“সিএমপি’র বন্দর থানার ধারাবাহিক সফল অভিযান
ওসি আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে শিশু নির্যাতনকারী, ডাকাত ও কুখ্যাত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার-
চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বন্দর। এখানে প্রতিনিয়ত নানা অপরাধী চক্র সক্রিয় থাকে। মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ থানার সাধারণ মানুষ আতঙ্কে ছিলেন। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে একের পর এক সফল অভিযান জনমনে নতুন আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। গত এক সপ্তাহে তিনটি বড় অভিযানে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে শিশু নির্যাতনকারী, ডাকাত চক্র ও পুলিশের উপর হামলার মূল হোতা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা।১১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে বন্দর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (মামলা নং-০৯) একটি মামলা দায়ের হয়, যেখানে মাত্র ৪ বছরের এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি মো. শাহিদ @ শাহিন মজুমদার (২২) গা-ঢাকা দিয়েছিল। ওসি আফতাব উদ্দিনের দিকনির্দেশনায় এসআই (নিঃ) জিল্লুর রহমান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২১ আগস্ট রাত ১০টা ১০ মিনিটে বন্দর থানাধীন মধ্যম গোসাইলডাঙ্গা এলাকার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত শাহিনের স্থায়ী ঠিকানা চাঁদপুর জেলার কচুয়া হলেও সে দীর্ঘদিন ধরে বন্দর এলাকায় অবস্থান করছিল। গ্রেফতারের পর তাকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়।
এই অভিযানে বন্দর থানার দ্রুত পদক্ষেপ জনমনে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অভিভাবকরা পুলিশকে ধন্যবাদ জানান এবং এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার দাবি করেন।
১৯ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে বন্দর থানা পুলিশ অভিযান চালায়। ওসি আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে এসআই আসাদুল হক ও সঙ্গীয় ফোর্স সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন তিনজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো—১. মো. জসিম (৩৩) – ভোলা জেলার বাসিন্দা, বর্তমানে সল্টগোলা আজাদ কলোনীতে বসবাস করছিল। ২. মো. ইলিয়াছ @ লেদু (৩৫) – আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা, বর্তমানে লোহারপুল এলাকায় বসবাস করছিল।
৩. মো. আরমান হোসেন @ তুষার (২৮) – মধ্যম গোসাইলডাঙ্গার স্থানীয়।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়—
১টি লম্বা হাতলযুক্ত ধারালো দা
৫টি লোহার রড গ্রেফতারের পর তাদের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা (ধারা ৩৯৯/৪০২ পেনাল কোড-১৮৬০) রুজু করা হয়। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে ১১ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে। বন্দর থানাধীন ঈশান মিস্ত্রিরহাট খালপাড় এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের ব্যানারে শাকিলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী মিছিল বের করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে শাকিল ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এই হামলায় বন্দর থানার এসআই (নিঃ) আবু সাঈদ রানা গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হন। হামলার ঘটনায় বন্দর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়, যেখানে মোট ৪০ জন এজাহারনামীয় আসামি ও আরও ৩০-৪০ জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীকে অভিযুক্ত করা হয়।
ওসি আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক চৌকস টিম টানা অভিযান চালিয়ে ১৭ আগস্ট ভোর ৩টা ৫ মিনিটে পতেঙ্গা থানাধীন সী-বিচ আউটার রিং রোড এলাকা থেকে শাকিলকে কন্টেইনারবাহী গাড়িতে পালানোর সময় গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরে সহযোগী মো. আরিফ হোসেন (৩২)-কে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়—১টি দেশীয় তৈরি একনলা এলজি বন্দুক ৩ রাউন্ড কার্তুজ
১টি লোহার কিরিচ উল্লেখ্য, শাকিলের বিরুদ্ধে সিএমপি ও ডিএমপির বিভিন্ন থানায় মোট ৯টি মামলা রয়েছে।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ধারাবাহিক এই তিনটি বড় অভিযানে শিশু নির্যাতনকারী, ডাকাত চক্র ও কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। স্থানীয়রা জানান, বন্দর থানায় ওসি আফতাব উদ্দিন যোগদানের পর থেকেই অপরাধ দমনে পুলিশ আরও গতিশীল হয়েছে।
তাদের মতে—“ওসি আফতাব উদ্দিন একজন সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা। তার নেতৃত্বে বন্দর থানার চিত্র পাল্টে যাচ্ছে।”
“শিশু নির্যাতনকারী, ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ যেভাবে তৎপরতা দেখিয়েছে, তা জনবান্ধব পুলিশিংয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”
সিএমপি’র বন্দর থানার এই ধারাবাহিক সফলতা শুধু এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেনি, বরং পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় করেছে। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে— যথাযথ নেতৃত্ব থাকলে পুলিশের পক্ষে যেকোনো অপরাধ দমন সম্ভব।
ওসি আফতাব উদ্দিন ও তার নেতৃত্বাধীন টিমকে অভিনন্দন জানিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল বলেন—“আমরা চাই, বন্দর থানার এই ধারা অব্যাহত থাকুক। তাহলে চট্টগ্রাম নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই থানা এলাকায় অপরাধীরা আর মাথা তুলতে পারবে না।”