“চট্টগ্রামের কমিউনিটি সেন্টার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য: অতিরিক্ত ভাড়া ও ইভেন্ট ব্যবসায় জনগণের ওপর শোষণের অভিযোগ”
আজ ১৭ই নভেম্বর চট্টগ্রাম
ইভেন্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের কমিটি গঠন সভায় সংশ্লিষ্ট নেতরা মানবিক বিবেচনায় সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন, তারা বলেন চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কমিউনিটি সেন্টারগুলো দীর্ঘদিন ধরে শহরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে রয়েছে। তবে সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেট ব্যবসা, অনৈতিক মুনাফা অর্জন, এবং সাধারণ মানুষের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক শোষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা। অবৈধ কমিশন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মনোপলি কার্যক্রমের মাধ্যমে এই সেন্টারগুলো মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে কঠিন করে তুলছে। এতে একদিকে যেমন স্থানীয় ইভেন্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সাধারণ মানুষও অসহনীয় অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়ছেন।
এই অবস্থায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতি মানবিক বিবেচনায় বিষয়টি পর্যালোচনা করে দ্রুত সংকট নিরসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এটি শুধু নাগরিকদের অর্থনৈতিক স্বস্তি দেবে না, বরং চট্টগ্রাম সিটির সুশাসনের উদাহরণ হিসেবেও পরিগণিত হবে।এই বিষয়ে ভুক্তভোগীরা আক্ষেপ করে বলেন,
চট্টগ্রাম সিটির বাসিন্দারা এবং ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারের অনিয়ম, সিন্ডিকেট ব্যবসা এবং অতিরিক্ত মুনাফার জন্য সাধারণ মানুষের ওপর শোষণের অভিযোগ তুলে ধরছেন। সম্প্রতি একটি সংবাদ পত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে তারা এসব অনিয়ম বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। অভিযোগের মূল বিষয় ১. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ব্যবসা গড়ে উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানের সাজসজ্জার কাজ বা ইভেন্ট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কমিউনিটি সেন্টারের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কাউকে দেওয়া হয় না। এতে ভুক্ত ভোগীদের প্রায় দ্বিগুণ খরচ বহন করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, যেখানে ইভেন্ট পরিচালনার স্বাভাবিক খরচ ৫০,০০০ টাকা, সিন্ডিকেটের কারণে তা বেড়ে ৮০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। ইভেন্ট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার একটি বড় অংশ (৪০%) কমিউনিটি সেন্টার মালিকরা কমিশন হিসেবে রেখে দেন।
২. অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ সাধারণ সময়ে কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়া যেখানে ১,০০,০০০ টাকা, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লগ্নকালীন বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য তা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত আদায় করা হয়। যেমন, ২,০০,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ টাকাও নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে সাধারণ মানুষ তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে চরম অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়ছেন। ৩. রাজস্ব ফাঁকি ও দুর্নীতির অভিযোগ অতিরিক্ত ভাড়া এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে আদায়কৃত অর্থের বড় একটি অংশ সরকারী কোষাগারে জমা হয় না। এটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কালো টাকায় রূপান্তরিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা একজন স্থানীয় ইভেন্ট ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “কমিউনিটি সেন্টার মালিকরা আমাদের ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করছে। তাদের নির্ধারিত ইভেন্ট প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোনো কাজ করতে দেওয়া হয় না। এভাবে সাধারণ মানুষ এবং ইভেন্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।” এক ভুক্তভোগী বাবা জানান, “আমার মেয়ের বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করেছিলাম। কিন্তু ইভেন্ট সাজসজ্জার খরচ নিয়ে তারা আমাকে দ্বিগুণ চার্জ করেছে। আমার নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ করাতে দেওয়া হয়নি।” সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
কমিউনিটি সেন্টারগুলোর সিন্ডিকেট ব্যবসা বন্ধে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা মনে করেন, সরকারের কঠোর নজরদারি ও সিটি কর্পোরেশনের কার্যকর উদ্যোগ ছাড়া এই শোষণ বন্ধ সম্ভব নয়। জনগণের দাবি
চট্টগ্রামের বাসিন্দারা কমিউনিটি সেন্টারগুলোর সিন্ডিকেট দৌরাত্ম্য বন্ধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন:১. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা।
২. কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়া নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন।
৩.অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং রাজস্ব ফাঁকি রোধে নিয়মিত নজরদারি। ৪. সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়রের প্রতি ভুক্তভোগীরা বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন, এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনস্বার্থ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখার। জনগণের রক্তচোষা এই ব্যবসা বন্ধ হলে সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তাদের বিশ্বাস।
চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এই অনিয়ম বন্ধ করে জনস্বার্থ নিশ্চিত করবে এবং সাধারণ মানুষের জীবনের বিশেষ মুহূর্তগুলোকে আনন্দময় করে তুলবে। ক্লাব সিন্ডিকেট বন্ধে ইভেন্ট ব্যবসায়ীদের আকুতি: বৈষম্যবিরোধী চট্টগ্রাম ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের আত্মপ্রকাশ “ক্লাব সিন্ডিকেট এমলিসিটেট বন্ধ হোক—ক্লাব যার যার, ইভেন্ট সবার” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের ইভেন্ট ব্যবসায়ীদের নতুন সংগঠন বৈষম্যবিরোধী চট্টগ্রাম ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ আত্মপ্রকাশ করেছে। গত ২১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে সংগঠনটি আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ইভেন্ট ব্যবসায়ীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা এই সংগঠনটি কমিউনিটি সেন্টার মালিকদের সিন্ডিকেট ব্যবসা ও অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়ে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তাদের মতে, কমিউনিটি সেন্টারগুলোর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ইভেন্ট প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারো কাজ করতে না দেওয়ার প্রবণতা শুধু বৈষম্যের সৃষ্টি করছে না, বরং পুরো ইভেন্ট শিল্পের টিকে থাকা কঠিন করে তুলেছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ ইফতেখার পাপ্পু ও সাধারণ মোহাম্মদ মামুন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা মানবিক বিবেচনায় মেয়রের কাছে ততাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন এবং বলেন, এই সিন্ডিকেট বন্ধ না হলে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে যাবে। বৈষম্যবিরোধী চট্টগ্রাম ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের দাবি, ইভেন্ট শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে ক্লাব মালিকদের সিন্ডিকেট ব্যবসা বন্ধ করতে হবে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। তারা আশাবাদী যে, মেয়রের কার্যকর উদ্যোগ এই সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।