1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ০৬:২৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
বিশ্ব সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা দিবস ও সংবাদ পত্র নিয়ে কিছু কথা! বাকলিয়া থানার আলোচিত ডাবল মার্ডারের প্রধান আসামি হাসান গ্রেফতার চট্টগ্রামে এনসিপির বিক্ষোভে উত্তাল জনসভার দাবি: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন! আইজিপি ব্যাজে ভূষিত পাহাড়তলী থানার ওসি বাবুল আজাদ: নিষ্ঠা, নেতৃত্ব ও মানবিক পুলিশের উজ্জ্বল প্রতীক! চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিনকে আইজিপি ব্যাজ: নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও জনগণের আস্থার প্রতীক! কোতোয়ালি থানায় সাজাপ্রাপ্ত দুই পলাতক আসামী গ্রেফতার শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর তিনদিনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ইজতেমা বালুকাবেলার আত্মঘোষণা: যেখানে সাংবাদিকতা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের কবিতা চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের ঐক্য উৎসব পারকি সৈকতে গড়লো অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যার বিচার দাবিতে আনোয়ারায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ!

হলিউড হিলস: আগুনের ভয়াবহতা ও মানবিক বিপর্যয়ের হৃদয়বিদারক চিত্র এক স্বপ্নরাজ্যের করুণ পরিণতি

মো.কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৬৬ বার পড়া হয়েছে

হলিউড হিলস—একসময় যেখানে জ্বলজ্বল করত তারকাদের জীবন, যেখানে গড়ে উঠেছিল বিনোদন জগতের ইতিহাস, সেখানে আজ শুধুই ছাই আর পোড়া ধ্বংসাবশেষ। এই অঞ্চল কেবলমাত্র লস অ্যাঞ্জেলসের সবচেয়ে বিলাসবহুল আবাসিক এলাকা নয়, এটি ছিল বিনোদন জগতের প্রাণকেন্দ্র, যেখানে চলচ্চিত্র নির্মাতা, নায়ক-নায়িকা, সংগীতশিল্পী ও নামকরা শিল্পী-কুশলীরা তাদের স্বপ্নের প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলেন।
কিন্তু প্রকৃতির এক ভয়াল তাণ্ডবে সেই স্বপ্নরাজ্য মুহূর্তের মধ্যে পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দাবানল এই অঞ্চলকে গ্রাস করেছে। এক রাতের মধ্যে হাজার হাজার মানুষের জীবন বদলে গেছে। যারা একসময় লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের ঝলকানিতে থাকতেন, তারা এখন খোলা আকাশের নিচে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে দেখছেন তাদের স্বপ্নগুলো ধ্বংস হতে।
আগুনের সূচনা: এক মুহূর্তের অসতর্কতা থেকে বিপর্যয়, দাবানলের প্রকৃত কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে অনুমান করা হচ্ছে শুষ্ক আবহাওয়া, প্রচণ্ড বাতাস এবং বৈদ্যুতিক লাইনের ত্রুটির কারণেই এই আগুনের সূত্রপাত। প্রাথমিকভাবে একটি ছোট আগুন দেখা গেলেও, দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার, যা মুহূর্তেই আগুনকে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। আগুন যখন প্রথম ছড়িয়ে পড়ে, তখন অনেকেই বুঝতে পারেননি বিপদ কতটা ভয়াবহ হতে পারে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গোটা হলিউড হিলস অগ্নিস্নানে পরিণত হয়। বহুতল বাড়িগুলোর কাঁচের জানালা তাপে গলে পড়েছে, সড়কে থাকা গাড়িগুলো আগুনের তীব্রতায় বিস্ফোরিত হয়েছে। অনেক বাসিন্দা প্রাণ বাঁচাতে পালানোর চেষ্টা করলেও ধোঁয়া ও আগুনের ফাঁদে আটকে পড়েছেন। তারকাদের স্বপ্নভঙ্গ: ধ্বংসের সামনে দাঁড়িয়ে অসহায় মানুষ
হলিউড হিলসের ধনাঢ্য ও নামকরা ব্যক্তিদের অনেকেই আগুনের ছোবলে সব হারিয়েছেন। সংগীতশিল্পী, চলচ্চিত্র তারকা, পরিচালক, লেখক—সবার জীবনেই এই বিপর্যয় গভীর প্রভাব ফেলেছে। ম্যান্ডি মুর, ক্যারি এলভিস, প্যারিস হিলটনসহ অসংখ্য তারকার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। বিলি ক্রিস্টাল ও তার স্ত্রী জ্যানিস তাদের ৪৫ বছরের পুরনো বাড়িটি আগুনের গ্রাসে বিলীন হতে দেখেছেন। তাদের সেই বাড়িটি ছিল শুধু বসবাসের জায়গা নয়, ছিল তাদের জীবনের সুখস্মৃতির অংশ। একজন প্রবীণ চলচ্চিত্র নির্মাতা বলছিলেন, “আমি যখন বাড়ির দিকে তাকালাম, তখন শুধু আগুন দেখতে পেলাম। আমার সংগ্রহে থাকা পুরোনো চলচ্চিত্রের রিল, অস্কার নমিনেশন পাওয়া স্ক্রিপ্ট—সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এটা শুধুমাত্র একটি বাড়ি হারানোর ব্যাপার নয়, আমার পুরো জীবনটাই যেন শেষ হয়ে গেল।” অনেকে সময়মতো পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও, তাদের জীবনের অর্জন, সংগ্রামের চিহ্নগুলো আর বেঁচে নেই। শুধু পোড়া কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ থেকে উড়তে থাকা ধোঁয়া তাদের স্মৃতির সাক্ষী হয়ে রয়ে গেছে।
মানবিক বিপর্যয়: এক মুহূর্তে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন এই আগুনের ভয়াবহতায় শুধু তারকারাই ক্ষতিগ্রস্ত হননি, হাজার হাজার সাধারণ মানুষও তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। বহু মানুষ এক মুহূর্তে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। রাতারাতি পরিবারগুলো শরণার্থী হয়ে গেছে, যাদের মাথার ওপর আর কোনো ছাদ নেই। এই আগুন কেবল সম্পত্তির ক্ষতি করেনি, কেড়ে নিয়েছে বহু প্রাণও। অনেক মানুষ সময়মতো পালিয়ে যেতে পারেননি, অনেক বৃদ্ধ ও শিশু ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। একজন মধ্যবয়সী নারী বলছিলেন, “আমি যখন দরজা খুললাম, তখন শুধু লাল আগুন দেখলাম। আমি আমার বাচ্চাদের নিয়ে বের হওয়ার আগেই ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমার স্বামী আমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা একে অপরের হাত ধরেই আগুন থেকে পালালাম। কিন্তু আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।” ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানাচ্ছেন, অনেকেই নিজেদের বাড়ি বাঁচানোর জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা পালানোরও সুযোগ পাননি।পরিবেশের মারাত্মক প্রভাব: আগুনের পরে যা রয়ে গেল এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড শুধু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি করেনি, প্রকৃতিতেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে। হাজার হাজার একর বনাঞ্চল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, বহু বন্যপ্রাণী প্রাণ হারিয়েছে। এই দাবানলের ফলে বাতাসে বিপজ্জনক পরিমাণে বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে, যা পুরো ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবেশকে দূষিত করে তুলেছে।
অগ্নিকাণ্ডের পরে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, আশপাশের পানির উৎস দূষিত হয়ে পড়েছে। ভূমিধসের আশঙ্কাও বেড়ে গেছে, কারণ আগুনের ফলে মাটির শক্ত বন্ধন নষ্ট হয়ে গেছে।
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া: মানবিক উদ্যোগ ও উদ্ধারকাজ, এই বিপর্যয়ের পর বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও দাতব্য সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সরকার দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করলেও, পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ ছিল না। দাবানলের পর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন তারকা ও ধনী ব্যক্তি আর্থিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, কিন্তু হারিয়ে যাওয়া জীবন, স্মৃতি ও স্বপ্ন ফিরিয়ে আনা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এক হৃদয়বিদারক শিক্ষা
হলিউড হিলসের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আমাদের এক কঠিন শিক্ষা দিয়ে গেল—প্রকৃতির সামনে মানুষ কতটা অসহায়। আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত অবকাঠামো থাকার পরও আমরা এই ধরনের বিপর্যয় ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছি। এই ঘটনা শুধু হলিউডের নয়, এটি মানবজাতির জন্য এক কঠোর সতর্কবার্তা। আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণে আরও সচেতন হতে হবে, দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও প্রস্তুতি নিতে হবে। যারা এই দাবানলে সব হারিয়েছেন, তারা আর কখনো আগের জীবনে ফিরে যেতে পারবেন না। কিন্তু এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মাঝেও মানবতার জয় দেখা গেছে—মানুষ মানুষকে সাহায্য করছে, একে অপরের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এই একতাই হয়তো তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেবে। হলিউড হিলসের ধ্বংসস্তূপে ছাই হয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো হয়তো আর ফিরবে না, কিন্তু মানুষ নতুন করে শুরু করবে, নতুন করে গড়বে তাদের জীবন। এই ধ্বংসস্তূপ একদিন নতুন জীবনের গল্প বলবে, এক নতুন ইতিহাস রচিত হবে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল একটি সাধারণ ঘটনা হলেও, কিছু কিছু দাবানল ভয়াবহতা এবং ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিচে ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলগুলোর তথ্য উপস্থাপন করা হলো:
১. আগস্ট কমপ্লেক্স ফায়ার (২০২০):
ক্ষয়ক্ষতি: এই দাবানলটি ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ছিল, যা ১০ লাখ ৩২ হাজার ৬০০ একর এলাকা পুড়িয়ে দেয়। মৃত্যু: এই দাবানলে ১ জনের মৃত্যু হয়। অর্থনৈতিক ক্ষতি: সঠিক পরিমাণ জানা না গেলেও, এই দাবানলটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে।
২. ক্যাম্প ফায়ার (২০১৮):
ক্ষয়ক্ষতি: প্রায় ১৮,৮০৪টি স্থাপনা ধ্বংস হয় এবং ১৫৩,৩৩৬ একর এলাকা পুড়ে যায়। মৃত্যু: ৮৫ জনের মৃত্যু হয়, যা ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।
অর্থনৈতিক ক্ষতি: প্রায় ১৬.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৩. টাবস ফায়ার (২০১৭):
ক্ষয়ক্ষতি: ৫,৬৪৩টি স্থাপনা ধ্বংস হয় এবং ৩৬,৮০৭ একর এলাকা পুড়ে যায়।
মৃত্যু: ২২ জনের মৃত্যু হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষতি: প্রায় ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৪. ওলসি ফায়ার (২০১৮):
ক্ষয়ক্ষতি: ১,৬৪৩টি স্থাপনা ধ্বংস হয় এবং ৯৬,৯৪৯ একর এলাকা পুড়ে যায়।
মৃত্যু: ৩ জনের মৃত্যু হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষতি: প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৫. থমাস ফায়ার (২০১৭):
ক্ষয়ক্ষতি: ১,০৬৩টি স্থাপনা ধ্বংস হয় এবং ২,৮১,৮৯৩ একর এলাকা পুড়ে যায়।
মৃত্যু: ২ জনের মৃত্যু হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষতি: প্রায় ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উপরোক্ত তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল প্রায়শই ঘটে এবং সেগুলো উল্লেখযোগ্য মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে। বিশেষ করে, ২০২০ সালের আগস্ট কমপ্লেক্স ফায়ার ছিল সবচেয়ে বড়, যা ১০ লাখ ৩২ হাজার ৬০০ একর এলাকা পুড়িয়ে দেয়।
এছাড়া, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় সংঘটিত দাবানলে প্রায় ১০ হাজার বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০-এ পৌঁছেছে। এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি রোধে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
লেখকঃ যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান-
দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily Banner,

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট