1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০২:১৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় সিএনজির ধর্মঘট প্রত্যাহার। বোদায় ওয়ার্ডবয়কে দিয়ে অপারেশন, ক্লিনিক মালিক আটক রূপগঞ্জে বিনামূল্যের সরকারি বই বিক্রির অভিযোগে অধ্যক্ষকে শোকজ ঘোড়াঘাটে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট প্রদান গোবিন্দগঞ্জে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ঢেউটিন ও চেক বিতরণ কালিহাতীতে চাদাঁবাজির অভিযোগে এলেঙ্গায় মানববন্ধন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁওয়ে খয়রাতি সাহায্য,(জিআর)রিলিফ প্রকল্পের ৬০০ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তৃতীয় দিনের মতো চলছে সিএনজির ধর্মঘট গাইবান্ধায় মাদকবিরোধী অভিযানে তিন যুবক আটক

চন্দনাইশে ইয়াবার গডফাদার গাউস মোহাম্মদ মিল্টন গ্রেফতার

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫

চন্দনাইশে গ্রেফতার ইয়াবার গডফাদার গাউস মোহাম্মদ মিল্টন: রাজনীতি ও ক্ষমতার ছায়ায় গড়ে তুলেছিল ইয়াবা সাম্রাজ্য”

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার ওসি গোলাম সারোয়ারের নেতৃত্বে পরিচালিত এক সফল অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে বহুল আলোচিত এবং চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী গাউস মোহাম্মদ মিল্টনকে।
দীর্ঘদিন ধরে যিনি “টেকনাফ-কক্সবাজার অঞ্চলের ইয়াবার সম্রাট” নামে কুখ্যাত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে থেকে মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অর্থ আত্মসাতের মতো একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। রাজনীতি ছিল মুখোশ, আসল পরিচয় ছিল ইয়াবা সম্রাট মিল্টনের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় হলেও তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করতেন টেকনাফের ইয়াবা সাম্রাজ্যের কেন্দ্রস্থল নাজিরপাড়ায়। সেখান থেকেই সারা দেশে ছড়িয়ে দিতেন কোটি কোটি টাকার ইয়াবার চালান। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের পদ-পদবি ব্যবহার করে নিজেকে “নেতা” হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। তার বাবা বরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ায় এবং স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরীর আশীর্বাদ থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই তিনি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজত্ব চালিয়ে আসছিলেন।
ক্রসফায়ারের তালিকায় ছিল, কিন্তু বাঁচিয়ে রাখা হয় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায়-সূত্র জানায়, কুখ্যাত ওসি প্রদ্বীপ কুমার দাশের ‘ক্রসফায়ার লিস্ট’-এ মিল্টনের নাম থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাবে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। কিন্তু তার অন্যতম সহযোগী সাইফুলকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়ার পরও প্রদ্বীপ হত্যা করেন। সাইফুল ছিল মিল্টনের প্রধান ইয়াবা পার্টনার, যার মাধ্যমে মিল্টন কোটি কোটি টাকার ইয়াবা পাচার করত। সাইফুলের কাছ থেকে নেওয়া ৫০ কোটি টাকার ভাগ না দেওয়ার কারণে মিল্টনের ষড়যন্ত্রে ওসি প্রদ্বীপ দুবাই থেকে এনে তাকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার এক ভয়ানক অধ্যায় হচ্ছে, হত্যার আগমুহূর্ত পর্যন্ত সাইফুলকে বাঁচিয়ে রাখার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রদ্বীপ। এই অপারেশনে ওসি প্রদ্বীপ ও মিল্টনের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র ছিল বলেও গোপন সূত্র জানিয়েছে। প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় চলত ইয়াবার রাজত্ব-মিল্টনের ইয়াবা সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে তৎকালীন কক্সবাজার থানার সেকেন্ড অফিসার এবং পরবর্তীতে চন্দনাইশ থানার ওসি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাঁর সক্রিয় সহযোগিতায় মিল্টন নির্বিঘ্নে চালিয়ে গেছে ইয়াবার বিশাল ব্যবসা।
ভয়ঙ্কর ছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থাও মিল্টনের পাজেরো গাড়ি ছিল এক ধরনের ‘মিনি কনভয়’। সামনে-পেছনে থাকত ক্যাডার বাহিনী। কেউ তার গাড়ি তল্লাশি করার সাহস করত না। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে প্রশাসনের সামনেই সে গড়ে তোলে ভয়ঙ্কর মাদকজগত। এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় ব্যবহার করে এবং কর্নেল অলি আহমেদের গাড়িতে গুলি করার মতো ঘটনার ইতিহাসকে ব্যবহার করে প্রশাসনকে ভয় দেখাতেন তিনি।

টেকনাফের ইয়াবা নেটওয়ার্কে ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা-মিল্টন ছিলেন কুখ্যাত ইয়াবা গডফাদার বদির ভাই মৌলভী মুজিব, পাংছড়ির পাড়ার মেম্বার সামসু, ইদ্রিস এবং কথিত ইয়াবা একরামের অন্যতম সহযোগী। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, টেকনাফের জনপ্রিয় কমিশনার আকরামকে র‍্যাব ক্রসফায়ারে হত্যা করলেও আসল ইয়াবা একরাম এখনো জীবিত এবং মিল্টনের ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে পরিচিত। গরু চুরির সিন্ডিকেটেও জড়িত ছিল মিল্টন-টেকনাফের মাদক কারবার ছাড়াও মিল্টনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় রয়েছে গরু চুরির অভিযোগ। স্থানীয় এমপি ‘বাইট্টা জাফর’ খ্যাত এক প্রভাবশালী ব্যক্তির গরু চুরি সিন্ডিকেটের সঙ্গে তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে ভয়াবহ সব তথ্য-চন্দনাইশ থানার ওসি গোলাম সারোয়ার বলেন, “গাউস মোহাম্মদ মিল্টনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার কাছ থেকে ইয়াবা ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যকলাপের সকল তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।” তার গ্রেফতারের পর বিভিন্ন থানায় পুরনো মামলার খোঁজ মিলছে। সাইফুল হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা, প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং রাজনৈতিক শক্তিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার প্রমাণ একে একে উঠে আসছে। মিল্টন বিগত সময় কর্নেল অলি আহমদের গাড়িতে গুলি চালানোর ঘটনার অন্যতম হোতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল। সে এক সময় চন্দনাইশ থানার কুখ্যাত বড়মাপের সন্ত্রাসী হিসেবে দাপট চালাত। রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে মিল্টন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভয়ভীতি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, মিল্টনের কাছে এখনও বিপুল পরিমাণে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ রয়েছে, যা সে নিজের নিরাপত্তা এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে থাকে। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মিল্টনের গ্রেফতারের পর এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছেন, যেন তার বাড়ি ও আশপাশের জায়গাগুলোতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এলাকাবাসীর মতে, শুধু মিল্টনকে গ্রেফতার করলেই চলবে না — তার সন্ত্রাসী বাহিনী এবং অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করাই এখন জরুরি। প্রশাসনের প্রতি স্থানীয়দের জোরালো আহ্বান, যেন এই ভয়ঙ্কর অপরাধী চক্রের সব শিকড় উপড়ে ফেলা হয়। এই রিপোর্টে উঠে আসা তথ্যসমূহ সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে বলেই প্রত্যাশা। দীর্ঘদিন ধরে মাদকের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত টেকনাফ-কক্সবাজার অঞ্চলকে রক্ষা করতে হলে এমন চক্রকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে — এমনটাই মত সচেতন নাগরিকদের।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট