চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানায় গত রোববার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারী শিক্ষার্থীরা এক নারীনেত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। গ্রেপ্তারকৃত নারীনেত্রীর নাম কানিজ ফাতেমা লিমা। তিনি ৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ–মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং জিপিও শ্রমিক লীগের নেত্রী হিসেবে পরিচিত। তাকে থানায় নিয়ে আসার পর সন্ধ্যা নাগাদ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম আজাদী বলেন, “কানিজ ফাতেমা লিমা একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার এক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” তবে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের যে তালিকা রয়েছে, তা অনেক গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী। কানিজ ফাতেমা লিমা সম্পর্কে আরও বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, তিনি ২০১৬ সালে ছুটির অনুমতি ছাড়াই হংকংয়ে এক বছর চাকরি করেন। এরপর তিনি সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে দুই বছর কাজ করেন এবং তারপর দেশে ফিরে পোস্ট অফিসে যোগদান করেন। সরকারি চাকরি বিধির বিরুদ্ধে গিয়ে বিদেশে চাকরি করা এবং সরকারের অনুমতি ছাড়া বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে সমালোচিত হয়েছে।
এছাড়া, কানিজ ফাতেমা লিমার বিরুদ্ধে আরো একটি অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি প্রায় তিন বছর পোস্ট অফিসে উপস্থিত না থেকেও সরকারের বিধি-বিধান ভেঙে এককালীন বেতন গ্রহণ করেছেন। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী, কোনো সরকারি চাকরিজীবীকে বিদেশে চাকরি করতে হলে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়, কিন্তু কানিজ ফাতেমা লিমা সেগুলো মানেননি। এ বিষয়ে অবৈধ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ ওঠেছে যে, তিনি কিছু পোস্ট অফিস কর্মকর্তা ও শ্রমিক লীগের নেতাদের সাহায্যে সরকারি চাকরির সুবিধা লাভ করেছেন। তাদেরও সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ উঠেছে, যারা তাকে বিদেশে গিয়ে কাজ করতে এবং পরে সরকারী বেতন নিতে সহযোগিতা করেছেন।
চট্টগ্রামের নাগরিকদের মধ্যে এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ও আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা উচিত, এবং যেসব কর্মকর্তারা অবৈধভাবে তাকে সহযোগিতা করেছেন, তাদেরও তদন্ত করে শাস্তি দেওয়া উচিত। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্তের দাবি উঠেছে।
এদিকে, কানিজ ফাতেমা লিমার গ্রেপ্তার এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে আরো বিস্তারিত তদন্ত এবং বিচারিক পদক্ষেপের জন্য স্থানীয় আন্দোলনকারীরা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।