মানুষের সাফল্য, বিশেষত যখন তা সমাজ বা দেশের জন্য ইতিবাচক অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ আসে, তখন তা অনেকের প্রশংসা কুড়ায়, আবার কিছু মানুষের ঈর্ষার কারণও হয়ে দাঁড়ায়। আমার দীর্ঘ পথচলায় এই বিষয়টি বহুবার প্রত্যক্ষ করেছি, কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে গ্রীণলীফ ম্যাগাজিন আয়োজিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি আমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে—সম্মান যারা দিতে জানে, তারা নিজেরাও সম্মানিত হয়, আর যারা হিংসা করে, তারা নিজের ক্ষতি ছাড়া কিছুই করতে পারে না।
গ্রীণলীফের মহৎ উদ্যোগ বিগত কয়েক বছর ধরে গ্রীণলীফ ম্যাগাজিন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মাননা প্রদান করে আসছে। এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার তসলিম হাসান হৃদয়, যিনি শুধু পেশাগত জীবনে একজন দক্ষ নাবিকই নন, বরং সমাজসেবায়ও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পথশিশুদের কল্যাণে তার নিবেদিতপ্রাণ সংগঠন সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে নিরলস কাজ করছে। তার এই মানবিক উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
২০২৪ সালের গ্রীণলীফ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। এতে দেশের বিভিন্ন খাতের গুণীজনদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার মীর হেলাল, এবং আরও অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তি। তবে এই অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতাদের তুলনায় দেশের বিশিষ্ট শিল্পী, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারকরাই বেশি উপস্থিত ছিলেন, যা এর বিশেষ মর্যাদাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের স্বীকৃতি
আমি এই অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলাম। এই সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের উন্নয়ন আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের অবদানকে সম্মান জানিয়ে গ্রীণলীফের বিচারকমণ্ডলী চট্টগ্রামের জনমুখী শ্রেষ্ঠ সংগঠন হিসেবে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামকে মনোনীত করে। সেই সুবাদে আমি সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ সংগঠকের সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করি। এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে গর্বের, কারণ এটি শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিগত স্বীকৃতি নয়, বরং চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্মান। আমি এটাকে আমার একার অর্জন হিসেবে দেখিনি, বরং এটিকে চট্টগ্রামের সকল নাগরিকের সম্মান বলে মনে করি।
সমালোচকদের হীন মানসিকতা
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু নামসর্বস্ব তথাকথিত সাংবাদিক এবং ব্যর্থ ব্যক্তি, যাদের জীবনে গৌরবময় কোনো অর্জন নেই, তারা অহেতুক এই সম্মাননা নিয়ে বিদ্রুপ ও সমালোচনা করতে উদ্যত হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম খাগড়াছড়ির তথাকথিত রিফুজি, যে চট্টগ্রামে এসে সাংবাদিকতার নামে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দালালি, পতিতাবৃত্তির ব্যবসার দালালির অভিযোগও রয়েছে। এই ধরনের লোকদের একমাত্র কাজ হলো অন্যের সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত হওয়া এবং বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করা। আমি এ ধরনের মানুষকে কখনোই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না, কারণ তাদের মতো লোকেরা আমার অবস্থান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে না, বরং তারা সারাজীবনই হতাশা আর হীনমন্যতায় ডুবে থাকবে। আমার পথচলা ও অর্জন
আমি গত তিন দশক ধরে সাংবাদিকতা করছি, রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, লেখালেখিতে ৩৫ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত করেছি। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমার পদচারণা রয়েছে—২৮টি দেশে সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে অংশগ্রহণ করেছি, আমার ৩০টি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং আরও ১০টি বই প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। আমি টেলিভিশনে হাজারেরও বেশি টকশো ও বিশেষ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি, বহুবার শ্রেষ্ঠ বক্তা ও সংগঠক হিসেবে মনোনীত হয়েছি, আন্তর্জাতিক লেখক সংগঠন পেন ইন্টারন্যাশনাল-এর সদস্য, এবং অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছি। আমি পৃথিবীর সাতজন নোবেলজয়ীর সাক্ষাৎকার নিয়েছি, বহু রাষ্ট্রনায়ক ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, এমনকি ২০০৪ সালে কাতারের শেরাটন হোটেলে সৌদি রাজকন্যার সাক্ষাৎকারও নিয়েছি।
এই বিশাল অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার থাকার পরেও কিছু ছদ্মবেশী সাংবাদিক যখন আমার একটি সম্মাননা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন আমি বিস্মিত হই না, বরং বুঝতে পারি—এটাই ব্যর্থ মানুষের স্বভাব। তারা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে অন্যের সাফল্যকে ছোট করার চেষ্টা করে।
সম্মান সম্মানিতের কাছেই থাকে
আমি এটুকু নিশ্চিত যে যারা আমাকে এই সম্মাননা দিয়েছে, তারা নিজেরাই সম্মানিত হয়েছে, কারণ তারা সমাজের জন্য ভালো কিছু করছে। আর যারা হিংসায় কাতর হয়ে এই সম্মাননা নিয়ে সমালোচনা করছে, তারা নিজেরাই সমাজের চোখে সম্মানহীন।
আমার এ নিয়ে কোনো ক্ষোভ নেই, বরং আমি মনে করি, এসব তথাকথিত সাংবাদিকদের মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন। তাদের দেখে আমার করুণা হয়, রাগ নয়।তবে একটা কথা বলার প্রয়োজন মনে করি—আমি আগামীতে এই তথাকথিত রিফুজিদের নিয়ে রম্যরচনা লিখব, ইনশাআল্লাহ। কারণ সমাজের এই কুকুরতুল্য মানুষ
গুলোর চরিত্র জনগণের সামনে উন্মোচন করা দরকার।
আমার সংগ্রাম চলবে, আমার লেখনী চলবে, এবং আমি আমার সম্মান প্রাপ্য বলেই তা পাচ্ছি। কারও হিংসায় আমার অবস্থান এতটুকুও টলে যাবে না। তেমনি ১৯৮৮ সাল থেকে আমি বৃহত্তর চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি, ছাত্র সংগ্রাম কমিটি, বাংলাদেশ বেকার পূর্ণবাসন সংগ্রাম কমিটির মতো চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের আন্দোলন আমি আরও জোরদার করব। এই আন্দোলন যেমন চলবে, তেমনি আমার কলমও থামবে না। আমি বিশ্বাস করি, সত্য ও ন্যায়ের পথে যারা কাজ করে, তারা চিরকালই কিছু হীনমন্য ঈর্ষাকাতর মানুষের বিদ্বেষের শিকার হয়। কিন্তু এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ সংগ্রামই আমার পরিচয়, এবং কলমই আমার শক্তি। ইনশাআল্লাহ, আমি আমার সংগ্রাম ও লেখনি অব্যাহত রাখব, যতদিন বেঁচে থাকব।
লেখকঃ যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান-
দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও The Daily Banner-
মহাসচিব- চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।