— বাহার উদ্দিনের পরিবারের করুণ বিদায়”
আড়াই বছর পর দেশে ফেরার আনন্দে বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে চেয়েছিলেন ওমান প্রবাসী মো. বাহার উদ্দিন। ফেসবুকে লিখেছিলেন, “স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার।” প্রিয়জনদের সঙ্গে পুনর্মিলনের প্রতীক্ষায় চোখ ছিল ঝলমলে, হৃদয়ে ছিল উত্তেজনা আর ভালোবাসার বাঁধভাঙা ঢেউ। কিন্তু সেই স্বপ্নের যাত্রা মুহূর্তেই পরিণত হলো এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্নে।
বাহার উদ্দিনকে স্বাগত জানাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছুটে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী কবিতা, মেয়ে মীম, মা মুরশিদা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা। সবাই একসাথে ফিরছিলেন বাড়ির দিকে। কিন্তু কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে, বাড়ি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে, ঘুমে ঢুলে পড়া এক অসচেতন চালকের কারণে মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খালে পড়ে যায়।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বাহারের মা, স্ত্রী, কন্যাসহ পরিবারের সাতজন। যে বাহার উদ্দিন স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন, তিনি দেশে ফিরে পেলেন শুধু শূন্যতা, কান্না আর অপূরণীয় বেদনা।
বেঁচে ফেরা বাহার উদ্দিন ও তার সঙ্গী আব্দুর রহিম জানান, গাড়ির চালক রাসেল দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তিতে ঘুমে ঢুলছিলেন। বারবার বলার পরও তিনি গাড়ি থামিয়ে বিশ্রাম নেননি। একবার কুমিল্লায় অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেও শেষরক্ষা হয়নি। ভয়ঙ্কর সেই মুহূর্তে গাড়িটি ধীরে ধীরে খালের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছিল। তখন বারবার চালককে গাড়ির লক খুলতে বলা হয়, কিন্তু সে কিছুই না করে জানালার কাঁচ নামিয়ে নিজেই বেরিয়ে পালিয়ে যায়—কাউকে বাঁচানোর সামান্য চেষ্টা পর্যন্ত করেনি।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ওমান প্রবাসী ব্যবসায়ী, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর সন্তান বরিউল হোসেন। তিনি বলেন—
“একজন প্রবাসী পরিবার এভাবে চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া কতটা হৃদয়বিদারক, তা শুধু আমরা প্রবাসীরাই বুঝি। বাহার উদ্দিনের জীবনে এই ট্র্যাজেডি কল্পনাতীত। আনন্দ নিয়ে যে বাড়ি ফেরা, তা পরিণত হলো চিরবিদায়ের কালো অধ্যায়ে। ওমানের সব প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে আমি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি—এই পরিবারকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এবং বাহার ভাইকে যেন এই সীমাহীন কষ্ট সইবার শক্তি দেন।”
এই ঘটনা আমাদের শুধু শোকাহতই করে না, বরং নতুন করে সতর্ক করে দেয় চালকের দায়িত্বহীনতার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে। একটি ঘুমের জন্য নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে একটি পুরো পরিবার, ভেঙে পড়তে পারে এক প্রবাসীর সব স্বপ্ন।
আসুন, আমরা যারা প্রবাসে বা দেশে আছি, সকলে এই পরিবারের জন্য দোয়া করি। যেন আল্লাহ তাদের শহীদের মর্যাদা দেন, এবং তাদের ভালোবাসার স্মৃতি বাহার উদ্দিনের হৃদয়ে সান্ত্বনার আলো হয়ে জ্বলতে থাকে।