চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস সমিতিতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে কিছু কথা। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে থাকা এই সভাপতির বিরুদ্ধে সমিতির সদস্যদের অভিযোগ, তিনি সমিতির অভ্যন্তরে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে সমিতির তহবিলের অপব্যবহার করেছেন। বিশেষত, তার সভাপতিত্বাধীন কমিটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এই কমিটি অবৈধভাবে গঠিত, যা সমিতির বিধিবিধানের পরিপন্থী। যদিও তার সভাপতির পদ অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, তিনি আইনের তোয়াক্কা না করেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সূত্রমতে, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরী তার ঘনিষ্ঠদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছেন, যা স্বজনপ্রীতির এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাছাড়া, সমিতির কার্যক্রম পরিচালনায় আর্থিক স্বচ্ছতার অভাব এবং তহবিলের অপচয়ের অভিযোগও উঠেছে। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিস সমিতির একাধিক সদস্য তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এবং তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।এই বিষয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে অভিযোগকারীরা বলছেন, সমিতির স্বার্থ রক্ষার্থে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। ডায়াবেটিস সমিতির নিয়ে বিস্তারিত সংবাদ উপস্থাপন করছি –
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সাম্প্রতিক
পরিস্থিতি নিয়ে যে জটিলতা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা ক্রমশই গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য ছিল ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, কিন্তু বর্তমানে সমিতির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার অভাব এবং দুর্নীতির জালে প্রতিষ্ঠানটি তার নৈতিক আদর্শ থেকে সরে এসেছে। সমিতির পরিচালনা ও আইনগত জটিলতা: ২৫ মার্চ, ২০২৩ তারিখে সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক আদেশের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির তৎকালীন কার্যনির্বাহী কমিটিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার অভাব এবং গুরুতর অভিযোগ, যা দীর্ঘদিন ধরে সমিতির কার্যক্রমকে প্রভাবিত করছিল। এরপর মোহাম্মদ গৌসুল আলমকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যার প্রধান দায়িত্ব ছিল একটি নতুন কার্যকরী কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন করা। তবে, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি আদালতে চলমান রিট মামলার (নম্বর ১৬৩১/২০২৩) পরিপন্থী, যা নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অবৈধ কার্যক্রম ও আদালতের হস্তক্ষেপ: হাইকোর্টে চলমান রিট মামলায় স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যে, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজন করা যাবে না। আদালতের আদেশ অমান্য করে যদি কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়, তবে তা আদালতের আদেশের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে। এই পরিস্থিতিতে সমিতির বর্তমান কর্মকর্তাদের যে ভূমিকা, তা অত্যন্ত সন্দেহজনক এবং তাদের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতি ও আর্থিক অপব্যবহারের অভিযোগ: সমিতির সভাপতি প্রফেসর জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে সমিতির অর্থ আত্মসাৎ করছেন এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বেআইনি ভাবে নিয়োগ প্রদান করেছেন। তার কার্যক্রমে সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে, এবং সাধারণ জনগণের আস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ:
১. গাড়ি কেনার টাকা আত্মসাৎ: ২০১৫ সালে সমিতির ফান্ড থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার জন্য বেআইনি ভাবে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, যা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
২. আজীবন সদস্যপদ দিয়ে টাকা আত্মসাৎ: ২০০৯ সালে নির্বাচন উপলক্ষে ফরম বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার আয় হলেও মাত্র ৩০ হাজার টাকা জমা হয়েছে। এছাড়া, নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা আয়ের হিসাব দেখানো হলেও এটির সঠিকতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
৩. সরকারি অনুদানের আত্মসাৎ: ২০১৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আসা সরকারি অনুদান অবৈধভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতি সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করছে।
৪. প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ: এবি ব্যাংক লিমিটেড থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা বেআইনিভাবে উত্তোলন করে কমার্স ব্যাংকে ব্যক্তিগত ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। ৫. রোটারি ক্লাব নির্বাচনে ফান্ডের অপব্যবহার: ২০১৯ ও ২০২০ সালে রোটারি ক্লাবের নির্বাচনে হাসপাতালের ফান্ড থেকে প্রায় ২.৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যা এখনও ফেরত দেওয়া হয়নি।
৬. অবৈধ ভবন নির্মাণ: সিডিএর অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে সাততলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে, যা আইনগত জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
৭. স্বজনপ্রীতি ও বেআইনি নিয়োগ: প্রফেসর জাহাঙ্গীর চৌধুরী ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনকে নিয়োগ দিয়েছেন, যা সমিতির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নষ্ট করেছে।
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ: এই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে, দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। একই সাথে, সমিতির সমস্ত আর্থিক লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ অডিট করা উচিত, যাতে অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমিতির স্বচ্ছতা ও সুনাম পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির এই দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নয়, এটি পুরো সমাজের স্বার্থের উপর আঘাত। এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে হাজার হাজার ডায়াবেটিক রোগী সেবা পেয়ে থাকেন, এবং এর সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি তার মুল্যবোধে ফিরে আসতে পারে। আগামীর জন্য আশা: সকলের সহযোগিতায় এই পরিস্থিতি সমাধান করা সম্ভব, এবং আমরা আশা করি, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতি ভবিষ্যতে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে। সমাজের সাধারণ মানুষের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি একটি আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠার সময় থেকে একটি জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা প্রদান এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, যখন নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও ক্ষমতার লোভ কাজ করতে শুরু করল, তখন প্রতিষ্ঠানটি তার মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসে। এর ফলে দুর্নীতি ও অপব্যবহার প্রতিষ্ঠানের শিকড়ে ঢুকে পড়ে, যা সাধারণ মানুষের সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয়।
দুর্নীতির ধরন ও অর্থনৈতিক ক্ষতি, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির দুর্নীতি কেবল নেতৃত্বের ব্যক্তিগত স্বার্থে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সাথে আর্থিক অনিয়ম, ঘুষ প্রদান, ভুয়া বিল তৈরি এবং হাসপাতালের সরঞ্জাম ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতি জড়িত। বিভিন্ন রিপোর্ট ও তদন্তে উঠে এসেছে, বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে, যা সাধারণ রোগীদের সেবার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের মান এবং সঠিক সময়ে সরবরাহের অভাবে রোগীরা তাদের প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা চিকিৎসার মানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
জনগণের মনোভাব ও প্রত্যাশা-একটি দীর্ঘমেয়াদি দুর্নীতি যখন কোনো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ঘটে, তখন জনমনে হতাশা তৈরি হয়। ডায়াবেটিক রোগীরা দীর্ঘদিন ধরে এই সমিতির উপর নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু দুর্নীতির কারণে তাদের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে বাধ্য হয়েছে বেসরকারি বা অন্যান্য বিকল্প প্রতিষ্ঠানে যেতে, যা তাদের জন্য আর্থিকভাবে অসহনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা হলো, এই দুর্নীতির সমাধান দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে নেওয়া হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি আগের মতো সেবা মূলক কার্যক্রমে ফিরে আসবে। তারা চান নেতৃত্ব পরিবর্তন এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থা গঠনের মাধ্যমে সমিতির পুরোনো গৌরব পুনরুদ্ধার হোক। নেতৃত্বের পরিবর্তন ও নতুন রূপান্তরের দাবি- চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির বর্তমান অবস্থার আলোকে সর্বাধিক জরুরি পদক্ষেপ হলো, দুর্নীতিপরায়ণ নেতৃত্বকে অবিলম্বে অপসারণ করা এবং নতুন, যোগ্য ও সেবামুখী নেতৃত্বের অধীনে প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন। এর সাথে সাথে সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে। নতুন বোর্ড গঠনের মাধ্যমে হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবার কার্যক্রমকে স্বচ্ছ এবং জনকল্যাণ মূলক করতে হবে, যাতে রোগীদের প্রতি যথাযথ সেবা প্রদান অব্যাহত থাকে এবং তাদের আস্থা পুনর্বহাল হয়।
আইনি ব্যবস্থা ও শাস্তি: দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যারা এই ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তাদের যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই আইনি প্রক্রিয়া যত দ্রুত এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে, তত দ্রুত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির কলঙ্ক মোচন করা সম্ভব হবে। প্রতিষ্ঠানের যারা অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তাদের কাছ থেকে সেই অর্থ ফেরত আনা এবং প্রয়োজনীয় শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের দুর্নীতি করার সাহস না পায়।
মাধ্যমিক ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব- এই দুর্নীতির ফলে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির উপর শুধু আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রভাব পড়েনি, বরং দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব হিসেবে দেখা দেবে জনসাধারণের আস্থার সংকট। একটি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য রোগীদের আস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের সঠিক সেবা প্রদান অপরিহার্য। দীর্ঘদিনের দুর্নীতি সেই আস্থাকে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা দ্রুত পুনর্গঠন সম্ভব নয়। এছাড়া রোগীদের চিকিৎসা খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা সঠিক সময়ে সেবা না পাওয়ায় তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও পুনরুদ্ধার-চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির ভবিষ্যত পুনর্গঠনে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই পরিকল্পনায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ, স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা, রোগীদের সেবা ব্যবস্থার উন্নতি, এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার সুশাসন অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। একমাত্র এভাবেই প্রতিষ্ঠানটির গৌরবময় অতীত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব এবং রোগীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আরো আধুনিক ও উন্নতমানের চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা জরুরি। চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে চলমান অস্থিরতা আরও গভীর হয়েছে যখন সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নির্দেশনা উপেক্ষা করে একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়। যেহেতু আগের কমিটি অবৈধ বলে বিবেচিত হয়েছিল, তাই নতুনভাবে গঠিত এই কমিটির বৈধতাও প্রশ্নবিদ্ধ। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসরণ না করে গঠিত এই কমিটি নিয়ে অসন্তোষ আরও বেড়েছে, বিশেষত সমিতির ভুক্তভোগী ও জীবন সদস্যদের মধ্যে। সমাজ সেবা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, পূর্ববর্তী কমিটি পুরোপুরি অবৈধ ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, যখন আগের কমিটিই বৈধ নয়, তখন তারা কিভাবে একটি নতুন কমিটি গঠন করতে পারে? এই অনিয়ম ও অসঙ্গতি নিয়ে জীবন সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন এবং এ বিষয়ে তদন্তের দাবি করেছেন।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। তাদের মতে, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরী এই ডায়াবেটিক সমিতিকে একধরনের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জিম্মি করে রেখেছেন এবং তাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করছেন। তারা মনে করেন, এই সমিতির স্বচ্ছতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। জীবন সদস্যদের অনেকে অধ্যাপক চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, যেন ডায়াবেটিক সমিতি তার প্রকৃত সেবামূলক ভূমিকা পুনরুদ্ধার করতে পারে। অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরীর সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, তিনি দৈনিক ভোরের আওয়াজ ও the daily banner পত্রিকাকে বলেন যে, তার নেতৃত্বকে ঘিরে উঠা অভিযোগগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। ঐ অভিযোগ গুলো ৩৬ বছর আগের- এই অভিযোগ আবার নতুন কি”
তিনি দাবি করেন, তার নেতৃত্বাধীন কমিটি সঠিকভাবে কাজ করে আসছে এবং কোনো ধরনের দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তিনি আরও বলেন, তার দায়িত্বে থাকাকালীন সমিতির কার্যক্রম স্বচ্ছ ও জবাব দিহিতার মধ্যে ছিল এবং সমস্ত কার্যক্রম সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নিয়ম অনুসারে পরিচালিত হয়েছে। তিনি কথা শুরুতেই বলেন – আমার বিরুদ্ধে মহিলাটা দুর্নাম ছড়াচ্ছে ঐ মহিলা কে জান্তে চাইলে তিনি বলেন আমাদের স্টাফ ছিলো” লিপি” নামে এক মহিলা, আমি যখন বল্লাম আপনার নামে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তখন তিনি বলেন চোরের মায়ের বড় গলা- তা লিখে দিয়েন।
তবে ভুক্তভোগী ও জীবন সদস্যরা তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন এবং আরও জোরালো তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন।
ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর ‘চোরের বড় গলা’ মন্তব্যের বিষয়ে পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে লিপি বলেন, “তিনি নিজেই একজন চোর, তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ রয়েছে। জাহাঙ্গীর চৌধুরী অবৈধভাবে সভাপতির পদে আছেন, এবং তিনি এই হাসপাতালটিকে লুটেপুটে শেষ করে ফেলেছেন। ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ তার জন্য একেবারেই মানানসই শব্দ। অসংখ্য অপকর্ম করার পরও তিনি নিজেকে সাধু হিসেবে
উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন।”লিপির বিরুদ্ধে খুলশী থানায় দায়েরকৃত মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, “এই মিথ্যা মামলা আমার বিরুদ্ধে করা হয়েছে কেবল জাহাঙ্গীর চৌধুরীর অপকর্ম প্রকাশ করা বন্ধ করার জন্য। এটি আমাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
– ডায়াবেটিস হাসপাতাল সমিতির অনিয়মের বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আসছে…