সময়ের গতিপথে আমরা কত মানুষের সাথে পরিচিত হই, কত সম্পর্ক তৈরি হয়, কতজন হারিয়ে যায়, আবার কতজন রয়ে যায় স্মৃতির পাতায়। কিন্তু কিছু কিছু বন্ধুত্ব এমন হয়, যেগুলো জীবনের গল্পে রঙ ছড়িয়ে দেয়, হৃদয়ের গভীরে দাগ কেটে যায়। গতকাল এমনই এক সন্ধ্যার সাক্ষী হয়েছিলাম, যেখানে পুরনো বন্ধুত্বের উষ্ণতায় যেমন মন ভরে উঠেছিল, তেমনি নতুন দুই বন্ধুর আগমনে আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছিল।
একজন লেখক, সাংবাদিক, এবং টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে আমি প্রতিনিয়ত নানা মানুষের সাথে মিশি, নানা ঘটনা দেখি। কিন্তু গত সন্ধ্যার অভিজ্ঞতা ছিল একটু ভিন্ন। কারণ, একদিকে পুরনো বন্ধুদের সান্নিধ্য, অন্যদিকে নবাগত দুই বন্ধুর সাথে পরিচয়ের আনন্দ—সব মিলিয়ে এক চমৎকার অনুভূতি!
ইফতার, বন্ধুত্ব আর গল্পের সন্ধ্যা-
ঘটনাস্থল ছিল একটি প্রিয় জায়গা—একটি ঘরোয়া পরিবেশ, যেখানে আমরা সবাই একত্র হয়েছিলাম ইফতার ও দোয়া মাহফিলের জন্য। মূল আয়োজনে ছিলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় সেলিম উল্লাহ চৌধুরী, এবং উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে, যাদের সবার সাথেই এক অদ্ভুত হৃদ্যতা কাজ করছিল।
আমি একটু দেরি করেই পৌঁছেছিলাম, কিন্তু ঢোকার সাথে সাথেই যেন এক অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য অনুভব করলাম। টেবিল জুড়ে সাজানো ছিল বিভিন্ন রকমের ইফতার, আর তার চেয়েও বড় ব্যাপার ছিল
মানুষগুলোর উচ্ছ্বাস। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বন্ধুদের সাথে কাটানো পুরনো দিনের স্মৃতি, বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ, এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
দুই নতুন বন্ধুর সাথে পরিচয়-
কিন্তু আসল চমক অপেক্ষা করছিল একটু পরে। যখন পরিচয় হলো দুইজন নতুন বন্ধুর সাথে—একজন নতুন এডভোকেট নারী বন্ধু এবং আরেকজন স্মার্ট, বুদ্ধিদীপ্ত এক তরুণ। নারী বন্ধুর নাম ফাহিমা শারমিন, একজন নবীন আইনজীবী। তাকে দেখেই মনে হলো—তিনি আত্মবিশ্বাসী, জ্ঞানী এবং স্পষ্টবাদী। তার চোখে ছিল এক ধরনের দীপ্তি, যা একজন সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি প্রকাশ করে। কথার ফাঁকে যখন জানলাম তিনি আইন পেশায় নতুন হলেও ইতোমধ্যে বেশ দক্ষতার ছাপ রেখেছেন, তখন মনের মধ্যে শ্রদ্ধার এক ঢেউ বয়ে গেল। সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার এক নতুন সৈনিক পেয়েছি যেন!
আরেকজন বন্ধু, যিনি খুবই প্রাণবন্ত ও হাসিখুশি স্বভাবের। কথা বলতে গেলে এমন একধরনের আকর্ষণ সৃষ্টি করেন, যেন তার কথাগুলো শোনার জন্য সবাই মুখিয়ে থাকে। তার উপস্থিতি ছিল একেবারেই প্রাণোচ্ছল, এবং তার চিন্তাভাবনা বেশ স্বতঃস্ফূর্ত ও বাস্তবধর্মী।
বন্ধুত্বের সৌন্দর্য-
বন্ধুত্বের সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো, এখানে কোনো বাধা নেই—নেই কোনো সামাজিক অবস্থানের হিসাব, নেই কোনো বয়সের পার্থক্য। শুধু অনুভূতি আর আন্তরিকতাই এখানে প্রধান। এই দুই নতুন বন্ধুকে দেখে মনে হলো, বন্ধুত্ব সত্যিই এক অলৌকিক ব্যাপার। আমরা কয়েক মুহূর্তেই একে অপরের এত আপন হয়ে গেলাম, যেন বহু বছরের পরিচিত!
সন্ধ্যার আলো ঝিমিয়ে আসছিল, কিন্তু আমাদের গল্পের ঝড় যেন থামার নাম নিচ্ছিল না। আইন, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য, এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা—সবকিছু নিয়েই কথা চলছিল। মাঝে মাঝে হো হো করে হাসি, কখনোবা গম্ভীর আলোচনা।
স্মৃতির পটে আঁকা এক মুহূর্ত-
একটা সময় মনে হলো, এ যেন শুধুই একটি ইফতার মাহফিল নয়—এ এক বন্ধুত্বের মিলনমেলা। পুরনো বন্ধুদের সান্নিধ্যে যেমন অতীতের সোনালি দিনগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল, তেমনি নতুন দুই বন্ধুর সাথে পরিচয়ে মনে হচ্ছিল, জীবনের পথে এমন কিছু মানুষ মেলে, যারা অল্প সময়েই হৃদয়ের কাছাকাছি চলে আসে।
সেদিনের সন্ধ্যা যেন এক ছবি হয়ে গেল আমার মনে—একটি প্রাণবন্ত, উষ্ণ, এবং ভালোবাসায় মোড়ানো ছবি।
শেষ কথা-
আমরা প্রতিদিন ব্যস্ততার দৌড়ে ছুটছি, সম্পর্কগুলো যেন ক্রমেই যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু কিছু মুহূর্ত আসে, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—বন্ধুত্বের উষ্ণতা এখনো আছে, ভালোবাসার শক্তি এখনো প্রবল।
সেই সন্ধ্যা ছিল এমনই এক মুহূর্ত—যেখানে আমি নতুন বন্ধুর সংস্পর্শে এলাম, যেখানে পুরনো সম্পর্ক নতুন করে জেগে উঠলো। হয়তো ভবিষ্যতে আবারও দেখা হবে, আবারও আমরা একই টেবিলে বসে গল্প করবো, কিন্তু এই প্রথম পরিচয়ের স্মৃতি আমার মনে গেঁথে থাকবে বহুদিন।
বন্ধুত্বের রঙে রাঙানো সেই সন্ধ্যা, এক কথায়—অপরাজেয়!