বৃদ্ধটি রিকশা চালাচ্ছেন, তার শরীর কুঁজো হয়ে আছে, বয়সের ভারে বেঁকে গেছে, তবু থামছেন না। মাথার উপর আকাশ যেন কান্না করছে—বৃষ্টি ঝরছে, একফোঁটা-দুইফোঁটা, তারপর প্রবল বর্ষণ। আর বৃদ্ধ? তাঁর কাছে বৃষ্টি মানে কোনো স্নিগ্ধতা নয়, শুধুই বাধা। কিন্তু সেই বাধা পেরিয়েও জীবনের চাকাটা তিনি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, রিকশার চাকার মতো। কারণ থামার সুযোগ নেই, থামতে নেই। কোথায় আছে সেই ন্যায্যতা, সেই সহানুভূতি, যে এক বৃদ্ধ মানুষকে এই পরিণতিতে পৌঁছায় না? যে সমাজে কোটি কোটি টাকার লুটপাট হয়, অসংখ্য মানুষের সম্পদ জমা হয় শুধুমাত্র হাতে গোনা কিছু মানুষের ঘরে, সেখানে এই বৃদ্ধ কীভাবে সামান্য এক মুঠো ভাত জোগাড় করবেন? রাষ্ট্র, সমাজ—সবই যেন তার চোখের সামনে অস্পষ্ট হয়ে গেছে। তার যন্ত্রণা, তার ক্লান্তি, তার খালি পেটের জন্য কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি যেন ভেসে বেড়াচ্ছেন এক অনন্ত ক্লান্তির মাঝে, যেখানে কেউ নেই তাকে টেনে তুলতে।
আমাদের পৃথিবী এতো নির্মম কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তোলে। আমরা দেখছি, আমরা জানছি, কিন্তু আমরা কী করছি? সমাজে এই অসাম্যের যে গভীর ক্ষত, তা কি কোনো দিন নিরাময় হবে? মানবিকতার খাতিরে আমাদের উচিত এভাবে চেয়ে না থাকা। আমাদের চোখ যদি শুধুমাত্র সহানুভূতির দৃষ্টি নিয়ে বৃদ্ধটির দিকে চেয়ে থাকে, তবে তা যথেষ্ট নয়। আমাদের সমাজে এই অবিচার দূর করার, দুর্নীতির অবসান ঘটানোর যে তাগিদ, তা আমাদের হাতে রয়েছে। আমাদের কাজ হবে এইসব নির্জীব মানুষদের জীবনে আলো ফেলা। তাদের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব আমাদের সবার। বৃদ্ধের নুয়ে পড়া শরীরের এই ক্লান্তি আমাদের সভ্যতার ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। যতদিন না আমরা তাঁকে রাস্তায় থেকে তুলে নিয়ে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিতে পারি, ততদিন আমাদের মানবতা অপূর্ণ থেকে যাবে।