1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
“বাঁশখালীতে ৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের মাদক কারবারি আটক: ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ” হোমনায় মহান মে দিবস উপলক্ষে  বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর শুভ আগমনে বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে হাজী মোহাম্মদ আলম ববির শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ৮ জনকে বেঁধে ছয়টি দোকান ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা রোদেলা দুপুরে পারকি সৈকতের বালুকাবেলায় কলম যোদ্ধারা,স্মৃতিময় এক মে দিবস! ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দক্ষিণ চট্টগ্রাম সফর সিএমপি কমিশনার ও পাঁচ ওসি পেলেন আইজিপি ব্যাজ সাহস, দক্ষতা ও মানবিক পুলিশিংয়ের স্বীকৃতি আইজি পি ব্যাজ পেলেন ওসি আফতাব উদ্দিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের সূচনালগ্নের সাহসী পুরুষ ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন! দৃষ্টি আকর্ষণ

ফজলে করিম: রাউজানের মাফিয়া ডনের সাম্রাজ্য ও তার পতন

মো. কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৬০ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রামের রাউজান একসময় ছিল ভয়ংকর ত্রাসের এলাকা, যেখানে একটি নাম মানুষের মুখে মুখে ঘুরতো—ফজলে করিম। এই নামটি রাউজানের প্রতিটি ঘরবাড়ির মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। ফজলে করিম ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও ক্ষমতার চর্চা তাকে প্রায় অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিল। তার অপ্রতিরোধ্য প্রভাব, অপরাধের ধারা, আর একাধারে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণের মাধ্যমে তিনি নিজেকে স্থানীয়ভাবে একটি আলাদা শাসন ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন।

অপরাধের উত্থান সাম্রাজ্যের বিস্তার

ফজলে করিম তার ক্ষমতার যাত্রা শুরু করেন স্থানীয় রাজনীতির ছত্রছায়ায়। বিশেষ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রাজনৈতিক ক্যাডার হিসেবে ধীরে ধীরে, তিনি সাধারণ রাজনীতিবিদ (ক্যাডার) থেকে অপরাধের সম্রাটে পরিণত হন। তার আয়ত্তাধীন এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠে এক বিশাল অপরাধ সাম্রাজ্য, যেখানে তার নির্দেশ অমান্য করাকে নিজের জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য করতে হতো। এই সাম্রাজ্যে তার ছিল এক হাজারেরও বেশি কিলার বাহিনী, যারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হত্যা করতে পিছপা হতো না। প্রায় ৫ শতাধিক অবৈধ অস্ত্র তাদের হাতে ছিল, এবং তারা নিয়মিতভাবে তান্ডব চালাতো, যেন রাউজান একটি নিয়ন্ত্রণহীন কারাগারে পরিণত হয়। ফজলে করিমের বাহিনী স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারি প্রকল্পগুলোর উপরও তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। তার কথা মানা না হলে কেবল ভয় দেখানো নয়, বরং সরাসরি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর মতো ঘটনা স্বাভাবিক ছিল। পুলিশও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারত না, কারণ প্রশাসন ছিল তার নির্দেশে পরিচালিত। এইভাবে ফজলে করিম তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত করে গড়ে তুলেছিলেন।

উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অপরাধের মুনাফা

ফজলে করিমের প্রধান অর্থনৈতিক উৎস ছিল স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে আদায় করা কমিশন। প্রতিটি প্রকল্প থেকে তিনি ১০ শতাংশ কমিশন দাবি করতেন, যা তার একচ্ছত্র ক্ষমতার একটি বড় উৎস হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই কমিশনের মাধ্যমে তিনি প্রায় এক হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। এই অবৈধ অর্থের জোরে তিনি রাজনীতিতে তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেন এবং স্থানীয়ভাবে অপরাজেয় হয়ে ওঠেন। রাউজানের প্রায় প্রতিটি বড় প্রকল্প তার হাতের মাধ্যমে পরিচালিত হতো, এবং উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ার আগে তার ‘অনুমতি’ নিতে হতো। নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন না থাকলেও, ফজলে করিম নিজেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনবিহীনভাবে বসিয়ে রাখার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। চাঁদাবাজি, চুক্তি নিয়ন্ত্রণ, এবং অন্যান্য দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি একটি সমান্তরাল শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন।

অপরাধী চক্র নারকীয় শাসন

ফজলে করিমের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা অপরাধী চক্র শুধুমাত্র অর্থনৈতিক অপরাধেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তার বাহিনীর সদস্যরা হত্যা, নারী পাচার, ডাকাতি, এবং আরও নানা ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল। নারীদের দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করানো, তাদেরকে নির্যাতন এবং অপব্যবহার করা তার সাম্রাজ্যের একটি নোংরা দিক ছিল। এছাড়াও, তার বাহিনীর হাতে নিয়মিত মানুষ খুন হতো, এবং কোনোরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কঠোরভাবে দমন করা হতো। একটি বিশেষ ঘটনা উল্লেখ যোগ্য, যেখানে ফজলে করিমের বাহিনী একজন স্থানীয় ব্যবসায়ীকে হত্যা করে, শুধুমাত্র তাকে চাঁদা না দেওয়ার অপরাধে। এমন শত শত ঘটনা রাউজানের মানুষ দেখেছে, যেখানে ফজলে করিমের নির্দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মানুষ তার ভয়ে কথা বলতে পর্যন্ত সাহস পেত না।

রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার

ফজলে করিম কেবল একজন মাফিয়া ডনই ছিলেন না,তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতাকেও নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতেন। তিনি রেলওয়ে সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও নিয়োজিত ছিলেন, যেখানে তিনি অবৈধ টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। সরকারি প্রকল্পের কাজ থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ আদায়ের এই পদ্ধতি তাকে একজন ধনী ও শক্তিশালী ব্যক্তিতে পরিণত করেছিল। তার অপরাধ সাম্রাজ্যের নেপথ্যে ছিল একটি রাজনৈতিক অভিভাবকত্ব, যার ফলে তার অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হতো না। বিভিন্ন সরকারি অফিস এবং রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তার সম্পর্ক এতটাই গভীর ছিল যে, কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার সাহস করত না। পতনের শুরু ও গ্রেফতার তার দীর্ঘ অপরাধ যজ্ঞের পর অবশেষে ফজলে করিমের সাম্রাজ্য পতনের মুখে পড়ে। আমার লেখা এবং আরও কিছু অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। ফজলে করিম যখন ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিলেন, তখন আখাউড়া সীমান্তে বিজিবি তাকে আটক করে। নিজের শক্তি এবং ক্ষমতার উপর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী এই ডন অবশেষে শিয়ালের মতো পালানোর চেষ্টা করে ধরা পড়েন। তার গ্রেফতার পুরো এলাকায় একটি আশার আলো জ্বালায়, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ তার আতঙ্কে ছিল।

উত্তরাধিকার শিক্ষণীয় বিষয়

ফজলে করিমের অপরাধী কার্যকলাপ এবং তার সাম্রাজ্য এখন ধ্বংসের মুখে। তবে তার অপরাধের উত্তরাধিকার এখনও রাউজানের মানুষকে তাড়া করে ফিরছে। দীর্ঘকাল ধরে একজন মাফিয়া ডনের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি সমাজের জন্য মুক্তির পথ খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। তার রেখে যাওয়া ক্ষত আজও মুছে যায়নি। ফজলে করিমের গল্প আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষণীয় বিষয়—যখন অপরাধ আর রাজনীতি একসঙ্গে মিশে যায়, তখন তা সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে। এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে। ফজলে করিমের গ্রেফতারের পর, রাউজান অঞ্চলের মানুষ এখন একটি নতুন শুরুর দিকে তাকিয়ে আছে। তবে তার অপরাধ সাম্রাজ্যের অতীতের গভীর দাগগুলো এত সহজে মুছে যাবে না।

ফজলে করিমের অপরাধ সাম্রাজ্য এতই বিস্তৃত ও জটিল যে, তার সামগ্রিক প্রভাব ও কার্যকলাপ সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করা জরুরি। প্রতিটি স্তরে তার নিয়ন্ত্রণ, ক্ষমতা প্রদর্শন, এবং অপরাধমূলক কর্মসূচির গভীরতা সমাজের সর্বস্তরের জন্যই ছিল এক ত্রাসের কারণ। এই ধরণের বিশাল অপরাধ নেটওয়ার্ক একটি অঞ্চলের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোকে কিভাবে অবক্ষয় করতে পারে, তা ফজলে করিমের কাহিনির প্রতিটি অধ্যায়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার অপরাধ সাম্রাজ্যের বিশদ বিবরণে আরও কিছু দিক তুলে ধরা দরকার।

রাজনৈতিক প্রভাব প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ

ফজলে করিমের অপরাধ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে ভয়ানক দিক ছিল তার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ। রাউজানকে যেন তিনি একটি দেয়ালবিহীন কারাগারে পরিণত করেছিলেন, যেখানে তার অনুমতি ছাড়া কিছুই চলতো না। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, এবং রাজনৈতিক নেতারা তার নির্দেশেই কাজ করতেন। ফজলে করিম ছিলেন এমন এক ক্ষমতাবান ব্যক্তি, যার কথা অমান্য করলে জীবন সংশয় দেখা দিত। তার কিলার বাহিনী যেমন খুন-খারাবি চালাত, তেমনি প্রশাসনিক প্রভাবও ছিল এতটাই প্রবল যে, সরকারের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজেকে একপ্রকার সরকার হিসেবেই প্রতিস্থাপন করেছিলেন।

রাউজানের প্রতিটি বড় প্রকল্প, রাজনৈতিক কার্যকলাপ কিংবা উন্নয়ন কাজ—সবকিছুতেই তার ছিল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ। তিনি ছিলেন একজন মাফিয়া ডন, যার ক্ষমতার কাছে সবকিছু নত হয়ে যেত। স্থানীয় প্রশাসন ছিল তার পোষ্য বাহিনী হিসেবে কাজ করা। আর সেই প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের ফলস্বরূপ, তার নির্দেশে পুরো এলাকা চলে, এমন এক বাস্তবতা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চলেছিল অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও কমিশনের রাজনীতি

ফজলে করিমের সাম্রাজ্যের মূল ভিত্তি ছিল অর্থনৈতিক দুর্নীতি, যা তিনি কালা ইকবালের মাধ্যমে পরিচালনা করতেন। রাউজানের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন নেওয়া হতো। এই কমিশনের মাধ্যমে ফজলে করিম এবং তার দল প্রচুর অর্থ উপার্জন করত, যা দিয়ে তারা অপরাধমূলক কার্যকলাপ পরিচালনা করত। এ ছাড়া এই অবৈধ কমিশন আদায়ের ফলে এলাকার উন্নয়ন কাজের মান তীব্রভাবে নষ্ট হয়। ঠিকাদারদের কাছ থেকে আগাম কমিশন নেওয়ার কারণে প্রকল্পগুলো নিম্নমানের হয়ে দাঁড়াত। এমনকি, অনেক কাজ অসমাপ্ত থেকে যেত, কিন্তু টাকার লেনদেন শেষ হয়ে যেত। ফজলে করিমের সাম্রাজ্যের আর্থিক দুর্নীতির আরেকটি দিক ছিল তার বিদেশি চাঁদাবাজি। ওমানসহ অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ী এবং প্রবাসীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হতো। সি আই পি ইয়াসিনের মাধ্যমে এই বিদেশি চাঁদাবাজি পরিচালিত হতো, যার প্রভাব ছিল রাউজানে এবং তার বাইরে। অস্ত্র ভান্ডার ও কিলার বাহিনী

ফজলে করিমের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক ছিল তার কিলার বাহিনী। তার অধীনে অন্ততপক্ষে ৫ শতাধিক অবৈধ অস্ত্র ছিল, যা তার কিলার বাহিনীর মাধ্যমে পরিচালিত হতো। এই কিলার বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন জমির উদ্দিন পারভেজ ও তার ভাই জসিম উদ্দিন। এদের হাতেই ছিল ফজলে করিমের সাম্রাজ্যের মূল অস্ত্র ভান্ডার এবং তারা ফজলে করিমের নির্দেশে কিলার বাহিনী পরিচালনা করত। এই কিলার বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন হত্যা, চাঁদাবাজি, এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিত। বিশেষ করে, ছাত্র জনতার আন্দোলন দমন করার জন্য ফজলে করিমের কিলার বাহিনী ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। হরিশ্যা পাড়ার আজিজ, পারভেজ, পাহাড়তলীর চেয়ারম্যান রোখন, নোয়াপাড়ার চেয়ারম্যান বাবুল, এবং গরুচোর খালেক—এরা প্রত্যেকেই এই বাহিনীর জঘন্য সদস্য ছিল। এই বাহিনী শুধু দেশে নয়, বিদেশেও ফজলে করিমের জন্য কাজ করত, এবং তার নির্দেশে তারা যে কোনো ধরনের অপরাধ মূলক কাজ করতে প্রস্তুত ছিল।

ফজলে করিমের নারী শোষণ ও অশ্লীলতা ফজলে করিমের অপরাধী চরিত্রের সবচেয়ে কলঙ্কিত দিক ছিল তার নারী শোষণ। অসংখ্য নারীর জীবনকে ধ্বংস করেছেন তিনি, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে শোষণ করেছেন। এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করা হলেও, অনেক নারীর নাম ও পরিচয় গোপন রয়ে গেছে, কারণ তারা সামাজিক মর্যাদা রক্ষা করতে পারছেন না।

একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—তার কিলার বাহিনীর প্রধান নেতা আজিম মাহমুদকে ফজলে করিম কৌশলে হত্যা করেন, কারণ তার সুন্দরী স্ত্রীর প্রতি ফজলে করিমের লোলুপ দৃষ্টি ছিল। আজিম মাহমুদের এই হত্যাকাণ্ড এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে ফজলে করিমের অনৈতিক সম্পর্ক প্রকাশ্যে এলে, তার চরিত্রের আরও ভয়ানক দিক ফুটে ওঠে। ফজলে করিমের ধ্বংসাত্মক প্রভাব ও সামাজিক ক্ষতি ফজলে করিমের অপরাধ সাম্রাজ্য শুধু অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং তা সামাজিক ভাবেও রাউজানের মানুষের জীবনে গভীর আঘাত করেছে। তার কিলার বাহিনী এবং অর্থনৈতিক দুর্নীতি রাউজানের সাধারণ মানুষের জীবনকে প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত করেছে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা, সুশাসন, এবং ন্যায্যতা সবকিছুই ছিল তার হাতে বন্দি।

ফজলে করিমের অপরাধ সাম্রাজ্যের বিশালতা এবং ভয়াবহতা এতটাই ব্যাপক যে, তার অপরাধমূলক কার্যকলাপের গভীরতা প্রকাশ করতে বিশদ তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। তার অর্থনৈতিক দুর্নীতি, কিলার বাহিনী, অস্ত্র ভান্ডার, এবং নারীদের প্রতি অমানবিক আচরণ সবই সমাজের জন্য এক অশনি সংকেত। এমন একটি ক্ষমতাবান ব্যক্তির হাত থেকে সমাজকে মুক্ত করতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

এখনই সময়, যখন ফজলে করিমের মতো অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে তাদের অপরাধ মূলক সাম্রাজ্য সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়, এবং সাধারণ মানুষ আবার শান্তি এবং নিরাপত্তার মধ্যে বাস করতে পারে।

ফজলে করিমের নির্দেশে এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এসপি নুরে আলম মিনা (বর্তমান ডিআইজি) ও ওসি কেফায়েত উল্লাহর সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমে ছাত্রদলের প্রভাবশালী নেতা নুরুল আলম নুরুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয় এসআই শেখ জাবেদ এবং ফজলে করিমের হাতে তৈরি একদল ঘাতক। নুরুর মরদেহ কর্ণফুলী নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে একটি বিশদ প্রতিবেদন তৈরি করি।

নুরু হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা ছিল সন্দেহজনক ও নাটকীয়। প্রথমে মামলা দায়ের হলেও, পরবর্তীতে পিবিআই-এর তদন্তে মামলাটি ফাইনাল রিপোর্ট পায়, যা ছিল হতাশাজনক। তবে সম্প্রতি নতুন করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ন্যায়ের চাকা আবার ঘুরতে শুরু করেছে।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে যখন আমি তথ্যভিত্তিক ডকুমেন্টারি ও বিশ্লেষণী লেখালেখি শুরু করি, তখন থেকেই আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মোটা অংকের টাকা দিয়ে আমার কলম বন্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে, যেন আমি এই সত্যগুলো প্রকাশ করতে না পারি। তবে এসব চেষ্টায় আমি মোটেও পিছপা হব না।

আমার বিশ্বাস, সাংবাদিকতা হচ্ছে সমাজের দর্পণ, এবং এর দায়িত্ব হচ্ছে সত্যকে প্রকাশ করা। কিন্তু, ফজলে করিমের মতো অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার কাজ করতে হলে আমাদের সাংবাদিকদের জীবন সবসময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে পারে। আমার ক্ষেত্রে, আমি প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা চাই। এই ঘটনার ওপর নির্ভর করে আমি আরও বিশদভাবে অনুসন্ধান চালাব এবং সমাজের সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

লেখকঃ গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক ও বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান- দৈনিক ভোরের আওয়াজ, The Daily banner –

–চলবে…

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট