লেখালেখি করতে করতে শেখা যায়—অভ্যাস আর অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়েই লিখতে পারার ক্ষমতা তৈরি হয়। তবে টেলিভিশন উপস্থাপনা তেমন সহজ কোনো বিষয় নয়। পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি ক্যামেরার সামনে এসে নিজেদের নামও ভুলে গেছেন। আমাদের শৈশবে টেলিভিশন ছিল এক রোমাঞ্চকর জগৎ। আমরা ভাবতাম, মানুষ টেলিভিশনের ভিতরে কীভাবে ঢোকে! তারা কথা বলে, গান গায়, নাচে, নাটক করে। বিশেষ করে বাংলা সিনেমা দেখে আমরা টেলিভিশনের প্রতি এক ধরনের কৌতূহলী আলোচনা করতাম। তখনকার দিনে এত ধরণের অনুষ্ঠান ছিল না। আর আজকের মতো সরাসরি কথোপকথন বা টকশো তো কল্পনাতেই ছিল না।
ফজলে লোহানির উপস্থাপনায় “যদি কিছু মনে না করেন” অনুষ্ঠানটি ছিল সেই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। এরপর অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইদ স্যারের অনুষ্ঠানও দেখতাম। তবে টেলিভিশনকে কাছে থেকে দেখার বা স্টুডিওতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তখনও হয়নি। যা হতো, তা ছিল পর্দার আড়ালে। টেলিভিশনে সংবাদ পাঠও আমার জন্য একটা বিস্ময় ছিল। এত দীর্ঘ সংবাদ পাঠক কীভাবে মুখস্থ করেন—এটা ভেবে অবাক হতাম। পরে বুঝতে পারি, সংবাদ পাঠ আসলে মুখস্থ নয়, এর পেছনে রয়েছে কৌশল। ক্যামেরার সামনে পঠিত টেক্সট দেখে এত সাবলীলভাবে সংবাদ পড়া যায় যে বোঝা যায় না এটি পড়া হচ্ছে।
“যদি কিছু মনে না করেন” অনুষ্ঠানটি আমি বিশেষ আগ্রহ নিয়ে দেখতাম। টেলিভিশন উপস্থাপনা তখন আমার কাছে এক রহস্য। এই রহস্য বুঝতে আমার অনেক বছর লেগে যায়। বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর যখন বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ শুরু করলাম, তখন টেলিভিশন দুনিয়ার আসল চিত্রটা বোঝা শুরু হলো। প্রথমদিকে, ক্যামেরার সামনে কথা বলতে গিয়ে আমার হাত-পা ঘামতে শুরু করত। তবে সাহসের সঙ্গে কথা চালিয়ে যেতাম, কারণ জানতাম, ক্যামেরার সামনে ভয় পেলে তা আরো বেশি প্রকাশ পাবে। তখন আমি অতিথি হিসেবে উপস্থিত হতাম, উপস্থাপক হিসেবে নয়। তবে উপস্থাপনার কিছু বিষয় তখন থেকেই মাথায় ঢুকে যায়।
আমি দেখতাম, অনেকেই ক্যামেরার সামনে গিয়ে কিছু বলার আগে অনেক পণ্ডিতের মতো কথা বলত, কিন্তু ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই সব ভুলে যেত। কেউ কেউ নিজের নাম বলতেও বারবার ভুল করত। বারবার কাট কেটে পুনরায় রেকর্ড করতে হতো। এর মধ্যেই বুঝতে পারলাম, ক্যামেরার সামনে কথা বলার জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো আত্মবিশ্বাস আর বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি। ক্যামেরার সামনে আসলেই কেউ কেউ গলা শুকিয়ে ফেলে, শব্দ হারিয়ে ফেলে, অথচ আসল কাজ শুরু হয় তখনই।
আমার এই অভিজ্ঞতাগুলো থেকে আমি শিখেছিলাম, টেলিভিশন উপস্থাপনার জন্য সাহস, ধৈর্য, এবং কৌশল থাকা আবশ্যক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পড়াশোনা। বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকলে ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলা সহজ হয়। চট্টগ্রামের ভাষাগত ত্রুটিগুলো সচেতনভাবে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম, কারণ শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলা জরুরি। সঠিক উচ্চারণ আর প্রমিত বাংলা না জানলে, টেলিভিশনে দর্শকদের সামনে নিজেকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে। অবশেষে, অনেক দিন লেখালেখি এবং সংগঠনের কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে টেলিভিশনের দিকে অগ্রসর হলাম। ২০১৭ সালে, সাংবাদিক চৌধুরী লোকমানের মাধ্যমে বাংলা টিভির চট্টগ্রাম সংলাপ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনার প্রস্তাব পাই। তখন আমি টেলিভিশন উপস্থাপনায় একেবারে নতুন ছিলাম, তবে লোকমান ও আজাদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলাম। প্রথম দিকে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে গেলে সেই পুরোনো ভয়গুলো ফিরে আসত। তবুও ক্রমশ উপস্থাপনার কৌশল আয়ত্ত করতে শুরু করি।
টেলিভিশন উপস্থাপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শুদ্ধভাবে কথা বলা এবং বিষয়টি নিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি থাকা। তথ্যগত কোনো ভুল না হওয়া এবং বিষয়বস্তু নিয়ে সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী থাকা দরকার। এ জন্যই টকশোতে অংশ নেওয়ার আগে সব সময় পড়াশোনা করে যেতাম। প্রস্তুতির বাইরে গিয়ে কথা বললে ক্যামেরার সামনে ভুল হওয়া স্বাভাবিক। টেলিভিশনে কাজ করা আমার জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। সেই ছোটবেলার কৌতূহলী চোখে দেখা টেলিভিশন দুনিয়ার রহস্য এখন আর অজানা নেই। আমি ধীরে ধীরে এর ভিতর ঢুকে সেটাকে নিজের করে নিয়েছি, ঠিক যেমন লিখতে লিখতে লেখালেখির পথে পা বাড়িয়েছিলাম।
টকশো “চট্টগ্রাম সংলাপ” অনুষ্ঠানটি শুরু করেছিলাম, তখন আমি একেবারেই নতুন উপস্থাপক। কিন্তু আত্মবিশ্বাস ও মনোবল ছিল দৃঢ়, ফলে কোনো প্রকার জড়তা বা সংকোচের সম্মুখীন হতে হয়নি। প্রথম পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেজাউল করিম চৌধুরী এবং ডিআইজি ড. এস এম মনি উজ জামান। আমার মতো তারাও নতুন ছিলেন— প্রথমবারের মতো টকশোতে অংশগ্রহণ করছিলেন। এর আগে কখনো ক্যামেরার সামনে কথা বলেননি, ফলে সবার মধ্যেই একটা স্বাভাবিক ভয় ছিল। টকশোতে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে কথা বলা অনেকের জন্যই চ্যালেঞ্জিং হয়, যা আমার ক্ষেত্রেও হয়েছিল। ক্যামেরার লেন্সের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করা বা সংলাপ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে একাধিক ক্যামেরা ও অতিরিক্ত আলোর তাপ এতটাই তীব্র ছিল যে, মাঝে মাঝে আমার মাথা গরম হয়ে যেত। রেজাউল করিম চৌধুরী আমার এই টকশোতে এসে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার কথার ধারা, বক্তব্যের গভীরতা শেখ হাসিনার নজরে আসে, এবং পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে নিযুক্ত হন। আমার প্রথম টকশোটি ছিল যেমন আনন্দময়, তেমনি ভয়াবহ। এটা অনেকটা জীবনের প্রথম বিয়ের পর বাসর ঘরের মতো— যেখানে আনন্দ ও উত্তেজনার পাশাপাশি এক ধরনের ভয় কাজ করে। “চট্টগ্রাম সংলাপ” অনুষ্ঠানটি সেখান থেকে শুরু। একটার পর একটা টকশো করতে শুরু করলাম। প্রথম দিকে টকশোগুলোর মান তেমন ভালো ছিল না, কারণ উপস্থাপনায় নতুন ছিলাম। কিন্তু গুণগত মানের দিক থেকে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম, কারণ আলোচনা ছিল গভীর এবং প্রাসঙ্গিক। আমি কখনোই প্রশ্ন লিখে রাখতাম না, সব মুখস্থ করতাম। প্রথম দিকে একটি টকশো করতেই প্রচুর কষ্ট হতো, তারপর যখন দিনে দুই-তিনটি করতে শুরু করলাম, তখন বুঝতে পারলাম এ কাজটা কতটা কঠিন। তবে ধীরে ধীরে আমার অভ্যাস হলো এবং টকশো আমার জন্য পানির মতো সহজ হয়ে উঠল। এক সময় এসে টকশো উপস্থাপনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, আমার জন্য সেটি যেন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে আমি টকশো করেছি। রাজনীতি, সমাজ এবং সুশীল সমাজের অনেক প্রতিনিধি আমার শোতে অংশগ্রহণ করেছেন। চট্টগ্রামে যতগুলো টকশো করেছি, তার চেয়ে ঢাকায় বাংলা টিভির হেড অফিসে বেশি করেছি। ঢাকায় অনুষ্ঠান করার সময় সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল, অতিথিরা সহজেই পাওয়া যেত। যদিও সেখানে বিষয়বস্তু নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করার মতো অনেকেই ছিলেন না। চট্টগ্রামে আমি অনেক গুণী ব্যক্তিদেরকে সময় দিয়েছি, সুযোগ দিয়েছি। আমি একমাত্র উপস্থাপক ছিলাম, যিনি চট্টগ্রামে সব শ্রেণির মানুষকে প্ল্যাটফর্ম দিয়েছেন, কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়াই। টকশোর পাশাপাশি আমি “সচিত্র চট্টগ্রাম” নামে একটি অনুষ্ঠান করতাম, যেখানে কিছু কথা এবং কিছু গানের পরিবেশনা হতো। এর পাশাপাশি “কথার কথা” নামে আমার নিজের তৈরি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানও পরিচালনা করেছি। উপস্থাপনার সময় অনেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন, “ভাই, আপনি এত কথা কীভাবে মনে রাখেন?” আমি হাসতাম, কারণ সত্যিই এতগুলো তথ্য মনে রাখা সহজ ব্যাপার ছিল না। ঢাকায় বিশেষ বিশেষ মানুষদের নিয়ে দিনে অন্তত ১০টি রেকর্ড করতাম। প্রতিটি টকশো রেকর্ড করতে প্রায় ৪০-৫০ মিনিট সময় লাগত, এক দিনে প্রায় ৪০০ মিনিট কাজ করতে হতো। প্রতিটি অনুষ্ঠানের বিষয় আলাদা ছিল, প্রশ্নগুলোও ভিন্ন ভিন্ন ছিল। চট্টগ্রামেও দিনে ছয়-সাতটি অনুষ্ঠান রেকর্ড করেছি। তবে সেখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল উপযুক্ত অতিথি পাওয়া। ঢাকার মতো সুযোগ সুবিধা চট্টগ্রামে ছিল না, কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি সবসময় চট্টগ্রামের প্রতিভাবান মানুষদের সুযোগ দিতে। “কিছু কথা, কিছু গান” অনুষ্ঠানে আমি চট্টগ্রামের নামি-দামি শিল্পীদেরকে উপস্থাপনের সুযোগ দিয়েছি। ঢাকায় বাংলা টিভির প্রধান কার্যালয়ের পাশাপাশি আমি চট্টগ্রামে বাংলা টিভির একটি স্টুডিও গড়ে তুলি। এটি ছিল আগ্রাবাদে, যেখানে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে এই স্টুডিওটি প্রতিষ্ঠা করি। এ জন্য আমি বাংলা টিভির পরিচালক নুরুল ইসলাম নুরু এবং মহসিন চৌধুরীর কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের সহযোগিতা ছাড়া এটি সম্ভব হতো না। আপনার লেখা আরো বিস্তারিতভাবে পরিবেশন করার জন্য নিম্নলিখিতভাবে প্রসারিত করা হয়েছে:আমার টেলিভিশন উপস্থাপনা জীবনের গল্পটি শুধুমাত্র আমার নিজের প্রচেষ্টা নয়, বরং এতে জড়িয়ে রয়েছে অনেক মানুষের অবদান। আমি কৃতজ্ঞ, কারণ এই দীর্ঘ যাত্রায় অনেকেই আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমার বন্ধু কায়েছ এবং ফোরকান মালয়েশিয়া থেকে আমাকে দুইটি ক্যামেরা উপহার দিয়েছিলেন, যা আমার কাজের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমার অফিসের কর্মী রাকিব এডিটিংয়ে খুব দ্রুত পারদর্শী হয়ে উঠেছিল, এবং তার দক্ষতাই আমাকে কাজের মান বাড়াতে সাহায্য করেছিল। এছাড়াও লাভলী ডি লিও ও বেবির কথা না বললেই নয়; তাদের সহায়তা সবসময় আমার মনে গেঁথে থাকবে। আমার বন্ধু রহিম ভাই, যিনি আগ্রাবাদ ভান্ডার মার্কেটের মালিক, তিনি সবসময়ই আমার প্রয়োজনের সময় পাশে থেকেছেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় সহযোগিতা এসেছে বাংলা টিভির সিইও সোহেল সাহেবের কাছ থেকে। তিনি আমাকে শুধু অতিথি নির্বাচনেই সহায়তা করেননি, বরং উপস্থাপক হিসেবে আমাকে গড়ে তোলার জন্য অপরিসীম প্রচেষ্টা করেছেন। তার অনুপ্রেরণায় আমি টিভি জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। তিনি যদি আমার পাশে না থাকতেন, তাহলে আজকের আমি হতে পারতাম না। শত শত টকশো আমি তার উৎসাহে করেছি, প্রশ্ন না দেখে নিজের জ্ঞানের উপর ভরসা করে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতাম। এভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই আমি দেশ-বিদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলাম।
আমার টকশো এমনভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল যে, দর্শকরা রাত জেগে আমার অনুষ্ঠান দেখার অপেক্ষায় থাকতেন। প্রতিদিনকার টকশো করার জন্য আমার মধ্যে অদম্য ইচ্ছাশক্তি কাজ করত, যা আমার নিজের প্রস্তুতির উপর ভরসা থেকে এসেছে। আমি চ্যানেল আই-এর ‘তৃতীয় মাত্রা’-র পর সম্ভবত একমাত্র উপস্থাপক, যিনি নিয়মিত এতো ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি। প্রতিদিনের টকশোতে আমি রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করতাম। কিন্তু তার পাশাপাশি আমি কিছু বিশেষ অনুষ্ঠানও করেছিলাম, যেমন ‘কিছু কথা কিছু গান’ এবং ‘সচিত্র চট্টগ্রাম’।
চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে আমার কিছু স্মরণীয় ডকুমেন্টারি ছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মাইজভান্ডার দরবার, কর্ণফুলী নদী, এবং চেরাগি পাহাড়ের ইতিহাস নিয়ে কাজ করেছি। এছাড়াও, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, ট্রাফিক সমস্যা, মোবাইল ফোনের ব্যবহার, জলাবদ্ধতা এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যার উপরও ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেছি। বিশেষ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপর একটি ডকুমেন্টারি করার জন্য তখনকার মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে একটি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি পুনরায় মেয়র নমিনেশন না পাওয়ায় এবং রেজাউল করিমের সিটি মেয়র হওয়ার কারণে সেই প্রকল্পটি আর সম্পন্ন হয়নি। তবুও, আমি এই বিষয়ে আবার কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করি এবং আমার হাতে এখনো কয়েকশো গ্রন্থ রচিত আছে যা যেকোনো সময় আবার নতুন করে উপস্থাপন করতে পারি।
টকশোতে আমি বহু রকমের মানুষকে অতিথি হিসেবে নিয়ে আসতাম—অনেকেই ছিলেন দর্শনে ও জ্ঞানে মহাপণ্ডিত। তবে তাদের সাথে কথা বলার জন্য আমাকে সবসময় গভীর গবেষণা করতে হয়েছে। আমার উপস্থাপনার মূল শক্তি ছিল গবেষণা এবং পড়াশোনা। যেই বিষয় নিয়ে টকশো করতাম, সেই বিষয়ে আগেভাগেই আমি বিস্তারিত জেনে নিতাম, যাতে কোনোভাবেই ভুল তথ্য প্রদান না করি। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে আলোচনা করার আগে আমি সবসময় তথ্য যাচাই করে নিতাম। ধর্মীয় বিষয়াবলির উপর আমি একাধিক টকশো করেছি, এবং বিশেষ করে আল্লাহ ও নবী করিম (সাঃ)-এর জীবনের উপর আলাপ করতে পেরে আমি গভীর তৃপ্তি পেয়েছি। প্রতিটি টকশোতে আমি জানার আগ্রহ থেকে আলোচনা করতাম এবং অতিথিরাও এতে আনন্দ পেতেন। কখনো কখনো অতিথিরা যদি তথ্য ভুলে যেতেন, তখন আমি সঠিক তথ্য তাদের মনে করিয়ে দিতাম। আমার সবচেয়ে বেশি আনন্দ এসেছে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো উপস্থাপনা করতে গিয়ে, কারণ এতে আমার নিজের আত্মা খুঁজে পেয়েছে মানসিক প্রশান্তি। বাংলা টিভির পর আমি এটিএন বাংলায়ও কয়েকটি টকশো করেছি। প্রতিটি টকশোতে আমি ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, খেলা, এবং সামাজিক অবস্থা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি। ঢাকায় যারা আমার অনুষ্ঠানে আসতেন, তারা প্রায়ই বিস্ময় প্রকাশ করতেন, “কিভাবে এতগুলো বিষয়ে এত তথ্য নিয়ে আলোচনা করতে পারি?” আমি সবসময় বিনীতভাবে বলতাম, “এতে আমার কোনো বিশেষ কেরামতি নেই, সবই আল্লাহর অশেষ রহমত।”
আমার জনপ্রিয়তা দেখে অনেকে আমাকে হিংসা করতেন, আমার সমালোচনা করতেন। বিশেষ করে চট্টগ্রামের কিছু স্থানীয় সাংবাদিক, যারা আমার সাফল্য সহ্য করতে পারতেন না, তারা আমাকে সমালোচনার তীর ছুড়তেন। তারা নিজেরা কোনো যোগ্যতা ছাড়াই তোষামোদি করে ধনী হয়ে উঠেছে। তবে ঢাকায় সিনিয়র সাংবাদিকদের কাছ থেকে আমি সবসময় অনুপ্রেরণা পেয়েছি। তারা আমাকে উৎসাহিত করতেন এবং বলতেন, “আপনার কাজ খুবই ভালো।”
এখনও আমি তাদের সবার নাম মনে রাখতে পারিনি, কিন্তু আমি তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। টকশো নিয়ে আমার আরও অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে, যা আমি ভবিষ্যতে আরও বিস্তারিতভাবে জানাতে পারব।
লেখকঃ সাংবাদিক, গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক।