চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদ সমাজসেবার আড়ালে ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সদরঘাট থানায় দায়ের করা একটি মামলার এজাহারে সেই নাম ৮ নম্বর আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলেও আজাদ নিয়মিত অফিস করছেন এবং প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন। মামলার বাদী মোমেন হোসেন জয় দাবি করেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন ও পীড়নের জন্য আজাদ আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীরা আজাদের সেল্টারে মা ও শিশু হাসপাতালে রোগী সেজে আত্মগোপনে ছিল। ৪ নভেম্বর রাতে সদরঘাট থানায় মামুন হোসাইন
জয় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ০১, তারিখ ৪/১১/২০২৪। মামলায় ২৬৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীসহ আরো অনেকে। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৫০০-৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ৪ আগস্ট সকাল ১১টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১০টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আসামিরা সিটি কলেজ ও ইসলামিয়া কলেজ মোড়ে হামলা চালায়। বাশ, কাঠের লাঠি, ইট-পাথর, লোহার রড, অস্ত্রসহ তারা হামলা ও গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ককটেল ও বিস্ফোরক ব্যবহারের মাধ্যমে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়। সদরঘাট থানার ওসি রমিজ আহমদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মামলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আজাদসহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। আজাদ জামিনে না থাকলে তাকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সমাজসেবার আড়ালে মা ও শিশু হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিরা কেবল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সম্প্রতি সৃষ্ট সংকট ও অনিয়মের পেছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ মোরশেদ এবং সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে তারা দুইজনই বিশেষভাবে দায়ী। হাসপাতালের স্বার্থের বিপরীতে কাজ করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির প্রচেষ্টা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও এসেছে তাদের বিরুদ্ধে। হাসপাতালের কর্মীদের একটি অংশ মনে করছেন, মোরশেদ এবং আজাদের এসব কর্মকাণ্ডের কারণে হাসপাতালের নীতি-নৈতিকতা এবং সেবা মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতার অভাব, অর্থের অপচয় এবং আর্থিক অনিয়মের মতো ঘটনাগুলো নিয়ে গত কিছুদিন ধরে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, সম্প্রতি হাসপাতালের প্রশাসনিক এবং আর্থিক খাতের উপর তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যা হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করছে। হাসপাতালের স্বচ্ছতা ও গণমুখী সেবায় ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে হাসপাতালের কর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।