চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস হাসপাতালের জীবন সদস্য, ডাক্তার, কর্মকর্তা, নার্স, এবং সাধারণ কর্মচারিদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অবশেষে সফলতার দিকে নিয়ে গেল। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের পর, সরকার অবশেষে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে, যা অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত কমিটি বাতিল এবং ভুয়া সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনিয়তা রয়েছে!
অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল বেশ কিছু বছর আগে, যখন হাসপাতালে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের কর্মীরা ও চিকিৎসকরা এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে আন্দোলন নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। এতে করে আন্দোলনটি একটি জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়।
গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস হাসপাতাল নানা ধরনের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছিল। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারিদের অভিযোগ ছিল যে, জাহাঙ্গীর চৌধুরী নেতৃত্বাধীন কমিটি অবৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তাঁদের দাবি ছিল, কমিটির কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও Daily Banner এর চট্যগ্রাম ব্যুরো’র মাধ্যমে আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরাসহ বিভিন্ন টেলিভিশন ও সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। সাংবাদিক হিসেবে আমাদের দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও Daily Banner এর যুগ্ম সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন, যা আন্দোলনের প্রতি জনগণের আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে।
এই আন্দোলনে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিশেষ করে দৈনিক ভোরের আওয়াজ এবং The Daily Banner ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জনগণের সামনে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। গণমাধ্যমের এই উদ্যোগে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, এবং আন্দোলনটিকে আরো শক্তিশালী করে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম এবং সিভিল সার্জন ডাঃ জাহাঙ্গীর আলমের সরাসরি হস্তক্ষেপ এই আন্দোলনের সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাঁদের নেতৃত্বে সরকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা হাসপাতালের পরিচালনায় সহায়ক হবে।
চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও Daily Banner জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, সিভিল সার্জন ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম, এবং সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। তাঁদের সহায়তা ও সঠিক সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই পদক্ষেপ চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস হাসপাতালের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও আইনানুগ ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
হাসপাতালের নিরাপত্তা কমিটি গঠন
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দপ্তর থেকে প্রাপ্ত প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস হাসপাতালের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং ১৩৬৩/২০২০ অনুযায়ী, হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের সদস্য, ডাক্তার এবং কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কমিটি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
কমিটির সদস্যদের নিম্নলিখিত পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে:
১. অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম – আহ্বায়ক
২. পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এর প্রতিনিধি – সদস্য
৩. সিভিল সার্জন, চট্টগ্রাম এর প্রতিনিধি – সদস্য
৪. ৩০ এপিবিএন ব্যাটালিয়ন, হালিশহর সেনানিবাস এর প্রতিনিধি – সদস্য
৫. উপ-পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম – সদস্য-সচিব
এই কমিটি আগামী ৪৫ (পঁইতাল্লিশ) দিন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস হাসপাতালের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়োজনবোধে, কমিটি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় সাধন করবে। এই নির্দেশনার অনুলিপি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন, ৩০ এপিবিএন ব্যাটালিয়ন, হালিশহর সেনানিবাস, চট্টগ্রাম।
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
এই কমিটির গঠন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি উদ্যোগ, যা হাসপাতালের কর্ম পরিবেশকে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমরা আশা করছি, এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় হাসপাতালের সেবা প্রদান ও ব্যবস্থাপনা আরও সুশৃঙ্খল ও রোগীবান্ধব হবে।