সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসে ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের মাধ্যমে। এই পরিবর্তনের পর, সারা দেশে সংখ্যালঘু সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। দৈনিক প্রথম আলোর ১২ সেপ্টেম্বরের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫ এবং ৬ আগস্ট সবচেয়ে বেশি হামলা হয়, যেখানে ১০৬৮টি স্থাপনা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থাপনা গুলোর মধ্যে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এবং ধর্মীয় উপাসনালয় ছিলো। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সনাতনী সম্প্রদায় দাবি করে, তাদের উপর নির্যাতন, নারী নিপীড়ন, হত্যা, লুটপাট, এবং দেশত্যাগের জন্য বাধ্য করা সহ নানা অত্যাচার চালানো হচ্ছে। এই দমনপীড়ন বন্ধে তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসলেও, পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। হাসিনা সরকারের পতন এবং সনাতনীদের প্রতিক্রিয়া ৪ই আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে। এই পরিবর্তনের পর সারা দেশে ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৯টি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়। খুলনা ছিল সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা। সরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা ২ জন বলা হলেও, সনাতনী সম্প্রদায়ের দাবী অনুযায়ী, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।
এই পরিস্থিতিতে, সংখ্যালঘু সনাতনীরা তাদের অধিকার ও নিরাপত্তার দাবিতে আরও একত্রিত হয়েছেন। চট্টগ্রাম শহরে হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে ১৩ আগস্ট, শুক্রবার বিকাল ৪টায় জামালখানে এক প্রতিবাদী গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও হাজার হাজার সনাতনী ধর্মাবলম্বী চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে দলে দলে এসে যোগ দেন, যা পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত করে। সমাবেশের মূল বার্তা ও দাবি-দাওয়া সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ একই কণ্ঠে শ্লোগান দেন, “তুমি কে আমি কে সনাতনী সনাতনী, তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি।” সমাবেশে বিভিন্ন ধর্মীয় পুরোহিত এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা সবার সম্মিলিতভাবে জানান যে, বাংলাদেশে সকলের সমান অধিকার থাকা উচিত। “১৯৭১ সালে দলমত নির্বিশেষে আমরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন করেছি। এখানে সরকার যাবে, সরকার আসবে, কিন্তু আমাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত থাকতে হবে। ধর্মীয় দোহাই দিয়ে দমনপীড়নের মাধ্যমে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা আমরা কখনোই মেনে নিতে পারি না। আমরা সংখ্যালঘু হলেও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে সকলেই বাঙালি হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই।”
সমাবেশে নারীদের এবং শিশুদের উপস্থিতি ছিলো উল্লেখযোগ্য। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে এত মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে, সনাতনী সম্প্রদায় তাদের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বক্তারা বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আমাদের ওপর যে দমনপীড়ন চলছে, তার অবসান চাই।”
প্রধান দাবিগুলো
সমাবেশে বক্তারা তাদের লিখিত বিবৃতিতে মূল দাবিগুলি তুলে ধরেন: ধর্মীয় আক্রমণ ও মন্দির ভাঙচুরের যথাযথ তদন্ত এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি রক্ষায় সরকারি উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা।তারা জোর দিয়ে বলেন যে, প্রশাসনকে তাদের দাবির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাবেশ শেষে একটি মিছিলের মাধ্যমে তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং তাদের দাবি পূরণের জন্য জোরালো আহ্বান জানান।
তাদের শেষ কথা-
চট্টগ্রামের এই মহাসমাবেশ শুধু একটি প্রতিবাদী আয়োজন নয়, এটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি কঠোর বার্তা। তাদের বক্তব্য, “আমাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামবো না। বাংলাদেশ সবার জন্য, এবং আমরা এখানে থাকতে চাই সম্প্রীতির পরিবেশে, নিরাপদে।”