1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
“বাঁশখালীতে ৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের মাদক কারবারি আটক: ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ” হোমনায় মহান মে দিবস উপলক্ষে  বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর শুভ আগমনে বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে হাজী মোহাম্মদ আলম ববির শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ৮ জনকে বেঁধে ছয়টি দোকান ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা রোদেলা দুপুরে পারকি সৈকতের বালুকাবেলায় কলম যোদ্ধারা,স্মৃতিময় এক মে দিবস! ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দক্ষিণ চট্টগ্রাম সফর সিএমপি কমিশনার ও পাঁচ ওসি পেলেন আইজিপি ব্যাজ সাহস, দক্ষতা ও মানবিক পুলিশিংয়ের স্বীকৃতি আইজি পি ব্যাজ পেলেন ওসি আফতাব উদ্দিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের সূচনালগ্নের সাহসী পুরুষ ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন! দৃষ্টি আকর্ষণ

বিপ্লব বড়ুয়ার ক্ষমতার উত্থান: আওয়ামী লীগের দপ্তর থেকে দুর্নীতির সাম্রাজ্য

মো. আসাদুজ্জামান
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেকেই আকস্মিক উত্থান ঘটিয়েছেন, কিন্তু বিপ্লব বড়ুয়ার উত্থান যেন এক রূপকথার গল্প! কখনো রাজনীতির মাঠে না থেকেও তিনি আজ আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কীভাবে সম্ভব হলো এই যাত্রা? কীভাবে দলীয় পদ বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হলেন? আর কেনই বা তিনি এখন আমেরিকায় পরিবারসহ বিলাসী জীবনযাপন করছেন? বিস্তারিত জানতে পড়ুন এই বিশেষ প্রতিবেদন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আকস্মিক উত্থানের গল্প নতুন কিছু নয়। কিন্তু কিছু উত্থান এতটাই নাটকীয় যে, তা বাংলা সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানায়। তেমনই এক বিতর্কিত উত্থানের নাম বিপ্লব বড়ুয়া। ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের কোনো স্তরে সরাসরি রাজনীতি না করেও আজ তিনি দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি। কীভাবে সম্ভব হলো এই যাত্রা? কীভাবে একজন সামরিক কর্মকর্তার হাত ধরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে জায়গা করে নিলেন বিপ্লব বড়ুয়া?
নেতৃত্বের দরজা খুলে দিলেন মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদীন শেখ হাসিনার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নুল আবেদীনের হাত ধরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে প্রবেশ করেন বিপ্লব বড়ুয়া। জয়নুল আবেদীন ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে শেখ হাসিনার সখ্যতা তৈরির মূল কারিগর এবং ‘কওমি জননী’ উপাধি অর্জনে সহায়তাকারী। নিজের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নের জন্যই তিনি বিপ্লব বড়ুয়াকে সামনে নিয়ে আসেন।
বিপ্লব বড়ুয়া মূলত একজন আইনজীবী। শেখ হাসিনার আইনজীবীদের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা থাকায় সেটাকেই কাজে লাগিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন। সদস্যপদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী—একটি নির্দিষ্ট ছকে সাজানো তার উত্থান। অথচ, কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের তৃণমূল রাজনীতিতে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
রাজনীতিতে প্রবেশের আড়ালে ব্যক্তিগত সুবিধা বিপ্লব বড়ুয়ার উত্থান এতটাই আকস্মিক ছিল যে, বিতর্ক এড়াতে তিনি নিজেকে উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য দাবি করেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে, তিনি ছাত্রলীগের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে ছিলেন না। বরং তিনি তার শিক্ষকের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনে চাকরি পান। ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত সরকার ক্ষমতায় আসার পর চাকরি হারিয়ে লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়তে যান। তবে তার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ১/১১ পরবর্তী সময়। যখন আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে প্রবাসী নেতাকর্মীরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চালাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাতে স্বাক্ষর করতেও অস্বীকৃতি জানান। তার বক্তব্য ছিল, “আমি তো আওয়ামী লীগ করি না, তাহলে স্বাক্ষর দেব কেন?” সেই বিপ্লব বড়ুয়া পরবর্তীতে কীভাবে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হলেন, সেটাই আজকের বড় প্রশ্ন।
কমিটি ও মনোনয়ন বাণিজ্য: দুর্নীতির এক সম্রাজ্য
বিপ্লব বড়ুয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, তিনি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো বিক্রি করেছেন। ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, এমনকি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন। তার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ছিল, যারা বিভিন্ন জেলায় প্রতিনিধি নিয়োগ করে এসব লেনদেন পরিচালনা করত। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ বিক্রি করেই তিনি শত শত কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিএনপি-জামাতের অনেক নেতাকেও টাকা নিয়ে দলে পদ পাইয়ে দিয়েছেন। এমনকি নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের কাছ থেকে গুরুদক্ষিণা না নিয়ে কাউকে ছাড় দেননি। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা যখন অর্থের অভাবে মনোনয়ন কিনতে পারছিলেন না, তখন বিপ্লব বড়ুয়া সিন্ডিকেটের কাছে টাকার বিনিময়ে নীতিনির্ধারণের ক্ষমতা চলে যায়। ক্ষমতার অপব্যবহার ও লুটপাটের জাল দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর ক্ষমতা ব্যবহার করে বিপ্লব বড়ুয়া নিজের অনুসারীদের জন্য প্রশাসনিক সুবিধা নিশ্চিত করতেন। তার অধীনে থাকা ব্যক্তিরা নির্বিচারে দুর্নীতি, ঘুষ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালালেও তাদের রক্ষা করা হতো।
তার একজন ঘনিষ্ঠ সহকারী ছিলেন আরিফ, যিনি একসময় টেম্পো চালাতেন। সেই আরিফ আজ দুবাইতে স্বর্ণের ব্যবসা করছেন এবং দেশে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে অট্টালিকা নির্মাণ করেছেন। তার আরও এক সহযোগী সন্তোষ মল্লিক, যার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। বিপ্লব বড়ুয়া তার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন।
পরিবারসহ বিলাসী জীবন, আওয়ামী কর্মীরা বঞ্চিত
বর্তমানে বিপ্লব বড়ুয়া আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তার সন্তান সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্কুলে পড়াশোনা করেছে। প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকের বেতন কত? প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর বেতনই বা কত? এই দুই পদের মাধ্যমে কি এত সম্পদ অর্জন করা সম্ভব? বিপ্লব বড়ুয়ার সম্পদ শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ নয়। তার নামে বিদেশেও সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠেছে। অথচ, আওয়ামী লীগের প্রকৃত কর্মীরা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছেন, হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন, জীবন দিচ্ছেন। কিন্তু বিপ্লব বড়ুয়ার মতো সুবিধাভোগীরা দলকে ব্যবহার করে নিজেদের ভাগ্য গড়ে তুলেছেন। দল বিক্রি করে বিপ্লব বড়ুয়ার বিলাসী জীবন
বিপ্লব বড়ুয়ার সিন্ডিকেট শুধু দলীয় কমিটি বিক্রিই করেনি, বরং মনোনয়ন বাণিজ্যের নামে পুরো দলকে নিলামে তুলেছে। আপাতদৃষ্টিতে দলের হাইকমান্ড থেকে যে ১০ জনের নাম সুপারিশ করা হতো, সেখানে সিন্ডিকেট আরও পাঁচজন যোগ করত এবং বড় রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে গোপন চুক্তি করে নির্বাচনের ফল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখত।
দলের ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে যখন অর্থের কাছে পদ বিক্রি হয়, তখন দল দুর্বল হয়ে পড়ে। বিপ্লব বড়ুয়ারা দলকে গণধর্ষণ করেছে, অথচ কোনো জবাবদিহিতা নেই। এই সুবিধাভোগীদের কাছে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা কী জবাব পাবেন? আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মীর রক্তের বিনিময়ে। কিন্তু আজ সেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে সুবিধাভোগী, দুর্নীতিবাজ, সিন্ডিকেটের লোকজন জায়গা করে নিয়েছে। বিপ্লব বড়ুয়া তার অপকর্মের মাধ্যমে দলকে দুর্বল করে তুলেছেন, অথচ তিনি আজ আর দেশে নেই।

আওয়ামী লীগ কি কখনো এর জবাব দেবে? দলের প্রকৃত কর্মীদের প্রতি কি কোনো ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা হবে? নাকি ভবিষ্যতেও এমন সুবিধাভোগীদের হাতে দল বিক্রি হতে থাকবে?

(লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট