তালের বড়ার ইতিহাস গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের সাথে গভীর ভাবে জড়িত। এটি মূলত বাংলার গ্রামীণ অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। এটি তৈরির মূল উপাদান পাকা তালের রস। তাল দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্য সংস্কৃতিতে বহু প্রাচীন। পাল এবং সেন আমলে বাংলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠী তালের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার শুরু করে। এর মধ্যে তালের বড়া ছিল উল্লেখযোগ্য। বর্ষার শেষ দিকে (ভাদ্র-আশ্বিন মাসে) তাল পাকার সময় তালের রস সহজলভ্য হওয়ায় এটি দিয়ে মিষ্টান্ন তৈরি করাটা গ্রামীণ মানুষের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তালের বড়া তৈরীর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়- তালের রস, চালের গুঁড়া /ময়দা, তেল এবং গুড় / চিনি । অতীতে তালের বড়া সাধারণত নবান্ন, পৌষ পার্বণ বা গ্রামীণ মেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে জায়গা করে নিত। অতিথি আপ্যায়নেও পরিবেশন করা হতো।
বর্তমানে তালের বড়া শুধু গ্রামীণ অঞ্চলে নয়, মাঝেমাঝে শহরের দু ‘একটি খাবারের দোকানে চোখে পড়ে। তালের বড়া কেবল একটি খাবার নয়, এটি বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অমূল্য অংশ।
আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে তাল খাওয়ার চল নেই। এ সময় তাল বড় হয় এবং স্বাদ হয় তিতা। ভাদ্র মাসের প্রচণ্ড গরমে তাল পাকা শুরু হয়। তালের স্বাদ ও ঘ্রাণ মন ভরিয়ে দেয়। এর পুষ্টিগুণ শরীরের জন্য উপকারী ।
তালের ভেষজ গুণ প্রচুর। বলা হয়ে থাকে- পাকা তাল ঘুম, মূত্র, রক্ত, কফ ও পিত্তবর্ধক। পাকা তালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুষ্টি উপাদান হলো-ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও প্রাকৃতিক চিনি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা শরীরে শক্তি জোগায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
বর্তমানে নানা কারণে বাড়িতে আর এ মিষ্টান্নটি তৈরি করা সম্ভব হয় না। তবে নবীনগর বাজারের কয়েকটি দোকানে সুস্বাদু এ তালের বড়াটি ১৫০-১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। এর মধ্যে আদালত পুকুরের পূর্বপার্শ্বে রঞ্জনের (জিলাপি) দোকানে, আদালত সড়কের ভাগ্যলক্ষ্মী দোকানে, সদর সড়কের গিরিধারীতে, জমিদার বাড়ি সড়কের ইসলাম সুইটস, বিসমিল্লাহ সুইটস, কানাইলালের শুভ মিষ্টি বিতানে, নবীনগর লঞ্চ ঘাটের ভাই ভাই মিষ্টির দোকান ইত্যাদি।
আধুনিকতার জোয়ারে হারাতে বসেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই তালের বড়া।