সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যেভাবে আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। সাধারণত পুলিশের কাজ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা। কিন্তু যদি তারাই বারবার হামলার শিকার হয়, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভার কে নেবে?
চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার পুলিশের ওপর হামলা এবং মোহরা পুলিশ ফাঁড়ির দুই পুলিশ সদস্যের আহত হওয়ার ঘটনাগুলো এ সমস্যার ভয়াবহ দিক তুলে ধরছে। এই প্রবণতা শুধু পুলিশের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, শেষ পর্যন্ত জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশই ভরসার জায়গা।
পুলিশের ওপর একের পর এক হামলা: কী ঘটছে? বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা নতুন নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার পুলিশের ওপর হামলা এবং মোহরা পুলিশ ফাঁড়ির দুই পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।
চান্দগাঁও থানার পুলিশের ওপর হামলা
চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার একদল পুলিশ যখন একটি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাচ্ছিল, তখন হঠাৎ করেই সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা তাদের ওপর আক্রমণ করে। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিরোধের চেষ্টা করা হলেও, হামলাকারীরা সংঘবদ্ধ থাকায় তারা মারাত্মকভাবে আহত হন। এ ধরনের হামলা পুলিশের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি অপরাধীদের মনোবল আরও উঁচু করে তুলতে পারে।
মোহরা পুলিশ ফাঁড়ির দুই পুলিশ সদস্য আহত অন্যদিকে, চট্টগ্রামের মোহরা পুলিশ ফাঁড়ির দুই পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালনের সময় একদল দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন। স্থানীয় সূত্র বলছে, অভিযুক্তরা পুলিশের উপস্থিতি মেনে নিতে পারেনি এবং তাদের প্রতিহত করতেই এই হামলা চালানো হয়। এই ঘটনায় পুলিশের মনোবল দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি জনসাধারণের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই হামলার কারণ কী? পুলিশের ওপর হামলার কারণ বিশ্লেষণ করলে কিছু সাধারণ বিষয় উঠে আসে— আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের কঠোর অবস্থান – অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে অনেকেই পুলিশের শত্রুতে পরিণত হয়।
অপরাধীদের দুঃসাহস বৃদ্ধি – আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং পুলিশের ওপর সরাসরি হামলা চালাতেও দ্বিধা করে না। সাধারণ মানুষের মধ্যে পুলিশের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব – কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ বা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, যা জনমনে ক্ষোভের জন্ম দেয়।
রাজনৈতিক প্রভাব ও অস্থিতিশীলতা – অনেক সময় রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য পুলিশের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়, যা প্রশাসনকে দুর্বল করার কৌশল হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা – পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অপরাধীরা বার্তা পায় যে পুলিশকে আক্রমণ করলে ছাড় নেই।
জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো – পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়াতে হবে, যাতে তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে।
প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি – সিসিটিভি, বডি ক্যামেরা ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে হবে।
সম্প্রদায়ভিত্তিক পুলিশিং – জনগণ ও পুলিশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে, যাতে তারা একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে।
দুর্নীতি দমন – পুলিশের অভ্যন্তরে যেকোনো ধরনের দুর্নীতি কঠোরভাবে দমন করতে হবে, যাতে জনগণের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি পায়।
পুলিশের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা সমাজের জন্য একটি বিপদসংকেত। যারা আজ পুলিশকে আক্রমণ করছে, তারা আগামী দিনে আরও বড় অপরাধ ঘটানোর সাহস পেতে পারে। তাই এখনই এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
দিনশেষে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমাদের পুলিশের প্রয়োজন হবেই। তাই পুলিশকে আরও দক্ষ, সুরক্ষিত ও জনবান্ধব করে গড়ে তোলা জরুরি। অপরাধীরা যদি বুঝতে পারে যে পুলিশের ওপর হামলা করে পার পাওয়া যাবে না, তবে তারা এমন ঘটনা ঘটাতে দ্বিতীয়বার ভাববে। রাষ্ট্রের উচিত এই বিষয়ে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা এবং পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে তারা দায়িত্ব পালনে আরও সাহসী হতে পারে।