পাট-২
বাংলাদেশ শব্দের উৎপত্তি, ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের ঐতিহাসিকতা, এবং ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ নামের সাংবিধানিক বিতর্ক: ঐতিহ্য ও আধুনিকতার দ্বন্দ্ব
অস্থিরতা এবং সামরিক শাসনের পরিপ্রেক্ষিতে, কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হলেও, বর্তমানে এটি দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের সংবিধান জনগণের ক্ষমতা, মৌলিক অধিকার এবং গণতন্ত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করে, যা দেশটির রাজনৈতিক শাসনের মূল ভিত্তি।
“গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দের উৎপত্তি: বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” শব্দ গুচ্ছটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা ঘোষণার মূল আদর্শের ভিত্তিতে। এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ছিল, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
“গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দের প্রস্তাবনা: স্বাধীনতার ঘোষণা ও প্রস্তাবনা:
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়।
মূল প্রস্তাবক: বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের আলোকে তৎকালীন জাতীয় সংসদের সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা এই শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করেন।
সাংবিধানিক প্রেক্ষাপট: এটি জনগণের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, এবং গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
গণপ্রজাতন্ত্রী শব্দ কেন: “গণ” শব্দটি জনগণ বা জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব করে।
“প্রজাতন্ত্রী” অর্থ একটি প্রজাতন্ত্র, যেখানে রাষ্ট্রের প্রধান জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন।
এই শব্দগুচ্ছটি মূলত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিপরীতে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিফলন ঘটায়। বর্তমান বিতর্ক: কেন “গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে? বর্তমান সময়ে “গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এর মূল কারণ হলো এর ব্যবহারের সাথে জড়িয়ে থাকা কিছু ঐতিহাসিক ও ভাষাগত সংকট।
১. “প্রজা” শব্দের বিতর্ক: “গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দে ব্যবহৃত “প্রজা” শব্দটি ঐতিহাসিক ভাবে ঔপনিবেশিক ও সামন্তবাদী শাসনব্যবস্থার ধারণা বহন করে। অর্থগত সংকট: “প্রজা” শব্দটি শাসকের অধীনস্ত জনগণকে বোঝায়।
এটি বর্তমান গণতান্ত্রিক ও সমানাধিকার ভিত্তিক সমাজে বেমানান বলে মনে করা হচ্ছে।
২. আধুনিক গণতান্ত্রিক ধারণা:
অনেকে মনে করেন “গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি পুরোনো এবং এর পরিবর্তে “জনগণতন্ত্রী” শব্দটি ব্যবহার করলে এটি জনগণের ক্ষমতার আরও সঠিক প্রতিফলন ঘটাবে।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় “জনগণ” বা “জনগণতান্ত্রিক” শব্দগুচ্ছ ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩. রাজনীতি ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু:
কিছু রাজনৈতিক দল মনে করছে, “গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও প্রতিনিধিত্বের সংকট তৈরি হচ্ছে।প্রস্তাবিত পরিবর্তনটি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে আরও সুসংহত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমান সমস্যার মূল দিকসমূহ: ১. শব্দের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব:
“গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবিধানের মূল ভিত্তির অংশ।
এটি পরিবর্তন করলে দেশের ঐতিহাসিক স্মৃতির প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ হতে পারে।
২. ভাষাগত ও রাজনৈতিক বিভ্রান্তি:
“গণপ্রজাতন্ত্রী” থেকে “জনগণতন্ত্রী” শব্দে পরিবর্তন সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এটি শুধু শব্দগত পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তির পরিবর্তন হিসেবেও দেখা হতে পারে। ৩. আন্তর্জাতিক সঙ্গতি: “গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি বহু আন্তর্জাতিক সংবিধানে ব্যবহৃত হয়, উদাহরণ: গণপ্রজাতন্ত্রী চীন, গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া।
শব্দ পরিবর্তন করলে আন্তর্জাতিক স্তরে এটি কেমন প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
সম্ভাব্য সমাধান ও করণীয়:
১. জাতীয় সংলাপ আয়োজন:
এই পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা করা প্রয়োজন ভাষাবিদ, সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ জনগণের মতামত নেওয়া উচিত।
২. ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রক্ষা: শব্দ পরিবর্তনের আগে এর প্রভাব ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।
৩. ভাষাগত বিকল্প:
“গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি যদি সত্যিই সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে “জনগণতন্ত্রী” শব্দটির পাশাপাশি আরও আধুনিক বিকল্প শব্দও বিবেচনা করা যেতে পারে।
৪. আন্তর্জাতিক সঙ্গতির দিক বিবেচনা:
অন্য গণতান্ত্রিক দেশের উদাহরণ অনুসরণ করে একটি সর্বজনগ্রাহ্য সমাধান খুঁজে বের করা উচিত।
“গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং সংবিধানের মূল ভিত্তি। এটি পরিবর্তন করার প্রস্তাব অবশ্যই জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
যদি “গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি পরিবর্তন করতেই হয়, তবে তা যেন দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ঐতিহাসিক গুরুত্বকে সমুন্নত রেখে করা হয়। একইসঙ্গে, এটি যেন দেশের ভেতর নতুন কোনো বিভাজন বা বিরোধ সৃষ্টি না করে, সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক গণপ্রজাতন্ত্রী থেকে জনগণতন্ত্রী: বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ও সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে সংবিধান সংশোধনের আলোচনায় “গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি বাদ দিয়ে “জনগণতন্ত্রী” শব্দটি সংযোজন করার প্রস্তাব সামনে এসেছে। এ প্রস্তাব নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে যুক্তিসঙ্গত ও তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
“গণপ্রজাতন্ত্রী” ও “জনগণতন্ত্রী” শব্দের অর্থ গণপ্রজাতন্ত্রী:
অর্থ: “গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি বোঝায় জনগণের প্রজাতন্ত্র, যেখানে জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতীক।
মূল ধারণা: এখানে জনগণের শক্তি ও প্রতিনিধিত্বের ওপর ভিত্তি করে শাসনব্যবস্থা গঠিত হয়। বিশ্বব্যবহার: এই শব্দটি বেশ কয়েকটি দেশের সংবিধানে রয়েছে, যেমন:
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (People’s Republic of China)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ (People’s Republic of Bangladesh)
গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (Democratic People’s Republic of Korea)
গণপ্রজাতন্ত্রী আলজেরিয়া (People’s Democratic Republic of Algeria) জনগণতন্ত্রী:
অর্থ: “জনগণতন্ত্রী” শব্দটি বোঝায় জনগণের শাসন। এটি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যক্ষ ক্ষমতার ধারণা প্রকাশ করে।
বিশ্বব্যবহার: “জনগণতন্ত্রী” শব্দটি সরাসরি কোনো রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক নাম হিসেবে ব্যবহৃত না হলেও এর সমার্থক ধারণা দেখা যায় কিছু দেশে: জনগণের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (Democratic Republic of the Congo) গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্র (Democratic People’s Republic of Korea)
সাধারণ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (Democratic Socialist Republic of Sri Lanka)
শব্দ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা ও বিতর্ক “প্রজা” শব্দের বিতর্ক: “প্রজা” শব্দটি ঔপনিবেশিক বা সামন্তবাদী শাসনব্যবস্থার একটি নিদর্শন। এটি শাসক ও শাসিতের মধ্যে ক্ষমতার বৈষম্য বোঝায়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যেখানে জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস, সেখানে “প্রজা” শব্দের ব্যবহার অনেকের কাছে আপত্তিকর।
“গণপ্রজাতন্ত্রী” বনাম “জনগণতন্ত্রী”:
গণপ্রজাতন্ত্রী: এটি ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার অংশ এবং প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শের প্রতীক।
জনগণতন্ত্রী: আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে “জনগণতন্ত্রী” শব্দটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, কারণ এটি সরাসরি জনগণের ক্ষমতা ও অংশগ্রহণের কথা বলে। বিতর্ক সৃষ্টি:
পক্ষসমর্থন: শব্দ পরিবর্তনের পক্ষে যারা আছেন, তারা মনে করেন “গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দটি ঐতিহাসিক হলেও “প্রজা” শব্দটি বর্তমান সময়ে প্রাসঙ্গিক নয়।
বিরোধিতা: অন্যদিকে, বিরোধীদের দাবি, এটি শুধুমাত্র ভাষাগত পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শ ও ইতিহাসের ওপর আঘাত।বিশ্ব সংবিধানের উদাহরণ
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন: চীনের শাসনব্যবস্থায় “গণপ্রজাতন্ত্রী” শব্দ ব্যবহার করলেও এটি একদলীয় শাসন।
গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের উদাহরণ: আমেরিকা, ভারত, এবং ইউরোপের অনেক দেশ সরাসরি “গণতন্ত্র” বা “প্রজাতন্ত্র” শব্দ ব্যবহার করে। প্রস্তাবিত পরিবর্তনের সাযুজ্য: “জনগণতন্ত্রী” শব্দটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সঠিক দিকনির্দেশনা
এখানে কোনো শব্দ পরিবর্তন বা সংযোজন করার আগে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত:
১.ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় ঘোষিত আদর্শ ও সংবিধানের ভিত্তি।
২. আন্তর্জাতিক রীতি: আন্তর্জাতিক স্তরে কোন শব্দ বেশি গ্রহণযোগ্য বা আধুনিক। ৩. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ: শব্দটি কি জনগণের অধিকার, ক্ষমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থার প্রতিফলন ঘটায়?
“গণপ্রজাতন্ত্রী” থেকে “জনগণতন্ত্রী” শব্দ পরিবর্তনের প্রস্তাব একটি সংবেদনশীল বিষয়। এটি কেবল ভাষাগত পরিবর্তনের নয়, বরং বাংলাদেশের আদর্শ, ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সম্পর্কিত। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি জাতীয় আলোচনার প্রয়োজন, যেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী, ভাষাবিদ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এবং সাধারণ মানুষের মতামত বিবেচনায় নেওয়া হবে। “জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ” শব্দটি যদি জনগণের প্রত্যক্ষ ক্ষমতার প্রতীক হয় এবং এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আরও দৃঢ় হয়, তবে এটি একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ হতে পারে। তবে এই পরিবর্তন যেন রাষ্ট্রের ঐতিহাসিক ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“জয় বাংলা” শ্লোগানটি কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর রচিত “চল শত্রু দূর করি” নামক কবিতার মধ্যে প্রথম ব্যবহৃত হয়। এটি ১৯২৩ সালে রচিত একটি শক্তিশালী জাতীয়istic কবিতা, যেখানে নজরুল বাংলার স্বাধীনতা এবং স্বাধিকার সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন।
কবিতাটি এবং “জয় বাংলা” শ্লোগানের আবির্ভাব: ১৯২৩ সালে, নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় “জয় বাংলা” শ্লোগানটি ব্যবহার করেন। এই শ্লোগানটি মূলত বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ও জাতিগত স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে উঠে আসে। নজরুলের কবিতার মধ্যে এই শ্লোগানটি এক নতুন শক্তির অনুপ্রেরণা হিসেবে ভূমিকা পালন করে, যা বাংলার জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম এবং সংগ্রামী মনোভাব জাগিয়ে তোলে।
কবিতার মূল বক্তব্য: “চল শত্রু দূর করি” কবিতায় নজরুল বাংলার দমন-পীড়িত মানুষের জন্য স্বাধীনতার ডাক দেন। তিনি কলম ও অস্ত্রের মাধ্যমে শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রামের আহ্বান জানান। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রজন্মকে শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। কবিতায় তিনি “জয় বাংলা” শ্লোগান ব্যবহার করে সবার মধ্যে বিজয়ের আশা জাগান।
কেন “জয় বাংলা” শ্লোগানটি লিখেছিলেন:
বাংলার স্বাধীনতার সংগ্রাম: নজরুল ইসলাম তখন ইংরেজি শাসন এবং বাঙালি জনগণের উপর চলা শোষণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। “জয় বাংলা” শ্লোগানটি বাংলার মানুষের আত্মমর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠে এবং এটির মাধ্যমে তিনি বাংলার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানান। জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক: শ্লোগানটি বাঙালি জাতির জাতীয় মুক্তির সংগ্রামের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। কবি তাঁর কবিতার মাধ্যমে বাংলার জনগণকে উত্সাহিত এবং অনুপ্রাণিত করার জন্য এই শ্লোগানটি ব্যবহার করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন: শ্লোগানটি তখনকার সময়ে জাতীয়তার ধারণা এবং শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বাঙালির সংগ্রামের স্পিরিট তৈরি করতে সহায়ক ছিল। “জয় বাংলা” শ্লোগান এবং বিতর্ক: বর্তমানে “জয় বাংলা” শ্লোগানটি একাধিক রাজনৈতিক পটভূমিতে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে কিছু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত এই শ্লোগানটি স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত করেছে। তবে, নজরুল ইসলামের দৃষ্টিতে “জয় বাংলা” ছিল একটি জাতীয় ঐক্যের শ্লোগান, যা মূলত জনগণের মুক্তির সংগ্রামের সাথেই সম্পর্কিত ছিল।
এটা উল্লেখযোগ্য যে, “জয় বাংলা” শ্লোগানটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে এটি একটি শক্তিশালী সংগ্রামী প্রতীকে পরিণত হয়। কবি নজরুল ইসলাম ১৯২৩ সালে “চল শত্রু দূর করি” কবিতার মাধ্যমে “জয় বাংলা” শ্লোগানটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন, যা বাংলার স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং জাতীয় স্বাধিকার অর্জনের চেতনা বহন করেছিল।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (Proclamation of Independence) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়। এটি জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মৌলিক দলিল।
এটি বাংলাদেশের প্রথম সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়, যা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়।
বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এটি গ্রহণ করে এবং এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে “বাংলাদেশ,” “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ,” এবং “জয় বাংলা” শব্দগুচ্ছের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ:
১. বাংলাদেশ:
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে “বাংলাদেশ” শব্দটি ব্যবহার করে জাতিরাষ্ট্রের নাম হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়। এটি পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিচয় দেয়। ২. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ:
ঘোষণাপত্রে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” শব্দটি উল্লেখ করা হয় রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামো (Republican State) বোঝাতে। এটি গণতান্ত্রিক ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের পরিচয়কে তুলে ধরে।
৩. জয় বাংলা:
যদিও “জয় বাংলা” সে সময়ের মূল স্লোগান ছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল, তবে ঘোষণাপত্রে সরাসরি এই স্লোগানটি উল্লেখিত হয়নি।
এই দলিলটি মূলত একটি আইনগত ও সাংবিধানিক নথি, যা স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা ও কাঠামোকে সংজ্ঞায়িত করে।
লেখকঃ যুগ্ম সম্পাদক-দৈনিক ভোরের আওয়াজ ওThe Daily banner, গবেষক, এবং টেলিভিশন উপস্থাপক।