশব ও শিক্ষাঃ
দস্তয়েভস্কির পিতা ছিলেন মিখাইল দস্তয়েভস্কি, যিনি একজন সামরিক চিকিৎসক ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর দস্তয়েভস্কি খুব ছোট বয়সেই পিতার সান্নিধ্য হারান। তিনি ১৮৩৮ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গের মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৮৪৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। দস্তয়েভস্কির শিক্ষাজীবন ছিল কঠিন, তবে সেই সময়ই তিনি সাহিত্যের প্রতি গভীর আগ্রহ অনুভব করতে শুরু করেন এবং লেখালেখিতে মনোযোগী হন।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও গ্রেপ্তারঃ১৮৪০ এর দশকে দস্তয়েভস্কি রাশিয়ার সমাজের নানান সমস্যার প্রতি সচেতন হয়ে ওঠেন এবং বিভিন্ন বিপ্লবী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হন। ১৮৪৮ সালে, তিনি পেত্রাশেভস্কি নামক বিপ্লবী গ্রুপের সদস্য হন এবং নিষিদ্ধ সাহিত্য প্রকাশ করতেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ১৮৪৯ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। দস্তয়েভস্কিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে শেষ মুহূর্তে সেই দণ্ড রহিত করে তাঁকে সাইবেরিয়ার বন্দী শিবিরে পাঠানো হয়। এই বন্দী জীবন তাঁর সাহিত্য জীবনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল, যা পরবর্তীতে তাঁর রচনাগুলোর মধ্যে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
নির্বাসন ও সাহিত্য কর্মঃ
দস্তয়েভস্কি সাইবেরিয়ায় প্রায় চার বছর কাটানোর পর ১৮৫৪ সালে তাঁকে সৈনিক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তার পর ১৮৫৯ সালে তাঁকে সেন্ট পিটার্সবার্গে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়। বন্দীজীবনের অভিজ্ঞতা তাঁর সাহিত্যকর্মে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সাইবেরিয়ায় কাটানো সময়ের অভিজ্ঞতা তিনি তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস “দি হাউস অফ দি ডেড” (The House of the Dead) এ তুলে ধরেন, যা বন্দীজীবনের কষ্ট এবং সামাজিক বাস্তবতাকে বর্ণনা করে।
১৮৬০-এর দশকে, দস্তয়েভস্কি তার সবচেয়ে বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্মগুলো রচনা করতে শুরু করেন। তার উপন্যাস “ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট” (Crime and Punishment), “দি ইডিয়ট” (The Idiot), “দ্য ব্রাদারস কারামাজভ” (The Brothers Karamazov), এবং “নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড” (Notes from Underground) রাশিয়ার সমাজ এবং মানুষের মনস্তত্ত্বের গভীর বিশ্লেষণ করে। তাঁর সাহিত্য মানবিক সংকট, নৈতিক দ্বন্দ্ব, পাপ ও পরিত্রাণের ধারণাগুলিকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করে।
শেষ সময় ও মৃত্যু
দস্তয়েভস্কির জীবন ছিল নানা ব্যক্তিগত এবং আর্থিক সংগ্রামের মধ্যে। তাঁর লেখার মাধ্যমে তিনি কেবল সাহিত্যিক যাত্রাই নয়, বরং একটি মানবিক যাত্রাও শুরু করেছিলেন, যেখানে তিনি নিজের দুঃখ, সংগ্রাম ও বিশ্বাসের প্রশ্ন তুলে ধরেছিলেন। দস্তয়েভস্কি বহুবার জুয়া খেলে ধ্বংসের পথে হাঁটেন এবং তাঁর জীবনের বড় একটা অংশ এই আর্থিক সংকটের মধ্যে কেটেছে। তবে তাঁর সাহিত্যিক জীবনে এই সংকটগুলি নতুন কিছু সৃষ্টি করেছিল, যা পরবর্তীতে তার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মগুলোর অংশ হয়ে ওঠে।
১৮৮১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দস্তয়েভস্কি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি একটি খ্রিস্টান ভক্তিপূর্ণ জীবনযাপন করছিলেন এবং তাঁর লেখায় ধর্মীয় এবং নৈতিক প্রশ্নগুলির ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। দস্তয়েভস্কির মৃত্যু রাশিয়ান সাহিত্যের একটি বড় শূন্যতা সৃষ্টি করেছিল।
দস্তয়েভস্কির সাহিত্যকর্মঃ
ফিয়োদর দস্তয়েভস্কির সাহিত্যে মানবতাবাদ, নৈতিক দ্বন্দ্ব, ধর্ম, সমাজতন্ত্র এবং অস্তিত্ববাদের মতো বিষয় উঠে এসেছে। তার প্রধান উপন্যাসগুলো হল:
“ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট” (Crime and Punishment) – ১৮৬৬
“নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড” (Notes from Underground) – ১৮৬৪
“দি ইডিয়ট” (The Idiot) – ১৮৬৯
“দ্য ব্রাদারস কারামাজভ” (The Brothers Karamazov) – ১৮৮০
“দি গ্যাম্বলার” (The Gambler) – ১৮৬৭
“দি হাউস অফ দি ডেড” (The House of the Dead) – ১৮৬০
দস্তয়েভস্কি তার জীবনের শেষদিকে “ধর্মীয় বিশ্বাস এবং মানবিক পাপের মধ্যে দ্বন্দ্ব” নিয়ে লিখেছিলেন এবং এ বিষয়গুলো তার সাহিত্যকে আরও গভীরতা দিয়েছে। তাঁর লেখা সমালোচকরা সাধারণত ‘মধ্যরাতের তত্ত্ব’ বা ‘অস্তিত্ববাদী সাহিত্যের ভিত্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন।
দস্তয়েভস্কি: অমর সাহিত্যিকঃ
ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি যেভাবে মানবিক সংকট, জীবনের উদ্দেশ্য এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তা সাহিত্যকে শুধু একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার জন্য নয়, বরং মানুষের গভীরতম অনুভূতি ও অস্তিত্বের সন্ধান দেয়। তার লেখার মধ্যে একজন মানুষের নৈতিক সংকট এবং আত্মসন্ধানের নানা স্তর প্রকাশিত হয়। আধুনিক সাহিত্য, মনোবিজ্ঞান এবং অস্তিত্ববাদী তত্ত্বগুলিতে দস্তয়েভস্কির অবদান অমূল্য। তিনি আজও সাহিত্যপ্রেমী এবং চিন্তাবিদদের কাছে অমূল্য এক জ্ঞানভাণ্ডার হিসেবে স্মরণীয়।
ফিয়োদর দস্তয়েভস্কি পৃথিবীকে তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপহার দিয়েছেন এবং তাঁর সৃষ্টি বিশ্বজুড়ে পাঠকদের অনুপ্রাণিত করেছে।