ফারুক ইকবাল -নামটি উচ্চারণ করলেই চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা জগতে এক আলোকিত অধ্যায়ের কথা মনে পড়ে। আশির দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের ডাকসাইটের ছাত্র
নেতা হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রথম পদচারণা, তবে তাঁর মেধা, মনন এবং আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে শুধু একজন ছাত্রনেতা নয়, একজন বুদ্ধিজীবী ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সেই সময়ের ছাত্র রাজনীতিতে ফারুক ইকবাল এবং তাঁর সঙ্গীরা ছিলেন এক নতুন ধারার প্রতিনিধি—যারা রাজনীতিকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে চেয়েছিলেন। রাজনীতির ময়দানে মেধা ও মননের সমন্বয়ে সমাজের জন্য কল্যাণকর কিছু করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা তাঁকে সবার থেকে আলাদা করে তুলেছিল। আজকের দিনের অনেক রাজনীতিবিদ যেখানে ক্ষমতা ও অর্থের পিছনে দৌড়ান, সেখানে ফারুক ইকবাল ছাত্রাবস্থায়ই নিজের আদর্শ ও নৈতিকতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থেকেছেন। তাঁর এই মেধা এবং পড়াশোনা থেকে পাওয়া জ্ঞানই তাঁকে পরিণত করেছে একজন অভিজ্ঞ এবং দক্ষ সাংবাদিক হিসেবে। তিনি প্রতিটি বিষয়ের উপর গভীরভাবে কথা বলতে এবং লিখতে পারেন। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি কিংবা মানবাধিকার—প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর জ্ঞান এবং উপলব্ধি প্রগাঢ়। আর এ কারণেই তাঁর প্রতিটি লেখা পাঠকের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। সাংবাদিকতার মাঠে তাঁর বিচরণ শুধু একটি পেশাগত দায়িত্ব নয়, এটি তাঁর নৈতিক দায়িত্ব এবং জীবনের অভিজ্ঞান। ফারুক ইকবাল শুধুমাত্র একজন সফল সাংবাদিক নন, তিনি একজন সাংবাদিক গড়ার কারিগরও। চট্টগ্রামে সাংবাদিকতা শেখানোর উদ্দেশ্যে “সাংবাদিক ইনস্টিটিউট” খোলার তাঁর উদ্যোগ চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার জগতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। তাঁর এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, তিনি নিজের অর্জনকে শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না; বরং নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের হাতে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার আলো পৌঁছে দিতে চান। সাংবাদিকতার প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে তাঁর যে গভীর জ্ঞান, তা নতুনদের জন্য একটি অসীম শিক্ষার ভান্ডার হয়ে থাকবে। এই অসাধারণ গুণী মানুষটি যদি ঢাকায় অবস্থান করতেন, তবে নিঃসন্দেহে তাঁর পথ আরও সুগম হতো এবং তিনি অনেক দূর এগিয়ে যেতেন। ঢাকার মূলধারার সাংবাদিকতা ও মিডিয়া হাউসগুলোতে তাঁর প্রজ্ঞা এবং দক্ষতা নিয়ে কাজ করলে, তিনি জাতীয় পর্যায়ে আরও বৃহত্তর অবদান রাখতে পারতেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ হলো—তিনি একজন নিরহংকারী এবং নিঃলোভ মানুষ। আজকের দিনে, যেখানে সাংবাদিকতার জগতে নানা ধরনের লোভ ও প্রলোভনের বন্যা চলছে, সেখানে ফারুক ইকবাল ভাই তাঁর আদর্শ এবং সততা ধরে রেখেছেন। ক্ষমতার লোভ কিংবা অর্থের প্রতি আকর্ষণ তাঁকে কখনো দুর্বল করতে পারেনি। তিনি সবসময় সত্যের পক্ষে অবিচল থেকেছেন এবং অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।
ফারুক ইকবাল শুধু একজন সাংবাদিক নন, তিনি একজন সত্যনিষ্ঠ কলম সৈনিক। তাঁর নিষ্ঠা, সততা, এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে সাংবাদিকতার আকাশে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রে পরিণত করেছে। তাঁর জীবনের- তার দৈনিক দেশ রুপান্তর পত্রিকায় দুই বছরের সফলতা একটি ছবি ফেইসবুকের বদৌলতে পাওয়াতে আমি নীর্ভীক মেধাবী চৌকস সাংবাদিক ফারুক ইকবালকে কলম ধরলামঃ
চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার ইতিহাসে ফারুক ইকবাল নামটি অনন্য এবং স্মরণীয় তা আমার নতুন করে বলার প্রয়োজন হয়না। তাঁর দীর্ঘ বছরের কর্মময় জীবন, গভীর অনুসন্ধানী মনোভাব, এবং সাহসিকতা তাঁকে চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি যেখানেই কাজ করেছেন, সেই জায়গায় তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বগুণ এবং পেশাগত উৎকর্ষতা সকলকে মুগ্ধ করেছে। আজ দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান হিসেবে দুই বছরের সফলতা তাঁর এ দীর্ঘ পেশাগত জীবনের প্রতিফলন মাত্র। সিনিয়র কলম সৈনিক ফারুক ইকবাল সাংবাদিকতার শুরু থেকেই ছিলেন প্রতিবাদী এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরার মানুষ। সাংবাদিকতার প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজের অবহেলিত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার অঙ্গীকার তাঁকে আলাদা করে চিনিয়েছে। তাঁর সাংবাদিকতা শুধু খবর প্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তিনি একজন সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত ছিলেন। সমাজের অপ্রকাশিত দিকগুলো সামনে আনতে তাঁর কলম সবসময় ছিল শাণিত, যার প্রমাণ আমরা বারবার তাঁর লেখায় পেয়েছি।
দেশ রূপান্তর-এ নতুন দিগন্তের সূচনা দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান হিসেবে ফারুক ইকবাল ভাই তাঁর সাংবাদিকতার দায়িত্বকে আরও বিস্তৃত করেছেন। মাত্র দুই বছরের মাথায় তিনি এই পত্রিকাটিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে জনপ্রিয় করে তুলেছেন, যা তাঁর নেতৃত্বের সাফল্যের এক বিশাল প্রমাণ। সত্যের পক্ষে অবিচল থাকা, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন এবং চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির উপর ধারাবাহিক রিপোর্ট তাঁর বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।
এই পদে থেকে তিনি শুধু চট্টগ্রামের নয়, পুরো দেশের সাংবাদিকতার জগতে নিজের নামকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর সাহসিকতা এবং নির্ভীক রিপোর্টিং, বিশেষ করে চট্টগ্রামের সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অন্যান্য অসঙ্গতি নিয়ে তার করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো পাঠক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং তাঁকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। চট্টগ্রামের নানান সংকট, যেমন পরিবেশ দূষণ, অবৈধ নির্মাণ কার্যক্রম, কাস্টমস ও বন্দর দুর্নীতি—এমন অনেক বিষয়ে তাঁর অনুসন্ধানী রিপোর্ট আজও আলোচনায় আছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ ফারুক ইকবাল ভাইয়ের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তিনি কখনোই অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। তাঁর অনুসন্ধানী রিপোর্টগুলো শুধু তথ্য প্রকাশ করে থেমে থাকেনি, বরং সেগুলো সমস্যার গভীরে গিয়ে সত্য উদঘাটন করেছে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতি—এসব বিষয়ে তাঁর নির্ভীক ও নিরপেক্ষ প্রতিবেদন তাঁকে সাংবাদিকতার জগতে অনন্য করে তুলেছে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একজন প্রকৃত অনুসন্ধানী সাংবাদিক হয়ে ওঠা সহজ নয়। বিশেষ করে যখন তাকে নানা রকম চাপ ও হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু ফারুক ইকবাল ভাই তাঁর দৃঢ় মনোভাব, পেশাদারিত্ব এবং সততা দিয়ে এই কঠিন পথটি পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর প্রত্যেকটি রিপোর্ট চট্টগ্রামের সমাজ এবং রাজনীতির ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি সবসময় অন্যায় এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, এবং তাঁর সাংবাদিকতার মাধ্যমে অসংখ্য অপরাধ উন্মোচিত হয়েছে। একজন উদার ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব পেশাগত জীবন ছাড়াও ফারুক ইকবাল ভাই ব্যক্তিজীবনেও অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান এবং উদার একজন মানুষ। সহকর্মীরা তাঁকে সবসময় একজন ভালো মনের মানুষ এবং সহানুভূতিশীল সহকর্মী হিসেবে জানেন। তিনি নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের সাথে সবসময় নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন, তাদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, এবং তাঁদের সফল হতে সাহায্য করেছেন। সাংবাদিকতার প্রতি তাঁর এতো বছরের ভালোবাসা এবং দায়বদ্ধতা শুধু তাঁর কর্মক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তাঁর জীবনযাত্রা এবং মানবিক গুণাবলীর মাধ্যমেও তা প্রকাশ পেয়েছে।
ফারুক ইকবাল: সাংবাদিকতার আদর্শ
ফারুক ইকবাল ভাইয়ের সাংবাদিকতার পথযাত্রা আজও চলমান, এবং তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপই একজন দায়িত্বশীল সাংবাদিকের আদর্শ হয়ে থাকবে। তাঁর কলমের ঝলকানিতে যেমন ছিল সাহস, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতা। বর্তমান সময়ে, যখন সাংবাদিকতার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তখন ফারুক ইকবাল ভাইয়ের মতো ব্যক্তিত্বদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করাই একমাত্র পথ হতে পারে। তাঁর এই দীর্ঘ কর্মময় জীবন নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্যও এক বিশাল শিক্ষা।
চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা জগতে এবং জাতীয় পর্যায়ে ফারুক ইকবাল ভাইয়ের অবদান নিঃসন্দেহে অনুকরণীয়। তাঁর অদম্য সাহস, সততা, এবং পেশাদারিত্ব আমাদের কাছে আজীবন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
-আরো বিস্তারিত লিখবো ইনশাআল্লাহ।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক ও মহাসচিব চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।