1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় সিএনজির ধর্মঘট প্রত্যাহার। বোদায় ওয়ার্ডবয়কে দিয়ে অপারেশন, ক্লিনিক মালিক আটক রূপগঞ্জে বিনামূল্যের সরকারি বই বিক্রির অভিযোগে অধ্যক্ষকে শোকজ ঘোড়াঘাটে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট প্রদান গোবিন্দগঞ্জে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ঢেউটিন ও চেক বিতরণ কালিহাতীতে চাদাঁবাজির অভিযোগে এলেঙ্গায় মানববন্ধন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁওয়ে খয়রাতি সাহায্য,(জিআর)রিলিফ প্রকল্পের ৬০০ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তৃতীয় দিনের মতো চলছে সিএনজির ধর্মঘট গাইবান্ধায় মাদকবিরোধী অভিযানে তিন যুবক আটক

কণ্ঠরোধের কালোছায়া: ‘করাত কাশেম’কে থামাতে কি গাইবান্ধায় অপরাধীরা ঐক্যবদ্ধ?

পলাশবাড়ী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

একজন মানুষের মুখ বন্ধ করতে যদি ছয়জন লোক লাঠি নিয়ে একজোট হয়, বুঝতে হবে সে সত্য বলছিল।

মওদুদ। পেশায় সাধারণ একজন মানুষ। তবে সাহসিকতায় অপ্রতিরোধ্য। “করাত কাশেম” নামে পরিচিত তার ছদ্মনামের ফেসবুক আইডিটি গত কয়েকমাস ধরে পলাশবাড়ী তথা গাইবান্ধা জেলার সামাজিক মিডিয়ায় একটি আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়ায়— তবে তা সৎ মানুষের জন্য নয়, অপরাধীদের জন্য।জানা গেছে, করাত কাশেম সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নিয়মিতভাবে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, কিশোর গ্যাং, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং এমনকি রাজনৈতিক দলের ভেতরের দুর্নীতিবাজদের নাম, ছবি, লোকেশন সহকারে ফাঁস করতেন। স্থানীয় ভাষায় “সবাইকে একসাথে ফাঁসিয়ে দিত”।সেই সত্যপ্রকাশমূলক কর্মকাণ্ডই যেন কাল হলো তাঁর জন্য। রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ: অপরাধীদের মুখোশ খুলতেই হামলা? অদ্য পলাশবাড়ী শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রকাশ্য দিবালোকে মওদুদের উপর সংঘবদ্ধ হামলা চালায় জামায়াতে ইসলামী ৪-৫ জন যুবক। রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠাতে হয়।এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি, যদিও ভিডিও ফুটেজ ও স্থানীয় মানুষের বক্তব্যে হামলাকারীদের পরিচয় জানা গেছে। অনেকেই বলছেন, “এই হামলা পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সংগঠিত। কারণ, মওদুদ নিয়মিত কিছু জামাত-শিবির সংশ্লিষ্ট অপরাধীর নাম বলতেন যারা মাদক, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত।”

জামায়াতি গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ: একটি ভয়ঙ্কর অভিযোগ, ঘটনার পর স্থানীয়ভাবে উঠেছে আরও একটি আশঙ্কাজনক অভিযোগ— গাইবান্ধার জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্ট একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে, যাতে করাত কাশেমের আইডি থেকে তাদের অপরাধজনিত কর্মকাণ্ড ফাঁস না হয়।স্থানীয়দের মতে, হামলার পেছনে এই গোষ্ঠীর ‘দখলদার ও হেফাজতবাদী’ মিশ্র স্বার্থ রয়েছে। এমনকি হামলার দিন একটি মসজিদে মওদুদ সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে ধর্মীয় আবেগকে অপব্যবহার করার চেষ্টাও হয়।

রাজনীতি কি দায়মুক্তির আশ্রয়? পলাশবাড়ী ও গাইবান্ধার স্থানীয় রাজনীতির একটি বড় সমস্যা হলো— অপরাধী চক্রের অনেকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। বিশেষত জামায়াত, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যম ও তৃণমূল স্তরে থাকা কিছু নেতা নিজের ‘ক্যাডার’ হিসেবে এসব দুর্বৃত্তদের ব্যবহার করেন।তবে মওদুদের ওপর হামলার পর পাল্টে যাচ্ছে কিছু বাস্তবতা। দর্শক নয়, সহমর্মী হয়ে উঠছেন কিছু নেতা: ব্যতিক্রম কয়েকজন, এদিকে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর করাত কাশেমকে হাসপাতালে দেখতে জান বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও উৎসুক সাধারণ মানুষ। তারা ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “সাংবাদিকের কাজ সাংবাদিক করুক, সোশ্যাল মিডিয়ার কাজ সোশ্যাল মিডিয়া করুক— কিন্তু একজন সত্য বললে তার গায়ে হাত তোলা বর্বরতা। এর বিচার চাই।” সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জামায়াতের অংগসংগঠনে সাবেক অনেক নেতাই এর সমালোচনা ও তীব্র প্রতিবাদ করেছেন।তবে বিতর্কও রয়েছে। অনেকে বলছেন, “মোতালেব সরকার বকুল অতীতে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন এবং আবুল কালাম আজাদ এলাকায় ‘কনডম কালাম’ নামে খ্যাত।” তা সত্ত্বেও তারা করাত কাশেমকে দেখতে গেছেন, যা অনেকের কাছে ইতিবাচক বার্তা।সাংবাদিকদের চুপ থাকা: নাকি সহানুভূতির অভাব? আরও বড় উদ্বেগের বিষয়, পলাশবাড়ীর প্রায় সব সাংবাদিক এই ঘটনায় নীরব থেকেছেন। বরং সোশ্যাল মিডিয়ায় করাত কাশেমকে কটাক্ষ করে পোস্ট দিয়ে আক্রমণকারীদের ন্যায্যতা দিতে চেয়েছেন কেউ কেউ।অনেকে বলছেন, “কারণ করাত কাশেমের পোস্টের পর অনেক সাংবাদিকের ‘পেইড নিউজ’ ও ব্ল্যাকমেইল ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল।” এখানেও উঠে আসে সেই পুরনো প্রশ্ন— সাংবাদিকতা কি সত্য প্রচার, না স্বার্থ রক্ষা?পুলিশ কোথায়? প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, এই হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ বলছে, “তদন্ত চলছে।” স্থানীয় মানুষ বলছে, “পুলিশের যদি সদিচ্ছা থাকতো, ভিডিও দেখে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার করা যেত।”সামাজিক প্রতিরোধই এখন একমাত্র আশ্রয়, আজ করাত কাশেমের মত সাহসী কণ্ঠকে যদি সমাজ রক্ষা না করে, কাল হয়তো কেউ আর অপরাধের বিরুদ্ধে মুখ খুলবে না। যে সমাজ সত্য বলা মানুষের মুখে লাঠি চালায়, সে সমাজে ভালো মানুষ টিকে থাকতে পারে না।শেষ কথা, মওদুদ ওরফে করাত কাশেম একজন আইডিয়ালিস্ট হতে পারেন না, কিন্তু তিনি ছিলেন সমাজের আয়না। তাঁর পোস্টে হয়তো ভাষাগত ত্রুটি ছিল, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল অপরাধ উন্মোচন। সেই অপরাধীরা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর উপর হামলা চালিয়েছে।

এই হামলা যদি বিচারহীন থাকে, তাহলে বুঝতে হবে— পলাশবাড়ী শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, নৈতিকভাবেও ধ্বংসের পথে। আমরা কি তা হতে দিতে পারি?

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট