দেশবরেণ্য সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও গুণীজন নিজাম উদ্দিন আহমেদ আর নেই। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) কানাডার টরন্টোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে পরিবার, সহকর্মী এবং সাংবাদিকতা জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিজাম উদ্দিন আহমেদের ছোট ছেলে সাব্বির আহমেদ শুভ জানিয়েছেন, মরহুমের জানাজা ও দাফন কানাডার টরন্টোতে সম্পন্ন হবে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। তার কর্মজীবনের সূচনা ঘটে তৎকালীন ইংরেজি দৈনিক মনিং নিউজ পত্রিকায়। এরপর তিনি বাংলাদেশ অবজারভার-এ দুই দশকেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তিনি চিফ রিপোর্টারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। তার সততা, সাহসিকতা এবং নির্ভীক সাংবাদিকতার জন্য তিনি প্রশংসিত ছিলেন। পাকিস্তানের সময়েও তিনি ডেইলি পিপল পত্রিকায় কাজ করেন এবং সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার অসামান্য দক্ষতা, বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট এবং সমাজ পরিবর্তনে তার অবদান তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। চট্টগ্রামে সাংবাদিকতা বিকাশে নিজাম উদ্দিন আহমেদের অবদান অনস্বীকার্য। নব্বইয়ের দশকে তিনি চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নিউজ অ্যাজেন্সি (বিএনএ) প্রতিষ্ঠা করেন। লুসাই ভবনে প্রতিষ্ঠিত এই অফিস থেকে দেশ ও বিশ্বে সংবাদ পরিবেশন করা হতো। বিএনএ-এর মাধ্যমে তিনি চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ খবর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরেন। তিনি সাংবাদিকদের নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তার হাতে গড়া সাংবাদিকরা এখনো দেশজুড়ে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা জগতে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। নিজাম উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর কনসালট্যান্ট এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে তার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ কাভার করেছেন। নিজাম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, “নিজাম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন সাংবাদিকতার নীতি-আদর্শের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার মৃত্যু জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।” চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন রেজা ও সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক এক শোকবার্তায় বলেন, “নিজাম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি আমাদের জন্য একজন অভিভাবক ছিলেন।” প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “নিজাম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ সাংবাদিক, যিনি সাংবাদিকতার আদর্শকে সর্বোচ্চ স্থানে রেখে কাজ করেছেন। তার মৃত্যু আমাদের জন্য এক বিশাল শূন্যতা।”
চট্টগ্রামের সাংবাদিকরা তাকে স্মরণ করে বলেছেন, “তিনি আমাদের জন্য একজন পথপ্রদর্শক ছিলেন। তার সাহসিকতা ও নীতি আমাদের সবসময় অনুপ্রাণিত করবে। তার অবদান চট্টগ্রামের সাংবাদিকতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।” আমরা দৈনিক ভোরের আওয়াজ এবং দ্য ডেইলি ব্যানার-এর পক্ষ থেকে এই গুণী সাংবাদিকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার সততা, নীতি ও নিষ্ঠা আমাদের জন্য সবসময় আদর্শ হয়ে থাকবে। দেশবরেণ্য, মেধাবী ও চৌকস সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন ছিলেন সাংবাদিকতার এক জীবন্ত ইতিহাস। তার নির্ভীক কলম প্রতিধ্বনিত করেছে সত্যের শাণিত উচ্চারণ। সততা, নিষ্ঠা, এবং মানবিক চেতনাকে সমন্বিত করে তিনি জাতির বিবেক হয়ে উঠেছিলেন। তার মৃত্যুতে সাংবাদিকতা জগতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা পূরণ করা অসম্ভব। একজন সহযোদ্ধা, একজন অগ্রজ, একজন শিক্ষক হিসেবে তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য গভীর শোকের। তিনি ছিলেন সংগ্রামী সাংবাদিকতার প্রতীক, যিনি চিরকাল সত্য ও ন্যায়ের পথে আপসহীন থেকেছেন। তার প্রতিটি কাজ ছিল সৃষ্টিশীলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নিজাম উদ্দিন শুধু একজন সাংবাদিক নন; তিনি ছিলেন প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। আজ আমরা হারালাম একজন পথপ্রদর্শক, একজন নির্ভীক সৈনিক। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই। মহান সৃষ্টিকর্তা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। আমরা মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন মরহুম নিজাম উদ্দিন আহমেদকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের এই শোক সইবার শক্তি দেন। আমিন।