1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
গণপিটুনির ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন: বৃষ্টির কারণেই রাস্তার কার্পেটিংয়ে ত্রুটি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে পিকআপ-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ৩ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টিআরসি নিয়োগ পরীক্ষা বিষয়ে পুলিশ সুপার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী পালন উপলক্ষে উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে গণমিছিল অনুষ্ঠিত গাজীপুরের গাছায় শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী গ্রামীণ ও কুটির শিল্প মেলা ২০২৫ বাংলাদেশ দূতাবাস, বাহরাইন-এর উদ্যোগে “জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস” উদযাপন পীরগঞ্জে জমি জমার বিরোধ বাড়ছে – নিরসনে দালালরা বড় বাধা দোয়া কামনা ফ্যাসিবাদ রুখে দাও শ্লোগানে – আমরা জুলাই ৩৬, কাতারের জুলাই শহীদ স্বরণ সভা অনুষ্ঠিত ঘোড়াঘাটে ৩৩ জন কৃতি শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা 

সন্তানের হাতে মা হত্যার নিষ্ঠুরতা: এক অবিশ্বাস্য বিশ্বাসঘাতকতা

মো. কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

এ ধরনের একটি ঘটনা, যেখানে এক পুত্র তার মায়ের জীবন কেড়ে নেয়, তা কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি মানবতার প্রতি এক ভয়াবহ আঘাত। এটি একটি মর্মান্তিক স্মৃতি, যেটি সমাজের সামগ্রিক সত্ত্বাকে হোঁচট দেয় এবং মানুষের অন্তর গভীরভাবে শোকাহত করে। সন্তানের হাতে মায়ের মৃত্যু যেন একটা জীবন্ত বিভীষিকা, যেটি কখনো ভুলে যাওয়ার মতো নয়। এবং এটি শুধুমাত্র একটি মায়ের জন্য দুঃখের বিষয় নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য এক কলঙ্কের প্রতিচ্ছবি। সা’দ, যে ছেলের বয়স মাত্র ২১ বছর, যাকে এখনও সমাজ পূর্ণ পরিণত যুবক হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে না, সে একদিন নিজের মায়ের জীবনের দিকে তাকিয়ে তার শ্বাসরোধ করে তাকে মেরে ফেলল। প্রতিটি মা পৃথিবীতে একটি অমুল্য রত্ন, তাদের কাছে সন্তানের ভালবাসাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জিনিস। মা তার সন্তানের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন, কিন্তু একদিন সেই সন্তানই যখন মায়ের জীবন কেড়ে নেয়, তখন পৃথিবী স্তম্ভিত হয়ে যায়। এটা কেবল একটি ব্যক্তিগত শোকের ঘটনা নয়, এটি সামাজিক বন্ধনগুলোর প্রতি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ।
এই ঘটনার সূত্রপাত ছিল সা’দের এক সম্পর্ক, যে সম্পর্কের পেছনে সে ধ্বংসাত্মকভাবে টাকা উড়িয়ে দিয়েছে। কখনো ঋণ নিয়ে, কখনো বাবা-মায়ের অর্থ আত্মসাৎ করে। এই সম্পর্কের কারণে তার মা তখন তাকে নৈতিকতা ও সততার শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু সা’দ তখন তার মায়ের কথা মানতে রাজি ছিল না। মা যখন বুঝতে পারেন, তার সন্তান একটা বিপদজনক পথে চলেছে, তখন তার সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়।
একদিন, সকালে, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে সা’দ বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখে, মা সবজি কুচাচ্ছে, তার মায়ের অসীম ভালোবাসা এবং যত্নের ছোঁয়া তখনও স্পষ্ট। সেই সময় সে মায়ের পিছনে দাঁড়িয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে। এরপর, মা’র মৃতদেহ ডিপফ্রিজে রেখে, বিভিন্ন জিনিসপত্র ভেঙে রেখে চলে যায়, যেন এটি ডাকাতির ঘটনা বলে প্রতীয়মান হয়। পরদিন, সে নিজেকে অজ্ঞান করল, এমনটা করে ঘটনাটি যেন শুধু ডাকাতির ফলস্বরূপ হয়েছে বলে সমাজে প্রচারিত হয়।কিন্তু, পৃথিবী কখনো মিথ্যা চাপা রাখে না। সা’দের নির্মমতা ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে এবং সবার কাছে প্রকৃত ঘটনা পরিষ্কার হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হলো, কেন একটি ছেলে তার মায়ের জীবনকে এত সহজে কেড়ে নিতে পারে? এর উত্তর অগাধ সত্ত্বায়, যার মধ্যে আত্মবিশ্বাস, ভালোবাসা, ঈর্ষা, ক্ষোভ, আর এক ধরনের নিষ্ঠুরতা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এত বড় ক্ষতিপূরণে মা’টা কি ভেবেছিলেন? একদিন তার কোল আলো করে যে সন্তান পৃথিবীতে এসেছিল, যে সন্তানের জন্য তিনি রাত-দিন পরিশ্রম করতেন, নিজের সুখ-দুঃখ ভুলে তাঁকে বড় করেছিলেন, সে যদি তার জীবনকেই বিপথে নিয়ে যায়, তাহলে মা কি ভেবেছিলেন? যখন সা’দ মায়ের দিকে তার অগ্নিমূর্তি নিয়ে এগিয়ে আসছিল, মা কি তখন তার ছেলেকে বুঝতে পেরেছিলেন? তাঁর চোখের ভিতরে, মায়ের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান অনুভূতি ছিল সন্তানের সুস্থতা, সুখ। সেই চোখের ভাষায় কী ছিল? “মা” শব্দটির আড়ালে এক অবর্ণনীয় শোক ছিল, যা কেবল অনুভব করা যায়, বলার ভাষা নেই। মায়ের জন্য সা’দের নির্মম হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ অভিশাপ, যেখানে একটি নিষ্পাপ প্রাণকে অকারণেই অকালে নিঃশেষ করে দেওয়া হয়। মা যখন তার সন্তানকে সব কিছু দিয়েছিলেন, তখন সেই সন্তান মাকে সেকেন্ডে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলল। এটি শুধু মায়ের জন্য নয়, প্রতিটি মানুষের জন্য একটি কলঙ্ক। এই ঘটনা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে, সমাজের সুষ্ঠুতা ও নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
মা, যিনি সর্বদা সন্তানকে ভালোবাসার জন্য, তার সুখের জন্য প্রতিদিন কষ্ট সহ্য করেন, সেই মায়ের প্রতি এক অঙ্গিকারহীন বিশ্বাসঘাতকতা, এটি সমাজের ভেতরে এক অবিচ্ছিন্ন ক্ষতের সৃষ্টি করে। এক মা, যার বুকের মধ্যে কেবল সন্তানের জন্য এক অদম্য ভালোবাসা ছিল, তাকে ঘাতক হিসেবে দেখা—এটি আমাদের প্রত্যেকের কাছে এক নিদারুণ ব্যর্থতা, এক অসহিষ্ণু ব্যথা। পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ শব্দগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘মা হত্যার ঘটনা’, কারণ এই শব্দের ভেতর রয়েছে অস্বীকারযোগ্য এক নিষ্ঠুরতা।
এই অমানবিকতা ও নির্মমতার পরিসংখ্যান সমগ্র সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। মায়ের প্রতি এই বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায়, আমরা কিভাবে সমাজে মায়েদের প্রতি এত তাচ্ছিল্য ও অবহেলা দেখাচ্ছি? কিভাবে এক সন্তান তার মা’কে হত্যা করার মত ভয়াবহ কাজে লিপ্ত হতে পারে? আমাদের সমাজে কেন, কোথায় গড়তে হবে সেই নৈতিক শিক্ষা যাতে আর কোনো মা তার সন্তানের হাত থেকে এমন নিষ্ঠুরতার শিকার না হন? এটি আমাদের সমাজের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যে কোন মা যেন আর কখনো এমন কষ্টের শিকার না হন, যে কষ্টের কথা আমরা চিন্তা করলেও কাঁদতে হয়।
মা—এই একটি শব্দই পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অপরিসীম। পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, যত্ন, এবং মমতা যেন একত্রিত হয়ে এই একটি শব্দে নিঃশেষ হয়ে যায়। মা এমন এক ব্যক্তি, যার কাছে সন্তানের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও অটুট স্নেহের সীমা থাকে না। মায়ের তুলনা পৃথিবীতে আর কারো সাথে করা যায় না, কারণ তাঁর ভালোবাসা, ত্যাগ, এবং দুঃখ সহ্য করার ক্ষমতা কোনো মাপের মধ্যে আসে না। মায়ের উপস্থিতি, তাঁর আদর, তাঁর মুখের হাসি—এসব কিছুই একটি সন্তানের জীবনে অমূল্য রত্ন। মা যে সন্তানের জন্য জীবন দিয়ে দেন, সেই সন্তানেরও উচিত মা’র প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান এবং ভালোবাসা রাখা। একমাত্র মা জানেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকে তার ভালোবাসা কখনো কমে না, কখনো ছেঁটে না, বরং প্রতিনিয়ত আরও গভীর হয়। সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহের পরিসীমা আকাশের মতো বিস্তৃত, যা কোনোদিনও ক্ষীণ হয় না। তবে, এটা খুবই দুঃখজনক যে, কিছু সন্তান তাদের মায়ের প্রতি অযত্ন, অবহেলা কিংবা অসত আচরণ করে, যা মায়ের কাছে অপমানের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। এমন আচরণ কোনো সন্তানের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়। আমাদের সমাজে মা’র সম্মান এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখতে হবে। কোনো সন্তান যেন কখনো মায়ের অনুভূতির প্রতি অবহেলা না করে, কোনো মা যেন তাঁর সন্তান থেকে এমন নিষ্ঠুরতা বা অবহেলা না পায়—এটা আমাদের প্রত্যেকের দায়বদ্ধতা। মা শব্দটির মধ্যে যে অগাধ ভালোবাসা, ত্যাগ, এবং অপরিসীম সহনশীলতা নিহিত, তা পৃথিবীতে অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। মায়ের মতো অপরিসীম ভালোবাসা আর কোনো সম্পর্ক থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। মা শব্দটি শুধু একটি নাম নয়, এটি একটি অনুভূতি, একটি জীবন্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি। যেখানেই মা আছেন, সেখানে ভালোবাসা, শান্তি এবং স্নেহ বিরাজমান।
এছাড়া, মা’র প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা রেখে চলা, আমাদের সমাজকে একটি মানবিক, স্নেহপূর্ণ এবং শক্তিশালী সমাজে পরিণত করবে। যখন আমরা মা’র প্রতি এই অটুট শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পালন করি, তখন পৃথিবী আসলে সত্যিকার অর্থে সুন্দর হয়ে ওঠে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট