বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও হাটহাজারী পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জন বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার দ্রুত প্রত্যাহারের দাবিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। রবিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের হাতে স্মারকলিপিটি তুলে দেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপি প্রদানকালে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সন্ত পরিষদের শ্রীমৎ অজপানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ, শ্রীমৎ পরিতোষানন্দ ব্রহ্মচারী, শ্রীমান স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস, শ্রীমান সোমনাথ চৈতন্য রুদ্রাক্ষ বাবাজী, সমন্বয়ক জুয়েল আইচ, লিংকন তালুকদার, সুব্রত দাশ আকাশ, অমিত পারিয়ালসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা সকলেই ৮ দফা দাবির পাশাপাশি চলমান ধর্মীয় বৈষম্য ও হামলার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। স্মারকলিপির মূল দাবি ও অভিযোগ স্মারকলিপিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের দাবি ও অভিযোগগুলো অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও সনাতন সম্প্রদায় নানান বৈষম্য, অবিচার এবং সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়ে আসছে, যার অধিকাংশ ঘটনায় বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে হামলাকারীরা নতুন হামলা চালাতে উৎসাহিত হচ্ছে। নেতারা আরও উল্লেখ করেন, সম্প্রতি ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে নতুন একটি বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন জাগলেও, সনাতন সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, লুটপাট ও নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার প্রসঙ্গে স্মারকলিপিতে বলা হয়, সনাতন সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষায় ও নিজেদের ৮ দফা দাবি তুলে ধরার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলা দায়েরের বিষয়টি একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করে বলা হয় যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ অভিযুক্তরা এই ঘটনার সাথে কোনোভাবেই জড়িত নন।
৮ দফা দাবির গুরুত্ব
স্মারকলিপিতে ৮ দফা দাবি প্রস্তাবনার মাধ্যমে সনাতনী সম্প্রদায়ের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, সনাতনীদের প্রথাগতভাবে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং কোনো সরকারই তাদের বৈধ দাবিগুলো পূরণের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের অধিকার সুরক্ষায় ৮ দফা দাবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংগঠনটির নেতারা মনে করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ও সরকারের প্রতি আহ্বান
স্মারকলিপিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সনাতনী সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা আশা প্রকাশ করেন, নোবেলজয়ী হিসেবে তিনি বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেবেন এবং এই মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করবেন। নেতারা উল্লেখ করেন, “আপনার বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত সনাতন সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপত্তা ও সম্মান বয়ে আনবে। আমরা বিশ্বাস করি, আপনি আমাদের মনের কথা বুঝবেন এবং ৮ দফা দাবিগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন।”
সংগঠনের বার্তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা দেশের সনাতনী সম্প্রদায়ের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের উদ্যোগ চালিয়ে যাবে। সংগঠনটি চলমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে সর্বস্তরে প্রতিবাদ ও সমর্থন জোগাড় করে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। স্মারকলিপির মাধ্যমে সনাতন জাগরণ মঞ্চ শুধু মিথ্যা মামলার প্রত্যাহারের দাবি নয়, বরং দেশজুড়ে একটি শান্তিপূর্ণ ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে।