
প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ চিলিয়ান নাগরিক এবারের এই নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।
রানঅফ ভোটে ক্যাস্ত ও জারার মুখোমুখি এই লড়াইয়ে ক্যাস্ত স্পষ্টভাবেই এগিয়ে রয়েছেন বলে ইতোমধ্যেই জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে।
কঠোর অপরাধ দমন ও অভিবাসন বিরোধী বার্তা দিয়ে প্রচার চালানো ক্যাস্তের নির্বাচনী বক্তব্য চিলির অনেক ভোটারের মধ্যেই সাড়া ফেলেছে।
৫৯ বছর বয়সী ক্যাস্ত নির্বাচনী প্রচারে প্রায়ই বলেছেন, ‘দেশটি ভেঙে পড়ছে।’
নিজের এই বক্তব্য জোরালো ও বাস্তবসম্মত করতে নির্বাচনী প্রচারণা সময় তিনি প্রায়ই বুলেটপ্রুফ কাচের আড়াল থেকে বক্তব্য দেন।
এক সময় লাতিন আমেরিকার অন্যতম নিরাপদ ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পরিচিত চিলি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একের পর এক সংকটে পড়েছে।
ভয়াবহ কোভিড-১৯ মহামারি, সহিংস সামাজিক আন্দোলন ও বিদেশি সংগঠিত অপরাধ চক্রের প্রবেশের ফলে দেশটির পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে বদলে গেছে।
বহু বিষয়ে ক্যাস্ত চিলির বেশিরভাগ নাগরিকের অবস্থানের তুলনায় অনেক বেশি ডানপন্থী।
তবুও চার বছর ধরে চলা বামপন্থী সরকারের শাসনামলে অপরাধ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়ায়, পরিবর্তন চান দেশটির অনেক ভোটাররা, আর এ কারণেই নানা আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তারা ক্যাস্তকে ভোট দেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন।
ক্যাস্ত অবৈধভাবে বসবাসকারী শত শত অভিবাসীকে বহিষ্কারের অঙ্গীকার করেছেন। তিনি সব ধরনের গর্ভপাতের বিরোধী এবং এমনকি, তিনি সাবেক সামরিক শাসক অগুস্তো পিনোচেটের রক্তপিপাসু স্বৈরশাসনের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থনও জানিয়েছেন।
দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তাই বিষয়টিই সান্তিয়াগোর গৃহিণী উরসুলা ভিয়ালোবোসের (৪৪) কাছে সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার।
তিনি ক্যাস্তকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং মনে করেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু পরিবর্তন হলেও, সেই কঠোর পদক্ষেপগুলো মেনে নেওয়া যায়।
এএফপিকে উরসুলা ভিয়ালোবোস বলেন, ‘আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, রাস্তাঘাটের মোড়ে কিছু হবে কি না, সেই দুশ্চিন্তা ছাড়াই মানুষ যেন ভয় ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারে এবং রাতে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা যে চরম পরিস্থিতির মধ্যে আছি, সেখানে যদি শুরুতে কিছুটা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও হয়, তাহলে আমি সেটি মেনে নিতে প্রস্তুত।
তবুও যেন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ে তোলা হয়।’
জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৬০ শতাংশের বেশি চিলিয়ান মনে করেন, দেশের প্রধান সমস্যা নিরাপত্তা, আর এই উদ্বেগ অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা শিক্ষার মতো বিষয়গুলোকে অনেকটাই ছাপিয়ে গেছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে ভেনেজুয়েলা, পেরু, কলম্বিয়া ও ইকুয়েডরের অপরাধ চক্রগুলোর তৎপরতায় গত ১০ বছরে সহিংস অপরাধ বেড়েছে। তবে অপরাধ বৃদ্ধির তুলনায় অপরাধ ভীতি বেড়েছে আরও দ্রুত।
তবে ক্যাস্তের কঠোর অবস্থানকে অনেকের মনে আশঙ্কাও তৈরি করেছে যে তিনি ক্ষমতায় এলে চিলি আবার স্বৈরতান্ত্রিক অতীতের দিকে ফিরে যেতে পারে।
৭১ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত সিসিলিয়া মোরা বলেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি। কারণ, আমার মনে হয় যে অনেক কঠোরভাবে দমন-পীড়ন হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই আমি ক্যাস্তকে ভোট দেব না।’
সিসিলিয়া মোরা বলেন, ‘ডানপন্থী এই প্রার্থী আমাকে সামরিক শাসনের সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমি সে সময় বেঁচে ছিলাম, তখন আমি তরুণ ছিলাম। কিন্তু সেই দুঃসময় আমি ভোগ করেছি।’
তিনি ক্যাস্তকে ‘ইউনিফর্ম ছাড়া পিনোচেট’ বলে অভিহিত করেন।
তার মতে, কাস্ত সাবেক সেই সামরিক শাসকের মতোই, যিনি এক সময় লাতিন আমেরিকার স্বৈরশাসকের প্রতীক ছিলেন। তিনি ছিলেন বুকভরা পদক লাগানো এক সেনা শাসক।
১৯৯০ সালে গণভোটে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে পিনোচেট ক্ষমতা ছাড়েন।
এর আগে ১৭ বছর ধরে কঠোর ও নির্মমতার সঙ্গে তিনি চিলিতে শাসন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই ক্যাস্ত পিনোচেটকে ক্ষমতায় রাখার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।
ক্যাস্তের পারিবারিক পটভূমিও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার জার্মান বংশোদ্ভূত বাবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি পার্টির সদস্য ছিলেন এবং সে সময় একজন সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তবে ক্যাস্তের দাবি, তার বাবা বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এবং নাৎসি মতাদর্শ সমর্থন করতেন না।
নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার নির্বাচনে জ্যানেট জারা এগিয়ে ছিলেন। তবে সব মিলিয়ে ডানপন্থী প্রার্থীরা মোট ভোটের প্রায় ৭০ শতাংশ পেয়েছেন।
ক্যাস্ত এবং জারার সরাসরি লড়াইয়ে ক্যাস্ত ১০ শতাংশেরও বেশি ব্যবধানে এগিয়ে থাকবেন বলে জরিপগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিচের সরকারে শ্রমমন্ত্রী হিসেবে জারার ভূমিকা, তার জন্য বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট বোরিচের চার বছরের শাসনামল পিনোচেট আমলের সংবিধান সংস্কারের বারবার ব্যর্থতায় বিপর্যস্ত হয়েছে।
২০১০ সালের পর থেকে চিলিতে প্রতিটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। দেশটিতে কখনো বামপন্থী, আবার কখনো ডানপন্থীরা ক্ষমতায় এসেছে।
এ নির্বাচনে এক দশকেরও বেশি সময় পর প্রথমবার ভোট প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।
সূত্র : খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।