রাজধানী সহ সারাদেশে পরিচালিত হোটেল রেস্তোরাঁর শতকরা ৪ভাগেরও বৈধ অনুমোদন নেই। সরকার ও দেশ বঞ্চিত হচ্ছে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। অপরদিকে সঠিক পরিবেশ না থাকায় মূল্যবান জীবনহানি সহ নানা সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে নাগরিক জীবন।
রাজধানী ঢাকায় দুই সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা জেলা মিলিয়ে ৪০ হাজারের অধিক হোটেল রেস্তোরাঁ। বিপুল সংখ্যক এই হোটেল রেস্তোরাঁর মাঝে বৈধ লাইসেন্স আছে মাত্র ১৩৪ টি রেস্টুরেন্টের। এছাড়া ২হাজার ৮ শ’এর মতো রেস্টুরেন্ট চলছে শুধু ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে। বৈধতা নিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করতে চাইলে একজন বিনিয়োগকারীকে সরকারের সাতটি সংস্থার অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিতে হয়। রেস্তোরাঁর জন্য প্রথমে নিবন্ধন ও পরে লাইসেন্স নিতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে। সেই হিসেবে ঢাকা সহ সারা দেশের হোটেল রেস্তোরাঁর শতকরা ৪ ভাগেরও বৈধ অনুমোদন নেই। যে কারণে সম্ভাবনাময় এই খাত থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। অপরদিকে নিয়ম মেনে রেস্টুরেন্ট তৈরি না হওয়ার কারণে মূল্যবান জীবন হানি সহ নানাবিধ সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে দেশের মানুষ।
যার প্রমাণ মিলেছে, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর। আটতলা ওই ভবনে আগুনে নিহত হন ৪৬ জন। ভবনে ৮টি রেস্তোরাঁ ছিল। যদিও ভবনটিতে রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদনই ছিল না। সেদিন আগুনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ স্বজনদের নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে খেতে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ ভবনে থাকা রেস্তোরাঁগুলোতে কাজ করে সংসার চালাতেন।
একটি জরিপের হিসেব অনুযায়ী জানা গেছে,সারাদেশে ৫ লাখের বেশি হোটেল রেস্তোরাঁর প্রায় সবই অবৈধ! ঢাকার হিসাব অনুযায়ী আনুপাতিক হারে শতকরা ৪ ভাগের কম বৈধতা থাকলে ৫ লাখের মাঝে বৈধ রেস্টুরেন্টের সংখ্যা হবে ১হাজার ২শত ৭৫।
আর শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চালানো রেস্টুরেন্টের সংখ্যা হবে ৬০ হাজারের বেশি। ঢাকার বহুতল ভবনের ছাঁদে রুফটপ আছে শতাধিক যার কোনটির বৈধ অনুমোদন নেই। সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব হলো রাজউকের নকশা দেখে রেস্তোরাঁর লাইসেন্স দেয়া। এসব বিষয় সঠিক অনুসরণ ও বৈধতা নিশ্চিত না হলে আরো বড়ো দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সকল সংস্থার অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছে মাত্র ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১২৮টি ও সিটি কর্পোরেশনের বাইরের ঢাকা জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬টি রেস্তোরাঁর লাইসেন্স রয়েছে।
বৈধ ভাবে হোটেল রেস্তোরাঁর ব্যাবসা পরিচালনা করতে হলে বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ আইন অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রসহ নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করার জন্য নিবন্ধন নিতে হয়। এই নিবন্ধন পাওয়ার পর, অন্যান্য ৫টি সংস্থার অনুমোদন পাওয়ার পর জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে থেকেই রেস্তোরাঁ ব্যবসার লাইসেন্স প্রদান করা হয়। নিবন্ধন পাওয়ার এক বছরের মধ্যে আইন অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় সকল কাগজ পত্র সংগ্রহ করে জমা দিতে হয়। তারপর যাচাই-বাছাইয়ের পর লাইসেন্স প্রদান করতে হয়।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পাশাপাশি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিতে হয় একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে। এর বাইরে দই ও বোরহানির মতো বোতল বা প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্য কোনো রেস্তোরাঁ বিক্রি করলে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিতে হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধন পাওয়ার পর রেস্তোরাঁ নির্মাণের কাজ শুরু করবেন একজন বিনিয়োগকারী। একই সঙ্গে তিনি লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সরকারি অন্যান্য সংস্থা থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ছাড়পত্র নেবেন। লাইসেন্স পাওয়ার আগে কোনো রেস্তোরাঁ খাবার বিক্রি করতে পারবে না। যেসব রেস্তোরাঁর লাইসেন্স আছে, শুধু তারাই বৈধ। আবার নিবন্ধন পাওয়ার এক বছরের মধ্যে লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রসহ আবেদন না করলে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে প্রকাশ, সাম্প্রতিক সময়ে লাইসেন্স নিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করার প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২২ সালে ১১টি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নিয়েছে। এরপর ২০২৩ সালে ৩০টি এবং ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ১৫টি প্রতিষ্ঠান রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স গ্রহণ করে।
লাইসেন্স পেতে এখন ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ৬৪টি আবেদন আছে। যারা ইতিমধ্যে রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনার জন্য নিবন্ধন পেয়েছে।
লাইসেন্স ছাড়া রেস্তোরাঁ ব্যবসা করার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর। আটতলা ওই ভবনে আগুনে নিহত হন ৪৬ জন। ভবনে ৮টি রেস্তোরাঁ ছিল। যদিও ভবনটিতে রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদনই ছিল না। সেদিন আগুনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ স্বজনদের নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে খেতে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ ভবনে থাকা রেস্তোরাঁগুলোতে কাজ করে সংসার চালাতেন।
বেইলি রোডের ভবনে আগুনের পর রাজধানীজুড়ে অভিযান শুরু করে সরকারের পাঁচটি সংস্থা—রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। অভিযানে রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলা ও সিলগালা করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
ওই সব অভিযানে রেস্তোরাঁর কর্মীদের গ্রেপ্তার ও জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ডিএমপি ১৩ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনে ১ হাজার ১৩২টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ৮৭২ জনকে গ্রেপ্তার করে। যাঁদের প্রায় সবাই রেস্তোরাঁর কর্মচারী। অন্যদিকে রাজউক ৩৩টি ভবনে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা জরিমানা করে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুটি ভবন ও দুটি রেস্তোরাঁ সিলগালা করার পাশাপাশি ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ২২টি প্রতিষ্ঠানকে, পরিমাণ ৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ।
এর বাইরে সারা বছরই রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থা।বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ আইন অনুযায়ী, ৩০ জন বা তারনচেয়ে বেশি মানুষ যেখানে বসে টাকার বিনিময়ে মানসম্মত খেতে পারেন সেটিই রেস্তোরাঁ।
রেস্তোরাঁর মালিকদের দাবি, নিবন্ধন ও লাইসেন্সপ্রক্রিয়া অনেক জটিল। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার দপ্তরে দৌড়াতে দৌড়াতে তাঁদের হয়রান হতে হয়।
তবে এ বিষয়ে লাইসেন্স প্রদানকারী সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, সব বিষয় ছাড় দিলে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় না। অনেকেই নিয়ম না মেনে ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের দেওয়া আইন ও বিধি মানতে রেস্তোরাঁর মালিকদের অনেকেই আগ্রহী নয়। দায়সারাভাবে ব্যবসা করে অতিরিক্ত বানিজ্য করার প্রবণতাই বেশি দেখা যায়।
ঢাকায় রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন এমন একজন বলেন, রেস্তোরাঁ লাইসেন্স করার প্রক্রিয়া যদি সহজ করা হতো, তাহলে প্রায় সবাই নিবন্ধন ও লাইসেন্স করতে আগ্রহী হতো। এমন কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়, যেগুলো জোগাড় করতে করতেই মাসের পর মাস চলে যায়। যে কারণে, অনেকেই ব্যবসা করার ধৈর্য ও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। নিবন্ধন ও লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কয়েক দফা সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এতে কোন কাজ হয়নি। সরকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবিষয়ে নিরবতা পালন করে যাচ্ছে।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে হোটেল রেস্তোরাঁর সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। এসব হোটেল রেস্তোরাঁর লাইসেন্স না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে একজন রেস্টুরেন্ট মালিক বলেন, ঢাকার এমন অসংখ্য ভবন আছে, যেগুলোর বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছর। এসব ভবন করার সময় বর্তমান সময়ের মতো এত সুপরিকল্পিতভাবে নকশা এবং কোন তলা কী কাজে ব্যবহৃত হবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি। কিন্তু রেস্তোরাঁর লাইসেন্স করতে হলে যে ভবনে রেস্তোরাঁ হবে, ওই ভবনের দলিলপত্র, ভবনের নকশাসহ অনেক তথ্য দিতে হয়। ভবনমালিকেরা ভাড়াটেদের দলিল ও নকশা দিতে চান না। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যাওয়া মানে দীর্ঘ সূত্রিতায় পড়ে যাওয়া।
নিবন্ধন পাওয়ার পরে লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছেন এমন একজন বলেন, লাইসেন্স প্রক্রিয়া অনেক বেশি জটিল। অনেক আগে থেকে তাঁরা ব্যবসা শুরু করলেও সব নথি জোগাড় করতে না পারায় এত দিন নিবন্ধন করতে পারেন নি।এখন নিবন্ধন করেছেন।
রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমে নিবন্ধন করতে হয়। এ জন্য বেশ কিছু নথি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিতে হয়। এর মধ্যে নিজের জমিতে রেস্তোরাঁ করলে একরকম নথি এবং ভাড়া করা ভবনে করলে আরেক রকম নথি দিতে হয়।
নিজ জমিতে রেস্তোরাঁ করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিতে হয়: ১. জমির মালিকানার মূল দলিল, নামজারি, বাড়িভাড়া বা ইজারা চুক্তির সত্যায়িত কপি। ২, ভবন নির্মাণের অনুমোদন ও শর্ত পূরণসংক্রান্ত দলিলাদির সত্যায়িত কপি। ৩. ডিটেইল স্ট্রাকচারাল প্ল্যান, নকশা ও সুবিধাদির বিবরণসংক্রান্ত দলিলাদির সত্যায়িত কপি। ৪. ব্যবসা পরিচালনা–সংশ্লিষ্ট অনুমতিপত্র, ট্রেড লাইসেন্স বা সনদের সত্যায়িত কপি। ৫. ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে আবেদন ফি জমা দেওয়ার কপি। ৬. বিগত অর্থবছরে পরিশোধিত আয়কর প্রদানের প্রমাণকের সত্যায়িত ফটোকপি। ৭. ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ স্বত্বাধিকারী/অংশীদার/পরিচালকবৃন্দের নাম ও ঠিকানা। ৮. মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলস, এবং মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশনের সত্যায়িত ফটোকপি।
এসব নথি দেওয়ার পর রেস্তোরাঁর নিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। ইস্যুর তারিখের পরের এক বছরের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি সংস্থার ছাড়পত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিতে হয়।
এর মধ্যে রয়েছে নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি। ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে লাইসেন্স ফি প্রদানের মূল কপি এবং আবেদনকারীর অঙ্গীকারনামা। সিভিল সার্জন বা সরকার অনুমোদিত কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের দেওয়া হোটেল কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের স্বাস্থ্যগত সনদ। হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি। বিগত অর্থবছরে পরিশোধিত আয়কর প্রত্যয়নপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) নিবন্ধন নম্বর ও প্রত্যয়নপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। পরিবেশগত ছাড়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। অগ্নি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস দুর্ঘটনার নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সনদপত্রের সত্যায়িত কপি। রাজউক/পৌরসভা/উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত প্ল্যান ও ডিজাইনের সত্যায়িত ফটোকপি। স্বত্বাধিকারী পরিচালকদের ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
রেস্তোরাঁর আসনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে নিবন্ধন ও লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করা হয়। আবার আসনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে রেস্তোরাঁর ধরনও ঠিক করা হয়। যেমন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে রেস্তোরাঁয় যদি ৩০ থেকে ১০০ আসন থাকে, তাহলে এর ধরন হবে ‘ডি’। সে ক্ষেত্রে রেস্তোরাঁয় শীতাতপনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা এসি থাকলে নিবন্ধন ফি তিন হাজার টাকা আর নন–এসি হলে দুই হাজার টাকা ফি দিতে হয়। রেস্তোরাঁয় ১০১ থেকে ২০০ আসন থাকলে এর ধরন হবে সি। সে ক্ষেত্রে এসি হলে সাড়ে তিন হাজার টাকা আর এসি না থাকলে আড়াই হাজার টাকা ফি হিসেবে সরকারি কোষাগারে দিতে হয়। একইভাবে ২০১ থেকে ৩০০ আসন পর্যন্ত হলে তার ধরন হবে বি। আর ৩০০ আসনের বেশি থাকলে তার ধরন হবে এ। সে ক্ষেত্রে ‘বি’ ধরনের ফি এসি চার হাজার আর নন–এসি হলে তিন হাজার টাকা। আর রেস্তোরাঁর ধরন এ এসি হলে সাড়ে চার হাজার টাকা, নন–এসি হলে সাড়ে তিন হাজার টাকা।আবার লাইসেন্স করার সময়ও সরকারি কোষাগারে নির্ধারিত পরিমাণ ফি জমা দিতে হয়।
নিয়মের মধ্যে থেকে এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ব্যবসায়ীরা যাতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে পারেন, সেই পরিবেশ সরকারকে তৈরি করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল।নগর-পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের পাশাপাশি হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাই রেস্তোরাঁগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনা দরকার।
নিবন্ধন ও লাইসেন্সপ্রক্রিয়া সহজ করার বিষয়টি ভাবতে হবে। তবে যেসব রেস্তোরাঁ অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে, এসব ক্ষেত্রে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। রেস্তোরাঁ ব্যবসা তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থাগুলোরও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে কোনো উদ্যোগই শেষ পর্যন্ত কাজে আসবে না বলে মনে করেন তারা।