বাংলাদেশ পুলিশের নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম তার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সফরে এসে দৃঢ়ভাবে বলেছেন, “মব জাস্টিসের নামে কেউ আইন হাতে তুলে নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” গত ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এই সতর্কবার্তা দেন। তিনি পুলিশের সদস্যদের শৃঙ্খলা ফেরানোর পাশাপাশি হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে চাইছেন, যা তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। সিএমপি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ।আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম আরও বলেন, “যেসব জঙ্গি জামিনে রয়েছে তারা পুলিশের নজরদারির মধ্যে থাকবে। যদি তারা পুনরায় জঙ্গিবাদে জড়ায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে যৌথ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২৩৮টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে, এবং পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্রের ৭৫% পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, “অস্ত্র ব্যবহারকারী যেখানেই থাকুক, তাদের কঠোর আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।” দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা: আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আইজিপি বলেন, “দুর্গাপূজা উৎসব সার্বিক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পালিত হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে অপতৎপরতা রুখে দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, পুলিশের কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে যে আস্থা হারিয়ে গেছে, তা পুনরুদ্ধার করা হবে।
আইজিপি ময়নুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রকৃত অর্থেই জনগণের বন্ধু হতে চাই। পুলিশ হবে জনগণের সহায়ক, যাতে মানুষ পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারে এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।”
মোবাইল জাস্টিস ও পুলিশি কার্যক্রম:
মব জাস্টিস বা ভিড়ের আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা প্রসঙ্গে আইজিপি ময়নুল ইসলাম বলেন, “আইন হাতে তুলে নেয়ার কোনও অধিকার কারো নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব, আর যদি কেউ এর ব্যত্যয় ঘটায়, তাকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।” সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, “মামলার আসামি হলেই গ্রেফতার করা হবে না। শুধুমাত্র তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেই গ্রেফতার করা হবে। আমরা নিরীহ কাউকে হয়রানি করবো না। যারা প্রকৃত অপরাধী, তারাই আইনের আওতায় আসবে।”বিশেষ কল্যাণ সভা:এর আগে আইজিপি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনসে সিএমপি ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এই সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশের সভাপতিত্বে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সকল স্তরের পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় আইজিপি ময়নুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনাদের শৃঙ্খলা এবং পেশাদারিত্ব পুলিশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পুলিশ বাহিনীর হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে চাই।”
সংক্ষিপ্ত সফর:চট্টগ্রামে আইজিপি মো. ময়নুল ইসলামের এই সংক্ষিপ্ত সফরে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেন। চট্টগ্রামের পুলিশ সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি এবং সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তার নির্দেশনা ও পরিকল্পনাগুলি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।