1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৯:২৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর তিনদিনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ইজতেমা বালুকাবেলার আত্মঘোষণা: যেখানে সাংবাদিকতা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের কবিতা চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের ঐক্য উৎসব পারকি সৈকতে গড়লো অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যার বিচার দাবিতে আনোয়ারায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ! “বাঁশখালীতে ৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের মাদক কারবারি আটক: ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ” হোমনায় মহান মে দিবস উপলক্ষে  বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর শুভ আগমনে বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে হাজী মোহাম্মদ আলম ববির শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ৮ জনকে বেঁধে ছয়টি দোকান ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা রোদেলা দুপুরে পারকি সৈকতের বালুকাবেলায় কলম যোদ্ধারা,স্মৃতিময় এক মে দিবস! ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দক্ষিণ চট্টগ্রাম সফর

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অচলাবস্থা নিরসনে ঐক্য ও সৌহার্দ্যের প্রয়োজন

মো. কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৮০ বার পড়া হয়েছে

ক্ষমা করবেন,

এর আগেও আমি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বর্তমান অচলাবস্থা নিয়ে বেশ কিছুবার লিখেছি। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর, আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে কিছু অসাধু আধিপত্য বিস্তারকারী সাংবাদিকদের বৈষম্যের শিকার হয়েছি, তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক্লাবের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে এসেছি। প্রেসক্লাবকে জমিদারদের হাত থেকে মুক্ত করার এই প্রচেষ্টায় অনেক পেশাদার সাংবাদিক দীর্ঘ সময় ধরে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার অধিকার থেকে যারা দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিলেন, তারা এখন ক্লাবের নিয়ন্ত্রণে আনার আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। এতে প্রেসক্লাবের তথাকথিত নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, কারণ তাদের একচেটিয়া ক্ষমতা হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে, আর এ অচলাবস্থা নিরসনে দখলদার সাংবাদিকরা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না। তবুও এই বিষয়টি এখন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আলোচিত হচ্ছে।
আজ আমি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রসঙ্গ নিয়ে লিখতে গিয়ে ভাবছি, কিভাবে এটি শুধুমাত্র সাংবাদিকদের বিনোদন কেন্দ্র নয়, বরং তাদের দ্বিতীয় আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি, আমি বিশ্বের অন্যান্য দেশ এবং অঞ্চলের প্রেসক্লাবগুলোর ইতিহাস ও ঐতিহ্যও তুলে ধরতে চাই, যেখানে সাংবাদিকদের অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা হয়।
আশা করছি, সবাই চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অচলাবস্থা নিরসনে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য একসঙ্গে কাজ করবে। প্রেসক্লাব (Press Club) বলতে মূলত সাংবাদিকদের একটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়, যেখানে তারা পেশাগত বিষয়ে মতবিনিময় করতে পারেন, বিভিন্ন কার্যক্রম আয়োজন করতে পারেন, এবং সাংবাদিকতার উন্নয়নে কাজ করতে পারেন। প্রেসক্লাব সাধারণত একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থিত হয়, যা সাংবাদিকদের আড্ডা, পেশাগত সাহায্য, সংবাদ সংগ্রহ, ও সংবাদ পরিবেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান করে। প্রেসক্লাবের ইতিহাস প্রেসক্লাবের ধারণা প্রথমে পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল লক্ষ্য ছিল সাংবাদিকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা প্রদান করা, যেখানে তারা পেশাগত কার্যক্রম, সংবাদ সংগ্রহের কৌশল, এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ঢাকায় প্রথম প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৪ সালে। এটি প্রতিষ্ঠার পেছনে ছিল দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিকরা, যারা একটি পেশাদার সংগঠন তৈরি করে সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। ঢাকা প্রেসক্লাব আজও বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। এর মাধ্যমে সাংবাদিকরা তাদের পেশাগত উৎকর্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায়ও ভূমিকা রাখেন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব বাংলাদেশের অন্যতম পুরোনো ও গুরুত্বপূর্ণ প্রেসক্লাব। এর ইতিহাস চট্টগ্রামের গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতার বিকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠা ১৯৬৪ সালে, যখন সাংবাদিকদের একটি সম্মিলিত সংগঠন ও কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এটি মূলত সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়ন, অধিকার রক্ষা, এবং সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন এম. এ. আজিজ, যিনি চট্টগ্রামের সাংবাদিক ও রাজনৈতিক জগতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। প্রেসক্লাবের ইতিহাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাংবাদিকরা বিভিন্ন উপায়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরতে চেষ্টা করেছিলেন।
বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক ইস্যুতে প্রেসক্লাব বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক চেতনার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব শুধু সাংবাদিকদের সংগঠন নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি নিয়মিত বিভিন্ন আলোচনা সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সাংবাদিকতার উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইতিহাস চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার ধারাকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করেছে এবং এখনো তা সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য, পেশাগত উন্নয়ন এবং সমাজের সেবায় নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে-বিশ্বের প্রেসক্লাব সৃষ্টির ইতিহাস এবং এর গুরুত্ব গণমাধ্যমে অপরিসীম। প্রেসক্লাব হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে গণমাধ্যম কর্মীরা একত্রিত হন, তথ্য আদান-প্রদান করেন, মতবিনিময় করেন এবং পেশাগত সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রেসক্লাবগুলো সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠেছে।

প্রেসক্লাব সৃষ্টির ইতিহাস
প্রেসক্লাবের ধারণা উনিশ শতকের প্রথম দিকে উদ্ভূত হয়। সাংবাদিকদের একটি সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রয়োজনীয়তা থেকেই এর সূচনা হয়। বিশ্বের প্রথম প্রেসক্লাব গঠিত হয় ইংল্যান্ডে, ১৮৫৬ সালে লন্ডন প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পরে ১৮৮৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে “ন্যাশনাল প্রেসক্লাব” গড়ে তোলা হয়। ভারতের প্রথম প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা হয় ১৯০৯ সালে, যা “ক্যালকাটা প্রেস ক্লাব” নামে পরিচিত। এর ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হলো সাংবাদিকদের পেশাগত সুবিধা প্রদান করা এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা। প্রেসক্লাবের ভূমিকা এবং সুযোগ-সুবিধা প্রেসক্লাবের প্রধান কাজ হলো সাংবাদিকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে তারা নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারেন, অন্যান্য পেশাদারদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন এবং গণমাধ্যম সংক্রান্ত নানা বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। এখানে সাংবাদিকরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন তা হলো:

তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সুযোগ: বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক ইভেন্টের জন্য প্রেসক্লাবে বিশেষ ব্রিফিং বা সেমিনারের আয়োজন করা হয়, যেখানে সাংবাদিকরা সহজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন: অনেক প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার ব্যবস্থা করে। এটি নতুন সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। লেখা-পড়া এবং গবেষণার সুবিধা: অধিকাংশ প্রেসক্লাবে লাইব্রেরি থাকে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের বই, পত্রিকা, রিপোর্ট ইত্যাদি পাওয়া যায়। সাংবাদিকরা এখানে গবেষণা এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে পারেন।

নেটওয়ার্কিং সুযোগ: সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবের মাধ্যমে অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারেন, যা পেশাগত উন্নয়ন এবং খবর সংগ্রহের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইনি সহায়তা: প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের আইনি সহায়তাও প্রদান করে থাকে। বিশেষ করে সাংবাদিকতা সংক্রান্ত আইনি সমস্যার মুখোমুখি হলে প্রেসক্লাব পাশে দাঁড়ায় এবং প্রয়োজনীয় আইনি সাহায্য প্রদান করে।
প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার অধিকার প্রেসক্লাবে সদস্য হওয়া সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু নিয়মাবলী এবং শর্ত পূরণ সাপেক্ষে হয়ে থাকে। বিশ্বের অনেক প্রেসক্লাবে যোগদান করার জন্য নিম্নলিখিত মানদণ্ডগুলো থাকে:

পেশাগত যোগ্যতা: সাধারণত যারা সাংবাদিক হিসেবে নিয়মিত কাজ করেন, যেমন সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের রিপোর্টার, তারা সদস্য হওয়ার জন্য যোগ্য হন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: সাংবাদিক হিসেবে বৈধতা নিশ্চিত করতে কিছু কাগজপত্র, যেমন সাংবাদিক পরিচয়পত্র, কাজের প্রমাণ বা নিয়োগপত্র জমা দিতে হয়।
প্রবেশ ফি ও বার্ষিক চাঁদা: সদস্য হতে হলে কিছু নির্দিষ্ট প্রবেশ ফি ও বার্ষিক চাঁদা দিতে হয়, যা প্রত্যেক প্রেসক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। নির্দিষ্ট নিয়মাবলী মেনে চলা: একজন সদস্যকে অবশ্যই প্রেসক্লাবের নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নৈতিকতা এবং সাংবাদিকতার সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়। সদস্যদের অধিকার নিশ্চিতকরণ
প্রেসক্লাবগুলো সাধারণত সদস্যদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট অধিকার নিশ্চিত করে থাকে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সাংবাদিকদের পেশাগত এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রদান। বিভিন্ন দেশে প্রেসক্লাবগুলো সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় দাবিদাওয়া পেশ করে, সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য চাপ সৃষ্টি করে, এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করে। অধিকাংশ প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের জন্য নানা সুবিধা প্রদান করে, যেমন অফিস স্পেস, যোগাযোগের সুবিধা, হোটেল বা খাবারের সুবিধা, এবং আইনগত সমস্যা সমাধানের জন্য সহযোগিতা। এইসব সুবিধা একজন সাংবাদিকের কাজকে সহজ করে তোলে এবং তাদের পেশাগত মান উন্নত করে। গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিটি দেশের গণতন্ত্র ও সাংবাদিকতার মানের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকদের মধ্যে পেশাগত বন্ধন, সহযোগিতা, ও সহমর্মিতার একটি দৃঢ় সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তবে দেশভেদে এর প্রকৃতি ভিন্ন হতে পারে। অন্যান্য দেশে গণমাধ্যম কর্মীদের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক: পশ্চিমা দেশগুলোতে যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে, সাংবাদিকদের মধ্যে পেশাগত সংহতি এবং পারস্পরিক সহযোগিতার একটি শক্তিশালী সংস্কৃতি রয়েছে। এসব দেশে সাংবাদিক সংগঠনগুলি সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য কাজ করে। সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সংগঠন: শক্তিশালী ইউনিয়ন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংকটে সহায়তা করে এবং পেশাগত অধিকার রক্ষায় জোরালো ভূমিকা পালন করে। তারা যেমন একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা দেখায়, তেমনি প্রতিযোগিতার ভিত্তিতেও কাজ করে, যা প্রায়শই সাংবাদিকতার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা: পেশাগত প্রতিযোগিতা থাকলেও তা সহযোগিতা ও সংহতির ক্ষতি করে না। সাংবাদিকরা একে অপরের কাজের প্রশংসা করেন এবং প্রায়ই একই ইস্যুতে একসাথে কাজ করেন, বিশেষত মানবাধিকার বা রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিষয়ক রিপোর্টিংয়ে।

বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক:
বাংলাদেশে গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক একটি সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। যদিও সাংবাদিকতার ইতিহাস এখানে খুবই গৌরবময়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন এবং প্রতিযোগিতার তীব্রতা বাড়ছে। রাজনৈতিক প্রভাব: বাংলাদেশে সাংবাদিকদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব ও বিভাজন একটি বড় সমস্যা। সাংবাদিকতার মূলনীতির বাইরে গিয়ে অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপোষণ, কর্পোরেট চাপ এবং সরকার ও বিরোধী দলের প্রভাব সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। একে অপরের প্রতি সহমর্মিতার অভাব এবং প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের ফলে সাংবাদিকদের মধ্যে সম্পর্ক অনেক সময় খারাপ থাকে।সাংবাদিক সংগঠনগুলির দুর্বলতা: অনেক ক্ষেত্রেই সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত, যার ফলে তারা সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়। ইউনিয়নগুলোর ভেতরেও রাজনৈতিক বিভাজন লক্ষ্য করা যায়, যা সংহতির পথে বড় বাধা।

সাংবাদিক নির্যাতন: বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হয়রানি এবং মামলার সংখ্যা বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবর্তে আতঙ্ক ও অসহায়ত্বের বোধ বেড়েছে।
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের মধ্যে বৈষম্য কেন?

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের মধ্যে বৈষম্য হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ কাজ করছে:
রাজনৈতিক বিভাজন: সাংবাদিকরা প্রায়ই তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা রাজনৈতিক দলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত হন, যার ফলে পেশাগত সংহতি দুর্বল হয়। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে সাংবাদিকদের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ নিয়ে কাজ করতে বাধ্য করে।
অর্থনৈতিক বৈষম্য:
বাংলাদেশের গণমাধ্যম শিল্পে আর্থিক অসাম্যতা ব্যাপক। বড় বড় কর্পোরেট মিডিয়াতে কাজ করা সাংবাদিকরা ভালো বেতন ও সুযোগ সুবিধা পান, যেখানে অনেক ছোট গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা খুবই কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হন। এই আর্থিক অসাম্য পেশাগত বিরোধ সৃষ্টি করে এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতির জায়গায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

প্রশিক্ষণের অভাব: দক্ষতার ভিত্তিতে বৈষম্যও একটি বড় কারণ।  সাংবাদিক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পেশাগত দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পান না। তাদের জন্য সাংবাদিকতা কঠিন হয়ে পড়ে, এবং এর ফলে সহকর্মীদের মধ্যে বৈষম্য ও প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। আমাদের দেশে সাংবাদিকদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত কেন এবং কীভাবে তা সম্ভব: বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সাংবাদিকতার উন্নতির জন্য সাংবাদিকদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীন মত প্রকাশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা, এবং জনগণের সঠিক তথ্য প্রদান নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের মধ্যে পেশাগত সংহতি প্রয়োজন।

পেশাগত সংহতির গুরুত্ব: একজন সাংবাদিকের বিপদে পড়লে বা কোনো সংকটে পড়লে অন্যদের সহমর্মিতা মূলক ভূমিকা পালন করা উচিত। গণমাধ্যম কর্মীরা যদি একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল না হন, তাহলে গণমাধ্যমের পেশাদারিত্ব ও স্বাধীনতার ওপর হুমকি সৃষ্টি হয়। পুনঃপ্রশিক্ষণ ও কর্মশালা: সাংবাদিকদের জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে পেশাগত মান উন্নত হবে এবং সাংবাদিকদের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরালো হবে।

বৈষম্য দূরীকরণ: আর্থিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হবে। সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে মিডিয়া মালিক এবং কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব রয়েছে।

বর্তমান অবস্থা: বাংলাদেশে বর্তমানে সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা প্রয়োজন, তবে এর অভাব স্পষ্ট। সাংবাদিকদের মধ্যে বৈষম্য ও বিভাজন এখনো গুরুতর সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। গণমাধ্যমে দলীয়করণ এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সাংবাদিকরা অনেক সময়ে সঠিক তথ্য প্রকাশে পিছিয়ে থাকেন বা নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাপ্রাপ্ত হন।
সুতরাং, বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে রাজনৈতিক পক্ষপাত দূর করা, সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদা ও স্বাধীনতার গুরুত্ব বোঝাতে হবে।
প্রেসক্লাব শুধু একটি জায়গা নয়, এটি সাংবাদিকদের পেশাগত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি সাংবাদিকদের মধ্যে সংহতি তৈরি করে এবং তাদের পেশাগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়া একজন সাংবাদিকের পেশাগত স্বীকৃতি এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক ও মহাসচিব চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট