চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের নীরব প্রাঙ্গণে, বেদনার স্রোত বইছে প্রতিটি আখি কোনে। সিস্টারদের মৃদু হাসিতে চাপা পড়ে থাকে যত বেদনা, জীবন বাঁচানোর শপথে বাঁধা তাদের প্রতিটি দিন-রাত্রি। মুনাফিক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর নিপীড়নে, হাসপাতালের প্রতি তলার করিডোর,ইট, সিড়ি, সিকবেড এর মতই তারা নির্যাতনের ভার সইছে, প্রতিবাদ আজ গর্জে উঠেছে প্রতিটি কণ্ঠে, তারা জানে কীভাবে ফিরতে হয় অধিকারে,
|
মানবিকতার আলো, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের সেবিকার সংগ্রাম মানবিকতা শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে সহানুভূতি, মমতা, এবং একে অপরকে সাহায্য করার দৃঢ় মনোভাব। এটি এমন এক শক্তি, যা মানুষকে নিজেদের কষ্ট ভুলে গিয়ে অন্যের জন্য কাজ করতে প্রেরণা দেয়। তবে, মানবিকতা কেবল সাহায্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; কখনো কখনো এটি রূপ নেয় সংগ্রামে, ন্যায়বিচারের জন্য লড়াইয়ে। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের সেবিকা, ডাক্তার, এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জীবন সেই মানবিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ, যেখানে অন্যের জীবন বাঁচানোর মহান ব্রত তাদের কাঁধে রয়েছে, কিন্তু নির্যাতন, নিপীড়ন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা আজ দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল, একসময় যেখানে রোগীর আশার আলো জ্বলতো, সেই প্রতিষ্ঠান আজ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়েছে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর মতো দুর্নীতিবাজের শাসনে। জাহাঙ্গীর চৌধুরী তাঁর ক্ষমতা ও অবস্থানকে ব্যবহার করে হাসপাতালের ডাক্তার, সেবিকা, এবং কর্মচারীদের উপর বছরের পর বছর ধরে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালের সেবিকাদের মৃদু হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য কষ্টের কথা হয়তো বাইরে থেকে বোঝা যায় না, কিন্তু তাদের নীরব প্রতিবাদ আজ গভীরভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে সমাজের প্রতিটি স্তরে। একজন সেবিকার কাজের মধ্যে লুকিয়ে থাকে বিশুদ্ধ মানবিকতা। তারা ক্লান্তি ভুলে, নিজেদের জীবনের কষ্টের কথা ভুলে প্রতিদিন রোগীর সেবা করেন। তাদের স্পর্শে রোগীর যন্ত্রণা লাঘব হয়, নতুন আশার আলো ফুটে ওঠে। কিন্তু যখন সেই সেবিকারা নিজেদেরই অন্যায়ের শিকার হন, তখন মানবিকতার চেয়ে কঠিন কিছু আর হতে পারে না। হাসপাতালের সেবিকার হাতে যখন ন্যায়বিচারের আলো নেভাতে চাওয়া হয়, তখন তারা শুধু সেবা নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে বাধ্য হন। মানবিকতার আলো কখনো নিভে যায় না। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের সেবিকারা এই কথাটিই প্রমাণ করেছেন। তাদের জীবনই মানবতার এক মহান উদাহরণ। যখন জাহাঙ্গীর চৌধুরীর দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার তাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করেছিল, তখনো তারা নিজেদের দায়িত্বে অটল ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিনের এই অন্যায় অত্যাচার শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে একটি নতুন জাগরণ তৈরি করেছে—প্রতিবাদের, ন্যায়ের জন্য লড়াইয়ের। তাদের এই সংগ্রাম শুধু নিজের জন্য নয়, এটি প্রতিটি সেই মানুষের জন্য, যারা অন্যায়ের শিকার হয়ে নীরবে সহ্য করতে বাধ্য হয়েছেন। সেবিকারা দেখিয়ে দিচ্ছেন, যে হাত অন্যের কষ্ট মুছে দেয়, সেই হাতই অন্যায়ের জাল ভাঙতে পারে। মানবিকতার মধ্যে যখন সাহস যোগ হয়, তখন তা অন্যায়কে প্রতিহত করার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে ওঠে। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের এই সেবিকাদের সংগ্রাম আমাদের সকলের জন্য এক বিরাট শিক্ষা। তারা কেবল নিজেদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য লড়ছেন না, তারা লড়ছেন মানবিকতা, ন্যায় এবং সঠিক পথের জন্য। তাদের সংগ্রাম কেবল হাসপাতালের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি পুরো সমাজকে একটি নতুন বার্তা দিচ্ছে—মানবিকতা কখনো অন্যায়ের সামনে নত হয় না, বরং তা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আলোর পথ দেখায়। এই আন্দোলন আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস লাগে, কিন্তু সেই সাহসের পেছনে থাকে মানবিকতার অদম্য শক্তি। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের সেবিকারা সেই শক্তির প্রতীক। তারা দেখিয়ে দিচ্ছেন, মানবিকতার আলো যতই ম্লান হয়ে যাক, তা কখনো সম্পূর্ণ নিভে যায় না। একজন সেবিকার হাত যেমন রোগীকে সুস্থ করে তোলে, তেমনই সেই হাত অন্যায়ের শাসনও ভেঙে ফেলতে পারে। আজ, তাদের এই সংগ্রাম কেবল একটি হাসপাতালের জন্য নয়, এটি একটি বৃহত্তর মানবিক আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি। মানবিকতা যখন অধিকার এবং ন্যায়ের জন্য লড়াই করে, তখন সেটি আর শুধু একটি সংজ্ঞায় সীমাবদ্ধ থাকে না—তা হয়ে ওঠে একটি মুক্তির প্রতীক, যা সমাজের প্রতিটি স্তরে আলো ছড়িয়ে দেয়। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের সেবিকারা সেই মুক্তির আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছেন, প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি প্রতিবাদে। এখন প্রশ্ন আসছে, আন্দোলনের শেষ কোথায়??? চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের সমাধান কোন পথে? চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের সেবক – সেবিকাদের সংগ্রাম একটি স্পষ্ট বার্তা নিয়ে এসেছে—নির্যাতন এবং অন্যায় সহ্য করা আর সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন ধরে সেবিকা এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর শাসনে নিপীড়িত হয়ে আসছেন। কিন্তু এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা এক নতুন বাস্তবতা তৈরির চেষ্টা করছেন, যেখানে মানবিকতা এবং ন্যায়ের প্রতীক হয়ে ওঠার লড়াই চলছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এই আন্দোলনের শেষ কোথায়? চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের সমাধান কোন পথে? প্রথমত, এই আন্দোলনের সফলতা নির্ভর করছে সচেতনতা এবং সংগঠনের উপর। সেবিকাদের অবশ্যই নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা তাদের অধিকার এবং দাবিগুলোকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সমাজের অন্যান্য অংশও তাদের পাশে এসে দাঁড়ানো জরুরি। জনগণের সমর্থন আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করবে এবং এটি সরকারের নজরে আসতে সাহায্য করবে। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কাছে তাঁদের দাবিগুলো স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে হবে। সেবা প্রদানের জন্য প্রতিটি কর্মীকে সুরক্ষা এবং মানবিক মর্যাদা দেওয়া জরুরি। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাকে জনস্বার্থে কাজ করতে বাধ্য করতে হবে। সেবিকাদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সরকারের দায়িত্ব।
তৃতীয়ত, এই আন্দোলনের ফলে যদি স্থানীয় ও জাতীয় সরকারের নজর কাড়তে পারে, তবে ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। সরকারের উচিত হবে এই আন্দোলনকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এটি শুধুমাত্র হাসপাতালের সেবা গুণগত মান বৃদ্ধি করবে না, বরং জনগণের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করবে। শেষে, আন্দোলনের ফলস্বরূপ যদি হাসপাতালে একটি নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়, তবে তা শুধুমাত্র জাহাঙ্গীর চৌধুরীর শাসনকে সমাপ্ত করবে না, বরং একটি নতুন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে যেখানে সেবিকা এবং ডাক্তারদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। হাসপাতালের কর্মচারীদের জন্য একটি শক্তিশালী, স্বতন্ত্র সংগঠন গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা নিজেদের সমস্যা তুলে ধরতে পারে এবং প্রয়োজন হলে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে। সংক্ষেপে, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের আন্দোলন মানবিকতার একটি নতুন অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছে। এর শেষ কোথায়, তা নির্ভর করে সেবিকাদের একতা, সমাজের সমর্থন, এবং সরকারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার ওপর। যখন এই তিনটি উপাদান সঠিকভাবে কাজ করবে, তখন কেবল হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি হবে না, বরং এটি সমাজে একটি নতুন পরিবর্তন আনবে। মানবিকতার এই যাত্রা একটি দীর্ঘ পথ, তবে এই সংগ্রামের প্রতিটি পদক্ষেপই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস জোগাবে, এবং অচিরেই একটি সুস্থ, সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে।
লেখক সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক ও মহাসচিব-চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।