1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
কেশবপুরে প্রকাশ্যে যুবদল কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা! সবুজসহ তিনজন আটক, এলাকায় উত্তেজনা! শওকত আলম শওকত ও হাজী মোঃ আবু আকতার বোয়ালখালী বিএনপির অগ্রসৈনিক ওসি বাবুল আজাদের নেতৃত্বে থানার লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে চারবারের সেরা ওসি আফতাব উদ্দিন দিলরুবা খানম : বহুমাত্রিক প্রতিভায় দীপ্ত এক মানবিক শিল্পী সাংবাদিকতা নাকি ব্যবসা? পেশার পবিত্রতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ! প্রধান উপদেষ্টার বরাবর চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের স্মারকলিপি প্রদান সাংবাদিকের বিভ্রান্তিকর পরিচয় ব্যবহার: চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রতিবাদ বক্তা ও বক্তৃতা নিয়ে কিছু অপ্রিয় কথা ঢাকা সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুজন কারাগারে আত্মহত্যা

নিঃসঙ্গতার ছায়া

মো. কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৪

পর্ব-৪ঃ

শহরের ব্যস্ত রাস্তায় নেমে সূর্যের আলো স্নিগ্ধভাবে ঝরে পড়ছে, আর সেই সাথে ছড়াচ্ছে এক নিঃশব্দ আহ্বান-কথা দিয়ে বাঁধা নেই, কিন্তু তবুও বোঝা যায়। জোবায়েদার গল্প যেন আমাদের সামনে সেই আলোরই এক প্রতিফলন, যেখানে প্রতিটি বাক্যে সত্যের সন্ধান আর প্রতিটি ছত্রে দগ্ধ অনুভূতির ছোঁয়া। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র পুরুষ—সে সমাজের মুখোশ পরা, কিন্তু অবচেতনে নিজের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। এই গল্পে দেখা যায়, রাতের অন্ধকারে এক পুরুষের পা চুপিসারে পা ফেলে ঢোকে এমন এক দরজায়, যার কথা শুনলে তার সন্তানের মনে আঘাত লাগার কথা। বাইরে থেকে ফিরে সে বাবার আদর দিয়ে শিশুটির কপালে চুমো খায়, যেন সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তার হৃদয় যেন কালিমায় ঢাকা। এরপর সে স্ত্রীর পাশে শুয়ে বন্ধুদের চরিত্রহীনতার গল্প বলে, আর প্রতিটি কথায় যেন সে নিজেকে আরও বেশি সাধু প্রমাণের চেষ্টায় মত্ত। তারই মাঝে, স্ত্রীর প্রশান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন ওঠে—”মানুষ কেমন করে এমনটা করতে পারে?”
পুরুষটি অদ্ভুতভাবেই স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে বলে, “হুম, ঠিক তাই। মানুষের ভিতরে যখন অন্ধকারের মেঘ জমে, তখনই এমনটা হয়।” এদিকে দেয়ালের উপর এক টিকটিকি টিক টিক করে আওয়াজ তোলে—একটি সরল জীবের নিরীহ আহ্বান।
সেই পুরুষ, আরও এক রাতে গৃহকর্মীর দিকে লালসার দৃষ্টি ফেলে, অথচ তার পিতার মতো আচরণে গৃহকর্মীটি তৃপ্ত হয়। একদিন তাকে অল্প কিছু টাকা দিয়ে সে সুখী করে তোলে। কিন্তু রাতের গভীরে স্ত্রীর পাশ থেকে নিঃশব্দে উঠে গিয়ে সে মেয়েটির ওপর জোর খাটায়। পরদিন, যখন স্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কথা তোলে, পুরুষটি তখন তাকে সাবধান করে—”কাজের মেয়েদের তো বিশ্বাস নেই। সব কিছু ঠিক আছে কিনা, খেয়াল রেখো।”
এরপর অফিসের ট্যুরের অজুহাতে মহিলা সহকর্মীর সঙ্গে চলে যায় সমুদ্রের কাছে। বাড়ি ফেরার সময় পরিবারের জন্য উপহার কিনে ফিরলেও তার মনে জানে, বিশ্বাসের লুকিয়ে থাকা সেই সূক্ষ্ম সুতোটা সে নিজেই ছিঁড়ে ফেলেছে।
একদিন, একটি ফোন কল আসে—তারই কোনো পুরনো বন্ধুর কাছ থেকে। স্ত্রীটি ফোনটা ধরার পরই তার মনে সন্দেহের সঞ্চার হয়, আর সে বন্ধুকে নিয়ে স্ত্রীকে অভিযুক্ত করে বসে। বন্ধুর জন্যই তার স্ত্রীর উপর আনা মিথ্যে অভিযোগে সে নিজেই আরও কালিমায় ঢেকে যায়।
পুরুষটি বুঝতেই পারে না, নিজের প্রতিটি পদক্ষেপে, নিজের প্রতিটি লোভের মুহূর্তে সে ডুবে যাচ্ছে আরও গভীর অন্ধকারে। তবে, সব কিছু গোপন রাখা সম্ভব নয়। সে জানে না, তার এই অন্ধকারাচ্ছন্ন পথ সৃষ্টিকর্তার চোখে ধরা পড়েছে। প্রতিটি কাজের জন্য একদিন তাকে প্রতিদান দিতেই হবে।
হে পুরুষ! নিজের বিবেকের দিকে তাকাও। আলোকিত করো নিজেকে। নিজেকে আলোকিত করতে পারলেই, আলোকিত হবে তোমার পরিবার, সমাজ, এবং বৃহৎ পৃথিবী। তোমার দায়িত্ব অসীম, সেই দায়িত্ব তোমার হাতেই পালিত হোক সার্থকতার সাথে।
শীতের রাত। ঘরের কোণে বসে জোবায়েদা চুপচাপ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেই তার স্বামী ফিরেছে, চোখেমুখে ক্লান্তি আর অদ্ভুত এক উদাসীনতা। জোবায়েদা জানে, আজও সে কোথাও বাইরে সময় কাটিয়েছে—বাইরের এক নারীর সঙ্গে, তার স্ত্রীকে পিছনে ফেলে। যদিও, এই গল্পটি কেবল জোবায়েদার নয়; এটা প্রতিটি নারীর এক সুপ্ত কান্নার গল্প, যারা প্রতিনিয়ত নিজের ঘরের পুরুষের কাছে অবহেলিত আর অবিচারিত হয়।
জোবায়েদা নিজেই যেন এক আত্মার প্রতিচ্ছবি। সে জানে, তার মত আরও অনেক স্ত্রী আছে, যারা মেনে নেয় স্বামীর পরনারীর প্রতি আকর্ষণ, কেবল নিজের সংসার বাঁচানোর তাগিদে। তারা চুপচাপ থাকে, কারণ এই সমাজে তাদের দুঃখ শোনার মতো কেউ নেই। সমাজে তারা বুঝে, পুরুষের এই ধরনের আচরণ যেন স্বাভাবিক আর মেনে নেওয়ার মতোই কিছু।
একদিন জোবায়েদার স্বামী তাকে একটি অজুহাতে বাইরে যেতে বলে। ফিরে এসে বলে, বন্ধুর কোনো সমস্যার কারণে দেরি হয়েছে। জোবায়েদা প্রথমে বিশ্বাস করেছিল, কিন্তু কিছুদিন পরই তার কাছে বোঝা যায় সত্যটা ভিন্ন। তার স্বামী নিয়মিত অন্য নারীর কাছে যায়, আর ঘরে ফিরেই যেন সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার অভিনয় করে। জোবায়েদার কষ্ট বাড়তে থাকে, কিন্তু সে মুখ ফুটে কিছু বলে না। আর এই গল্পে একাকী কেবল জোবায়েদা নয়। সমাজে অসংখ্য নারী প্রতিনিয়ত একই যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তারা জানে, তাদের স্বামীরা ঘরের সুন্দরী বউকে অবহেলা করে, নিজের লুকানো প্রলোভনের পথে এগিয়ে চলে। তারা এই ভাবেই ধীরে ধীরে নিজেদের আত্মবিশ্বাস হারায়, নিজেদের মূল্যবোধ নষ্ট করে ফেলে। তারা প্রতিদিনই এভাবে প্রতারিত হয়, আর এ সমাজ তাদের জন্য নীরব থাকে। তারা চাইলেও কারও কাছে অভিযোগ করতে পারে না, কারণ তারা জানে, সমাজ কখনো তাদের কথা শুনবে না।
জোবায়েদা একদিন রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে, এ জীবন কি শুধু ত্যাগের? তার মতো সব নারীরা কি এভাবেই নির্যাতিত হয়ে যাবে? সে ভাবে, নারীরা কবে নিজের জন্য, নিজের সম্মানের জন্য দাঁড়াবে? কবে তারা মুখ ফুটে বলবে, “না, আমি এই অবিচার মেনে নেবো না!” হয়তো সে দিন আসবে, যখন নারীরা নিজেদের জন্য লড়বে, নিজেদের সম্মান বজায় রাখতে সংগ্রাম করবে। ততদিন পর্যন্ত জোবায়েদার মতো অনেকেই হয়তো চুপচাপ কাঁদবে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে গড়ে তুলবে এক নতুন শক্তি, যা সমাজকে জানিয়ে দেবে, নারীরা কেবল ঘরের নয়—তাদেরও আছে সাহসিকতা, সম্মান, আর সংগ্রামের অধিকার।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট