“চোখ যে মনের কথা বলে–
ডা. শামস মোহাম্মদ নোমান দেখেছেন আমার চোখ। তার অভিজ্ঞ দৃষ্টি আর সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে খুঁজেছেন কোনো সমস্যা আছে কি না। কিন্তু আমি, একজন সাংবাদিক, মনের চোখ দিয়ে দেখেছি তার মন। একজন ডাক্তারের ভেতরের মানবিকতাকে অনুভব করার চেষ্টা করেছি, যার প্রতিটি কাজে জড়িয়ে আছে সেবার নিঃস্বার্থ নিবেদন। চোখ তো শুধু দৃষ্টিশক্তির মাধ্যম নয়, এটি মনের দরজা। আর এই দরজা খুললেই বোঝা যায়, মানুষের ভেতরের ভালোবাসা, মানবিকতা, এবং দায়িত্ববোধ কতটা গভীর। ডা. নোমানের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর যেন এই সত্য নতুনভাবে উপলব্ধি করলাম। তার চোখ যেমন রোগ নির্ণয়ে দক্ষ, তেমনই তার মন সেবার প্রতি গভীর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ।
ডা. শামস মোহাম্মদ নোমান—একটি নাম, যা শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানবিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। সন্দ্বীপের এই গর্বিত সন্তান চট্টগ্রামের জামালখানে বেড়ে উঠেছেন, কিন্তু তার প্রতিভার আলো ছড়িয়ে পড়েছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি শুধু চোখের রোগ নিরাময়ে সীমাবদ্ধ থাকেননি; মানবিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অবিচল নিষ্ঠায়। সাম্প্রতিক এক শুক্রবারে কে বি ফজলুল কাদের সড়কে চট্টগ্রামের চিটাগং আই কেয়ার সেন্টারে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। চিকিৎসা নিতে গিয়েই পরিচয় হলো এই অসামান্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। প্রথম দেখাতেই বুঝলাম, ডা. নোমান শুধু চিকিৎসক নন, বরং একজন মানবসেবক। তার আন্তরিকতা এবং সজীব মানবিকতা মুগ্ধ করে। তিনি ঢাকায় নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন এবং জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জটিল চক্ষু চিকিৎসার জন্য প্রায়ই যাতায়াত করেন।
চক্ষু চিকিৎসার প্রতি তার গভীর গবেষণা এবং অভিজ্ঞতা আশ্চর্যজনক। বিশেষ করে, তিনি গ্লুকোমা রোগের ওপর ব্যাপক কাজ করেছেন এবং অসংখ্য রোগীর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। জন্মান্ধ শিশুদের চোখে আলো ফিরিয়ে আনতে তার অক্লান্ত প্রচেষ্টা মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ। আল্লাহর রহমতে, তার হাতে শত শত শিশু নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। তিনি বলেন, “বৃদ্ধাশ্রমের অসহায় মানুষদের চোখের চিকিৎসা করতে গিয়ে দেখেছি, তাদের কান্নায় চোখের পানি শুকিয়ে যায়, টেলিভিশন দেখার অতিরিক্ত অভ্যাস এবং মানসিক চাপের কারণে চোখে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই সেবা দিয়ে আসছি।”
শিশুদের জন্য তার পরামর্শও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, “শিশুদের অবশ্যই খোলা মাঠে খেলাধুলা করতে দিতে হবে। শাকসবজি বেশি খাওয়াতে হবে এবং মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে গেম খেলা থেকে বিরত রাখতে হবে। চোখের সুরক্ষায় ধুলাবালি থেকে সাবধান থাকতে হবে।” এছাড়া তিনি জোর দিয়ে বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, কারণ এটি চোখের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ডা. নোমানের মতো একজন আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসক চট্টগ্রামে প্রতি সপ্তাহে মাত্র একদিন বসেন। আশিফ সাহেবের মালিকানাধীন মা মনি হাসপাতালের পাশে চিটাগং আই কেয়ার সেন্টারে মতো প্রতিষ্ঠানের সেবা আরও প্রসারিত হওয়া উচিত, যাতে এই অনন্য চিকিৎসকের সেবা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। তার শান্ত এবং ধৈর্যশীল ব্যবহারে রোগীরা যেমন আশ্বাস পান, তেমনি তার চিকিৎসার দক্ষতায় ফিরে পান দৃষ্টিশক্তি।
ডা. শামস মোহাম্মদ নোমান শুধুই একজন চিকিৎসক নন, তিনি মানবতার আলোকবর্তিকা। তার মতো একজন মানবিক চিকিৎসক দেশের সম্পদ। তার প্রতি চট্টগ্রামের মানুষের ভালোবাসা এবং তার সেবার পরিধি আরও সম্প্রসারিত হওয়া উচিত, যাতে চট্টগ্রাম তথা দেশের মানুষ তার প্রতিভা এবং মানবিকতার পূর্ণ সুফল পায়। চক্ষু চিকিৎসার অনন্য পথপ্রদর্শক: ডা. শামস মোহাম্মদ নোমান আরো যা বলেন-
চোখ হলো মানবশরীরের এক অনন্য অঙ্গ, যার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর সৌন্দর্য উপলব্ধি করি। তবে এই অমূল্য দৃষ্টিশক্তির যত্নের অভাবে অনেকে চোখের নানাবিধ সমস্যায় ভোগেন। চট্টগ্রামের চিটাগং আই কেয়ার সেন্টার এই সমস্যাগুলোর সুরাহার জন্য এক অভিজাত প্রতিষ্ঠান। আর এর কেন্দ্রীয় নক্ষত্র হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. শামস মোহাম্মদ নোমান। ডা. শামস মোহাম্মদ নোমানের সঙ্গে চট্টগ্রামের মানুষের পরিচয় শুধু তার চিকিৎসা কার্যক্রমের জন্য নয়, বরং তার মানবিক গুণাবলীর জন্যও। এই ডাক্তার তার অসামান্য প্রতিভা দিয়ে দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম অর্জন করেছেন তা আমি আগেই বলেছি, তিনি নিয়মিত চিটাগং আই কেয়ার সেন্টারে রোগীদের সেবা দেন। চিটাগং আই কেয়ার সেন্টারের সেবাসমূহ এমনভাবে সাজানো, যা আধুনিক চক্ষু চিকিৎসার সর্বোচ্চ মান বজায় রাখে। এখানে দেওয়া সেবার মধ্যে রয়েছে: ব্যাথামুক্ত এবং সেলাইবিহীন ছানি অপারেশন গ্লুকোমার চিকিৎসা টেরা চোখের চিকিৎসা কৃত্রিম চোখ সংযোজন নেত্রনালী অপারেশন
চোখের রেটিনার রোগের চিকিৎসা চোখের পানি পড়া এবং চোখের পাতা পড়ে যাওয়া সমস্যার সমাধান শিশুদের চোখের যাবতীয় রোগের বিশেষায়িত চিকিৎসা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ চক্ষু সেবা সাশ্রয়ী মূল্যে চোখের ওষুধ, চশমা এবং কন্টাক্ট লেন্সের বিক্রয় দুর্ঘটনাজনিত চোখের জরুরি চিকিৎসা অসচ্ছল রোগীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। ডা. শামস মোহাম্মদ নোমানের অভিজ্ঞতা এবং প্রতিভা চক্ষু চিকিৎসায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষ করে গ্লুকোমা এবং রেটিনার জটিল সমস্যাগুলোর চিকিৎসায় তিনি অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। তাছাড়া তার মানবিক কার্যক্রম অসহায় এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। বৃদ্ধাশ্রমের নিঃসঙ্গ মানুষ থেকে শুরু করে জন্মান্ধ শিশুদের চোখে আলো ফেরানোর তার উদ্যোগ এক কথায় অতুলনীয়।
মানবিকতার স্পর্শ ডা. নোমান বলেন, “মানুষের চোখ শুধু দেখার মাধ্যম নয়, বরং এটি তাদের আবেগ, স্বপ্ন এবং জীবনের পথচলার সঙ্গী। আমি যখন বৃদ্ধাশ্রমের মানুষদের চিকিৎসা করি, দেখি তাদের চোখে কেবল দুঃখের ছায়া। তাদের সেবা করতে পারা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। পাশাপাশি, জন্মান্ধ শিশুদের চোখের আলো ফিরিয়ে আনতে পারা আমার জন্য আল্লাহর বিশেষ দয়া।” শিশুদের চোখের স্বাস্থ্য নিয়ে তার পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, বাচ্চাদের খোলা জায়গায় খেলাধুলা করতে দেওয়া, শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করানো এবং মোবাইল বা কম্পিউটার গেম থেকে দূরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য চোখের যত্নে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি। চট্টগ্রামে তার সেবা এবং পরিধি চিটাগং আই কেয়ার সেন্টারে প্রতি শুক্রবার তার সেবা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও, রোগীদের দীর্ঘ লাইন এবং সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকেই তার সরাসরি চিকিৎসা নিতে পারেন না। তবে এই হাসপাতালে আরও কিছু অভিজ্ঞ ডাক্তার আছেন, যারা চট্টগ্রামের মানুষের জন্য চক্ষু চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করা যায়, তাদের নিয়ে ভবিষ্যতে আরও লেখার সুযোগ হবে। ডা. শামস মোহাম্মদ নোমানের মতো একজন মানবিক ও প্রতিভাবান চক্ষু বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রামের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তার চিকিৎসা শুধু রোগ নিরাময় নয়, বরং একটি আলোকিত জীবন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। তার কর্ম এবং জীবন দর্শন প্রমাণ করে, একজন ডাক্তারের কাজ শুধুই রোগ নিরাময় নয়; মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করাই তার প্রধান দায়িত্ব।
লেখকঃ যুগ্ম সম্পাদক দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও the daily banner, সাহিত্যক গবেষক ও টেলিভিশন উপস্থাপক।