আজকের লেখাটি কিছু জানার জন্য লেখতে বসলাম- আমাদের প্রতিটি মানুষের হাতে মোবাইল রয়েছে, সেই মোবাইলে অনেক অজানা কাহিনি রয়েছে আমরা তাতে অনেক কিছুই জানিনা- আমি সেই কিছু অজনা কথা জানাবার জন্য আপনাদের সামনে এসেছি- চলুন জেনেনি-
বাংলাদেশের মোবাইল টেলিকম খাতে বিদেশি কোম্পানির আধিপত্য স্পষ্ট। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বৃহত্তর অংশের মোবাইল বাজার নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। কিন্তু এ সব কিছুর মাঝেই আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটকের স্থান অনেকটা পেছনে। সরকারি মালিকানাধীন এই কোম্পানিটি কীভাবে বিদেশি প্রতিযোগীদের চাপে রয়েছে এবং তার উন্নয়নের সম্ভাবনা কী তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
অন্যদিকে, বিদেশি মোবাইল অপারেটররা কি ভাবে তাদের মুনাফা নিজেদের দেশে নিয়ে যায়, তা তদারকি করার প্রয়োজন আছে। দেশপ্রেমের স্বার্থে, টেলিটককে উন্নত এবং প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে তোলার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তা এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশে বর্তমানে চারটি মোবাইল কোম্পানি রয়েছে: গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস, এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটক বাংলাদেশ।
মোবাইল কোম্পানির মালিকানা:
১, গ্রামীণফোন – এর মূল মালিকানায় রয়েছে নরওয়ের টেলিনর গ্রুপ।
২, রবি আজিয়াটা – মালয়েশিয়ার আজিয়াটা গ্রুপের মালিকানাধীন।
৩,বাংলালিংক – নেদারল্যান্ডসের ভিওন গ্রুপের অধীনস্থ।৪, টেলিটক বাংলাদেশ – একমাত্র দেশীয় কোম্পানি, যা সরকারি মালিকানাধীন।
মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা:বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৯ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারী রয়েছে, যা দেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশকে মোবাইল যোগাযোগের আওতায় এনেছে।
সরকারের আয়:
বাংলাদেশ সরকার মোবাইল কোম্পানিগুলো থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায় করে। এগুলোতে স্পেকট্রাম ফি, লাইসেন্স ফি এবং অন্যান্য সেবার উপর শুল্কের মাধ্যমে আয় হয়।বিদেশি বিনিয়োগ ও মুনাফা প্রেরণ:
তিনটি বিদেশি কোম্পানির মালিকানায় থাকা গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংক তাদের আয়ের একটি বড় অংশ মুনাফা হিসেবে তাদের মাতৃদেশে প্রেরণ করে। তবে এই মুনাফা প্রেরণের পরিমাণ নির্ভর করে বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া এবং শর্তের উপর। মোবাইল অপারেটরদের কার্যক্রমের অনুমতি:
এই মোবাইল কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) থেকে অনুমতি প্রদান করা হয় এবং তাদের কার্যক্রম সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
টেলিটক বাংলাদেশ হলো বাংলাদেশের একমাত্র দেশীয় মোবাইল অপারেটর, যা পুরোপুরি সরকারি মালিকানাধীন। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি ৪জি নেটওয়ার্কসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করছে, তবে বিদেশে তাদের কোনো কোম্পানি বা ব্যবসা কার্যক্রম নেই।
টেলিটকের মূল লক্ষ্য ছিল গ্রামীণ এলাকায় কম খরচে টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করা, যেখানে বেসরকারি অপারেটররা প্রথমে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে আগ্রহ দেখায়নি। তবে প্রতিযোগিতার কারণে টেলিটক গ্রামীণফোন, রবি, এবং বাংলালিংকের তুলনায় ব্যবহার কারীর সংখ্যা ও সেবার মানের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। টেলিটকের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬.৪৬ মিলিয়ন, যা অন্যান্য কোম্পানির তুলনায় অনেক কম।
সরকারের সহযোগিতায় টেলিটক বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে, যেমন, জাতীয় ই-গভর্নমেন্ট প্রকল্পগুলিতে অংশগ্রহণ, এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী ইন্টারনেট প্যাকেজ প্রদান।
তবে টেলিটক এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বা বিদেশি বাজারে প্রবেশ করেনি, এবং এর সমস্ত কার্যক্রম বাংলাদেশের ভেতরে সীমাবদ্ধ। টেলিটকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ৫জি প্রযুক্তি চালু করা।
গ্রামীণ এলাকায় আরও নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা।
ব্যবহারকারীদের সেবার মান বৃদ্ধি করা। তবে প্রাইভেট অপারেটরদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য টেলিটককে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
মোবাইল কোম্পানির অনুমোদন ও সময়কাল: বাংলাদেশে মোবাইল ফোন অপারেটরদের অনুমোদনের প্রক্রিয়া বিভিন্ন সরকারের সময়কালে সম্পন্ন হয়েছে:
১,গ্রামীণফোন – এটি বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর, যা ১৯৯৭ সালে অনুমোদিত হয়েছিল। এর অনুমোদন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। মূলত এটি নরওয়ের টেলিনর গ্রুপ এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়।
২, রবি আজিয়াটা – পূর্বে একটেল নামে পরিচিত ছিল, পরে এটি ২০০৮ সালে রবি আজিয়াটা নামে পরিবর্তিত হয়। একটেল ১৯৯৭ সালে অনুমোদন পায়, তখনও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল।
৩, বাংলালিংক – এটি ২০০৫ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। বাংলালিংকের অনুমোদন বিএনপি সরকারের সময় হয়েছিল। এটি মূলত মিসরের ওরাসকম টেলিকমের অধীনে ছিল, যা পরে নেদারল্যান্ডসের ভিওন গ্রুপের মালিকানায় আসে।
৪,টেলিটক বাংলাদেশ – এটি ২০০৪ সালে চালু হয় এবং এটি পুরোপুরি সরকারি মালিকানাধীন। টেলিটক বিএনপি সরকারের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে মোবাইল ব্যবহারের ধরন: সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় গ্রামীণফোন, রবি বা বাংলালিংকের মতো বেসরকারি কোম্পানির সিম ব্যবহৃত হয়। এর কারণগুলো হতে পারে:
১,কভারেজ এবং সেবার মান: টেলিটক এখনও পর্যন্ত দেশের প্রতিটি অঞ্চলে তার নেটওয়ার্ক যথেষ্ট বিস্তৃত করতে পারেনি। বিশেষ করে গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিটকের কভারেজ এবং ইন্টারনেটের গতি অনেক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। এর ফলে সরকারি অফিস, বিশেষ করে যারা সারা দেশে কাজ করে, তারা সেবা মান বিবেচনা করে অন্যান্য অপারেটরের সেবা গ্রহণ করে। ২, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: টেলিটকের ৪জি পরিষেবার বিস্তৃতি এবং গুণগত মান অন্যান্য অপারেটরদের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। অধিকাংশ সরকারি দপ্তর বা কর্মীরা অধিক কার্যকর এবং নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্কের জন্য অন্যান্য অপারেটরের সেবা ব্যবহার করেন।
৩,বাণিজ্যিক চুক্তি: অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের চুক্তি রয়েছে, যার ফলে তারা এই অপারেটরদের সেবা পেতে উৎসাহিত হয়।
রাষ্ট্রীয় মোবাইল টেলিটক ব্যবহার না করার কারণ:
সরকারি পর্যায়ে টেলিটকের ব্যবহারের অভাবের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:
১, সেবার মান: অন্যান্য অপারেটরদের তুলনায় টেলিটকের সেবার মান কম হওয়ায় অনেকেই এটি ব্যবহার করতে চান না। সরকার নিজেও দেশের সকল অফিস এবং দপ্তরে উচ্চমানের টেলিযোগাযোগ সুবিধা দিতে চাইলে অন্যান্য অপারেটরদের উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়।
২, বাজার প্রতিযোগিতা: টেলিটক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে সমানভাবে প্রতিযোগিতা করতে পারছে না। এর ফলে এটি নিজস্ব বাজারে নিজের স্থান ধরে রাখতে অসুবিধায় পড়ছে।
৩,বিনিয়োগের অভাব: টেলিটকের আরও উন্নত হতে হলে বড় মাপের বিনিয়োগ প্রয়োজন। তবে এখন পর্যন্ত সে ধরণের সরকারি বা বেসরকারি বিনিয়োগ দেখা যায়নি, যা এর কার্যক্রমকে উন্নত করতে পারে।
৪/মোবাইল অপারেটরদের স্যাটেলাইট ও টাওয়ার ব্যবহারের পদ্ধতি:
বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানিগুলো সাধারণত নিজেদের সেবা প্রদানের জন্য ভূ-ভিত্তিক টাওয়ার বা বেস স্টেশন ব্যবহার করে। এসব টাওয়ারগুলি মোবাইল নেটওয়ার্কের সংকেত গ্রাহকের মোবাইল ফোনে পাঠায় এবং গ্রহণ করে। তবে সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিচালনা করা হয় না।১ স্যাটেলাইট ব্যবহার:মোবাইল অপারেটরদের স্যাটেলাইট সরাসরি ব্যবহার না হলেও, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং দূরবর্তী এলাকা থেকে সংযোগ স্থাপনের জন্য স্যাটেলাইট লিঙ্ক দরকার হতে পারে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিজস্ব বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে মোবাইল নেটওয়ার্কের সরাসরি অংশ নয়। মোবাইল কোম্পানিগুলো ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (IGW) এর মাধ্যমে স্যাটেলাইট লিঙ্ক গ্রহণ করতে পারে।
২, টাওয়ার ব্যবহারের ধরণ:
বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটররা তাদের নিজস্ব টাওয়ার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। তাছাড়া, কিছু অপারেটর যৌথভাবে টাওয়ার শেয়ারিং-এর মাধ্যমে খরচ কমানোর চেষ্টা করে। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটক প্রায়ই নিজেদের টাওয়ার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, তবে অন্যদের টাওয়ার শেয়ার করাও একটি প্রচলিত পদ্ধতি।
টিএন্ডটি বা টেলিভিশন টাওয়ার ব্যবহার: মোবাইল কোম্পানিগুলো সাধারণত তাদের টেলিযোগাযোগ সেবা চালানোর জন্য টিএন্ডটি বা বাংলাদেশ টেলিভিশনের টাওয়ার ব্যবহার করে না। তাদের টাওয়ার আলাদা এবং সাধারণত সেলুলার নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা।
গ্রামীণফোনে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের শেয়ার:ড. মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ।
ফোনের প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার হলেও, বর্তমানে তার কোনো শেয়ার নেই। গ্রামীণফোন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল গ্রামীণ টেলিকম এবং নরওয়ের টেলিনর গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে।
গ্রামীণ টেলিকমের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শুরুতে ড. ইউনুস এর সাথে যুক্ত ছিলেন, তবে পরবর্তীতে তিনি তার শেয়ারের একটি অংশ বিক্রি করেছেন। টেলিনর বর্তমানে গ্রামীণফোনের ৫৫.৮% শেয়ারের মালিক, এবং গ্রামীণ টেলিকমের অধীনে প্রায় ৩৪.২% শেয়ার রয়ে গেছে, তবে ইউনুস এর ব্যক্তিগত শেয়ারের হিসাব স্পষ্টভাবে এখন আর নেই। গ্রামীণ টেলিকম এখনো শেয়ারহোল্ডার থাকলেও, ড. ইউনুসের সরাসরি কোনো অংশীদারিত্ব বা শেয়ার নেই বলে ধারণা করা হয়।
৫/বিদেশি মোবাইল কোম্পানির আয় এবং বিনিয়োগ নিয়ম: বাংলাদেশে কাজ করা বিদেশি মোবাইল অপারেটরদের আয় এবং সেই আয়ের পুনর্বিনিয়োগ বা প্রস্থান নিয়ে আইনগত কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে হলে সরকারের অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন শর্ত মেনে চলতে হয়। এগুলো নির্ধারিত হয় বাংলাদেশ ব্যাংক, বিনিয়োগ বোর্ড (BIDA), এবং সংশ্লিষ্ট আইন কাঠামোর অধীনে।
১. বিদেশি কোম্পানির আয় দেশ থেকে প্রস্থান:
বৈধভাবে বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের আয়ের অংশ বিদেশে নিয়ে যেতে পারে, তবে তা কিছু আইনানুগ শর্তের অধীন হয়। এই টাকা প্রেরণের প্রক্রিয়াটি সাধারণত “প্রফিট রেপ্যাট্রিয়েশন” নামে পরিচিত এবং এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধান অনুযায়ী সম্পন্ন হয়।
বাংলাদেশে কাজ করা বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের আয়কৃত মুনাফা বিদেশে নিয়ে যেতে পারে, তবে এর জন্য আয়কর দিতে হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে সব ধরনের মুনাফা প্রেরণের জন্য কোম্পানিগুলোকে বার্ষিক ট্যাক্স রিটার্ন ও অন্যান্য নথিপত্র দাখিল করতে হয়।
২. পুনর্বিনিয়োগের নিয়ম:আইন অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের আয়কৃত মুনাফার কিছু অংশ পুনরায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সরকার বিভিন্ন কর-ছাড় ও সুবিধা প্রদান করে। তবে এই পুনর্বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক নয়, এটি কোম্পানির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। অনেক সময় মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের জন্য পুনর্বিনিয়োগ করে থাকে।
৩. বাংলাদেশে সামাজিক উন্নয়ন ও চ্যারিটি কর্মসূচিতে ব্যয় করার নিয়ম:
বাংলাদেশে কাজ করা কোনো বিদেশি কোম্পানির জন্য আইনত বাধ্যতামূলক নয় যে তাদের আয়কৃত অর্থ দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বা চ্যারিটিতে ব্যয় করতে হবে। তবে কিছু কোম্পানি CSR (Corporate Social Responsibility) কর্মসূচির অধীনে সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রামীণফোন বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশগত কর্মসূচিতে অংশ নেয়। কিন্তু এটি পুরোপুরি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত এবং আইন দ্বারা নির্ধারিত নয়। ৪. বৈধতা ও নীতিমালা:
আয় বিদেশে প্রেরণ আইনত বৈধ, তবে এটি সরকারের নির্ধারিত নিয়ম ও শর্ত মেনে চলতে হয়। প্রতিটি মোবাইল কোম্পানি বাংলাদেশে কাজ করার সময় স্থানীয় কর ও ফি পরিশোধ করতে বাধ্য, এবং তাদের মুনাফা প্রেরণ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণভাবে নিয়মের মধ্যে হতে হবে।
বিদেশি মোবাইল কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফার একটি বড় অংশ বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে তাদের নিজ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারে, তবে তাদের কিছু নীতিমালা ও নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। পুনর্বিনিয়োগ ও সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করার বিষয়টি নির্ভর করে কোম্পানির ইচ্ছার উপর, এবং বাংলাদেশ সরকার আইনি কাঠামোর মাধ্যমে এসব কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
৬/অতিরিক্ত বিল এবং গ্রাহকের কাছ থেকে কৌশলে টাকা কেটে নেওয়া:
বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরদের বিলিং এবং চার্জিং সিস্টেম নিয়ে তদারকির জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) দায়িত্বপ্রাপ্ত। গ্রাহকরা যদি মনে করেন যে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা কাটা হচ্ছে বা কোনো বিলিং সংক্রান্ত অনিয়ম ঘটছে, তাহলে তারা BTRC-তে অভিযোগ করতে পারেন। BTRC নিয়মিত মোবাইল অপারেটরদের মনিটরিং করে এবং এই ধরনের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে। যদি কোনো অপারেটর অতিরিক্ত বিলিং বা কৌশলে টাকা কাটার ঘটনা ঘটায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা বা অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিদেশি কোম্পানি বাতিল করে শুধুমাত্র টেলিটক রাখার বিষয়ে: বাজার থেকে সব বিদেশি মোবাইল কোম্পানিকে বাতিল করা এবং শুধুমাত্র দেশীয় টেলিটক রাখার বিষয়টি বাস্তবায়ন করা খুব কঠিন। কারণগুলো হলো:১ অর্থনৈতিক চাপ: বিদেশি মোবাইল কোম্পানিগুলো দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখে। তারা বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। তাদের বাতিল করা হলে দেশের টেলিকম খাতের উপর বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে।
২,প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: টেলিটক অন্যান্য অপারেটরদের তুলনায় এখনও পিছিয়ে রয়েছে। এর নেটওয়ার্ক কাভারেজ ও সেবার মান আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছায়নি। তাই একমাত্র টেলিটককে রাখার মাধ্যমে দেশের সকল মোবাইল ব্যবহারকারীর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না, যদি না টেলিটককে উল্লেখযোগ্যভাবে আধুনিকায়ন করা হয়।
টেলিটককে আধুনিক করে সবার হাতে পৌঁছানোর করণীয়:১,বিনিয়োগ বৃদ্ধি: টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নয়নের জন্য সরকারের তরফ থেকে বৃহৎ পরিমাণে বিনিয়োগ প্রয়োজন। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও টেলিটকের সেবা পৌঁছানো দরকার।
২,প্রযুক্তি উন্নয়ন: টেলিটকের ৪জি পরিষেবার বিস্তৃতি এবং ৫জি প্রযুক্তির প্রবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য উন্নত ও দ্রুত ইন্টারনেট সেবা দিতে হবে।
৩, সাশ্রয়ী প্যাকেজ: টেলিটক সাশ্রয়ী মূল্যে কল রেট এবং ইন্টারনেট প্যাকেজ সরবরাহ করে গ্রাহকদের আকর্ষিত করতে পারে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য সাশ্রয়ী ইন্টারনেট প্যাকেজ ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে, যা আরও সম্প্রসারিত করা দরকার।
৪, উন্নত কাস্টমার সেবা: টেলিটকের গ্রাহক সেবার মান উন্নত করতে হবে। কল ড্রপ, নেটওয়ার্ক সমস্যা ইত্যাদি দ্রুত সমাধানের জন্য দক্ষ কাস্টমার সাপোর্ট টিম তৈরি করা জরুরি। ৫, ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং: টেলিটকের ব্র্যান্ডিং এবং প্রচারমূলক কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে হবে। সঠিক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে টেলিটকের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি সম্ভব। অন্য দেশের মোবাইল কোম্পানির উদাহরণ: বিশ্বব্যাপী অনেক দেশেই বিদেশি মোবাইল অপারেটররা কাজ করছে। উদাহরণস্বরূপ:
ভারত: ভারতের মোবাইল বাজারে অনেক বিদেশি অপারেটর কাজ করে, যেমন ভোডাফোন। ভোডাফোন ভারতের একটি প্রধান মোবাইল অপারেটর, যদিও এখন এটি ভোডাফোন আইডিয়া নামে পরিচিত।নাইজেরিয়া: নাইজেরিয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার এমটিএন (MTN) এবং ভারতের এয়ারটেল মোবাইল অপারেটর হিসেবে কাজ করছে
সব বিদেশি মোবাইল অপারেটর বাতিল করা এবং শুধু টেলিটককে রাখার বাস্তবিকতা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তবে টেলিটককে আধুনিকায়ন করে সাশ্রয়ী এবং উন্নত সেবা দেওয়ার মাধ্যমে একে জনপ্রিয় করা সম্ভব। এজন্য টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সঠিক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো দরকার।
লেখকঃ সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক।