বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ আলোর মশাল হাতে চট্টগ্রামে আসছেন ডাক্তার শাহাদাত হোসেন, নবনির্বাচিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র। তার এই আগমন শুধু একটি দায়িত্বপ্রাপ্তির ব্যাপার নয়; এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য এক নতুন দিনের প্রতিশ্রুতি, যেখানে স্বচ্ছতা, সততা ও জনসেবাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
দীর্ঘদিন ধরে লুটপাট ও দুর্নীতির কবলে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আজ অবশেষে মুক্তি পেতে চলেছে। বিশেষ করে অবৈধ ও জালিয়াতি করে ক্ষমতায় থাকা সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর শাসনামলে করপোরেশনের যে অমানবিক ক্ষতি হয়েছে, তার ভারে নগরবাসী আজ ক্লান্ত। রেজাউল করিম চৌধুরীকে ভোটবিহীনভাবে মেয়র বানানোর মাধ্যমে চট্টগ্রামের প্রগতির পথে শত বছরের প্রতিকূলতা এনে দিয়েছে বর্তমান সরকার। সেই অতীতের কলঙ্কিত অধ্যায় থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিয়ে, চট্টগ্রামবাসীর বিশ্বাস ও ভরসার মশাল নিয়ে এগিয়ে আসছেন ডাক্তার শাহাদাত হোসেন।
প্রথম থেকেই নানা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ক্ষতি করেছেন। কর্ণফুলী নদীর বালু ব্যবসার অবৈধ আয় থেকে শুরু করে ১৫ আগস্ট শোক দিবসে চট্টগ্রামের প্রখ্যাত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্য প্রেরিত অর্থ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করাসহ বহু ন্যাক্কারজনক ঘটনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাকে পদে বসানোর মাধ্যমে সরকারের এক বড় ভুল ছিল।
আজ সেই অন্ধকার সময়ের অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রামবাসী আশাবাদী যে, তাদের পরীক্ষিত পুরুষ ডাক্তার শাহাদাত হোসেন জলাবদ্ধতা নিরসন, নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন, এবং শহরের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তার হাতে সিটি করপোরেশনের পুনর্জাগরণের আশায় বুক বাঁধছেন নগরবাসী।
ডাক্তার শাহাদাত হোসেন আজ দুপুর ১২টায় ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে এসে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেবেন এবং শহর কুতুব শাহ আমানত শাহের মাজারে জিয়ারত করবেন। পরে সিটি করপোরেশন লাইব্রেরিতে কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করবেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তার এই পদক্ষেপে চট্টগ্রামবাসী যে সহায়তা ও সমর্থন জ্ঞাপন করবে, তা নিশ্চিতভাবেই চট্টগ্রামের উন্নয়নে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেবে।
পলাতক মেয়র রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ: কোটি কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য ও অন্যান্য অপকর্ম চট্টগ্রামের পলাতক মেয়র রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি কোটি কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্যে জড়িত। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুতর এবং এটি নগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
রেজাউল করিমের মেয়রত্বের সময় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য কমপক্ষে ১০ শতাংশ কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রাস্তা, সেতু, ও ড্রেন নির্মাণের মতো মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অভিযোগ করা হচ্ছে যে, তিনি প্রকল্পের কাজগুলোতে যোগসাজশ করে ঠিকাদারদের থেকে কমিশন নিয়ে অসৎভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া, রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আরও কিছু গুরুতর অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। তার প্রশাসন সময়কালীন সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সাধারণ নাগরিকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে। তিনি নগরীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ করতে এবং বিভিন্ন অপরাধী চক্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করেছেন এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ তদন্ত করা প্রয়োজন যাতে প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হয় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
মেয়র রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। অনেকেই তার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন, যাতে নগরী পুনরায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু প্রশাসনের আওতায় ফিরে আসতে পারে। এভাবে কমিশন বাণিজ্য এবং অন্যান্য অপকর্মের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের খরচের টাকা খরচ করে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ক্ষতি করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে যে, প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
এটি অত্যন্ত জরুরি যে, রেজাউল করিমের মতো দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।
লেখকঃ চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান ও যুগ্ন সম্পাদক, দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily banner এবং গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক।