আমরা সুখে আছি। কাঁচা মরিচের দাম ১২০০ টাকা, ডিমের দাম ২০০ টাকা—এমন দাম নিয়ে কোনো চিন্তা নেই আমাদের। এসব নিয়ে হাহাকার না করে আমরা বরং বলি, “ডায়েটিং করছি!” খাওয়ার তেলও এত দামি যে, রান্নাবান্না বাদ দিয়েই দিয়েছি। মানুষজন যখন জানতে চায়, বলি, “স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার চেষ্টা করছি”—যেন এটাই আমাদের বেঁচে থাকার নতুন মন্ত্র! বিদ্যুৎ নেই? তাতে কী! তাতে তো খিদে কমে না, বরং কিছু বেশি করে খাওয়ার জন্য তাড়না জাগে। আর খিদের জ্বালায় কখনো কখনো মনে হয় সবকিছু খেয়ে ফেলি। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবখানেই মন চায় হাত চালাতে। কি দরকার এত কিছুর? পেটে যখন টান পড়ে, তখন আমাদের দৃষ্টিও তেমনই পরিবর্তিত হয়। আমরা যে ভালো আছি, তা দেখানোর মতো অনেক কিছু আছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো—মন্দির, মসজিদ, গির্জা—সবকিছুই ভেঙে ফেলতে পেরেছি আমরা। এমনকি মৃতদের কবরও রেহাই পাচ্ছে না। এতো জিনিস সামনে পেয়ে ভাঙার ধুম লেগে গেছে! মনে হয়, সবুজ পতাকার পরিবর্তে কালো রঙ লাগালে ভালো হয়। রঙের পরিবর্তন আনতে না পারলে তো এতো আন্দোলনের মানেই থাকে না, তাই না?জাতীয় সঙ্গীতেও পরিবর্তন দরকার। পুরোনো কালের গান, সেই কবি রবীন্দ্রনাথের লেখা, মুসলিম দেশে কি তার লেখা মানায়? আমাদের ধর্মে যেন নতুনত্ব আসুক, এমনটাও ভাবতে পারি। এখন থেকে আমাদের মাওলানারা পূজা মণ্ডপে গিয়ে গায়ত্রী মন্ত্রের পাশাপাশি হামদ ও নাথ গাইবে—ধর্মের মধ্যে এমন একতা আনাই জরুরি।
আরেকটা বিষয় আছে, আয়না ঘরের কথা। এক সময়ের স্বৈরাচারী দলের মতো আয়না ঘর বানানোর চেষ্টায় আছি। কিন্তু এই কাজে তেমন অগ্রগতি নেই। আয়না ঘর বানানোটা সত্যিই জরুরি, কারণ সেই আয়নায় নিজেদের মুখটা দেখতে পাবো আমরা—কেমন করে পেছনে পড়ে গেছি, কেমন করে নিজেকে চিনতে ভুলে গেছি।
এদিকে আরও এক বিস্ময়কর বিষয় হলো ছাব্বিশ লাখ ভারতীয় কর্মচারীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। কীভাবে তারা হারিয়ে গেল, কোথায় তারা গেল—তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না! অবাক কান্ড! তারা কি মাটির নিচে হারিয়ে গেল নাকি আমাদের অজান্তে আকাশে উড়ে চলে গেল? এসব কল্পনাও মাঝে মাঝে আমাদের মাতিয়ে তোলে। সব মিলিয়ে, আমাদের অবস্থাও ভালো, আমাদের দেশও ভালো! মাঝে মাঝে মনে হয়, সবুজ পতাকা যদি কালো হয়, তবে আরও ভালো হবে। পরিবর্তন চাই, সব জায়গায় পরিবর্তন দরকার। আমরা ভালই আছি, কারণ এত সব চিন্তার মধ্যে দিন কাটিয়ে আমরা হাসি-ঠাট্টা করে বলে দিতে পারি—“আমাদের সবই ঠিক আছে, আর কিসের প্রয়োজন!”
আমাদের জীবনের সবকিছুই যেন এখন ঠাট্টা-মজার একটা রূপ নিয়েছে। কোথাও হয়তো এর পেছনে গভীর যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে, কোথাও আবার অস্বস্তি। কিন্তু দিনশেষে আমরাই ভালো আছি—এই বোধটাই আমাদের সবচেয়ে বড় ঢাল।”পরিবর্তনের ছোঁয়ায় অনিশ্চিত যাত্রা”
সবকিছুতে আজকাল পরিবর্তনের প্রভাব, যেন এক অদ্ভুত দোলাচল। দাম বেড়ে গেছে প্রতিটি জিনিসের, মানুষ নিজের অজান্তেই সংকুচিত হচ্ছে। বলি, শরীর ঠিক রাখছি, কিন্তু ভিতরে ভিতরে খিদে আঘাত করছে প্রতিদিন।
জাতীয় প্রতীকগুলোও যেন নতুন রঙের দাবি তুলছে। সবুজ পতাকা? ভাবছি, সাদাকালো হলে কেমন দেখায়! পুরনো কিছুই আর ভালো লাগে না, জাতীয় গানের শব্দও যেন অচেনা মনে হয় আজকাল। আর সংস্কৃতির মেরুদণ্ডগুলোও মুছে ফেলা হচ্ছে নির্বিকারভাবে— মন্দির, মসজিদ, কবর।
জীবন এগিয়ে যাচ্ছে, সবাই চুপচাপ। ভবিষ্যতটা যেন কুয়াশায় ঢাকা। তবুও মুখে হাসি রেখে সবাই বলে, ভালো আছি। এই ভাবেই পরিবর্তনের জোয়ারে ভেসে চলছি, কেউ জানে না কোথায় গিয়ে পৌঁছাবো।
পরিশেষে বলবো তবুও আমরা ভালো আছি।