টাঙ্গাইলের কালিহাতী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চাঞ্চল্যকর জমি রেজিস্ট্রি প্রতারণা নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনসাধারণ। প্রকৃত মূল্য পরিশোধ না করে প্রতারণার মাধ্যমে জমির দলিল রেজিস্ট্রি করায় ক্ষুব্ধ জমির মালিকেরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করেন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
গত বুধবার (৬ আগস্ট) সকালে উপজেলার হাতিয়া গ্রামের রবিরন, নুরু মন্ডল, নজরুলসহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দলিল লেখক বাবুল ভেন্ডার, যিনি সরাসরি এই প্রতারণায় মূল ভূমিকা পালন করেছেন বলে অভিযোগ।ভুক্তভোগীরা জানান, ৩০ জুলাই বাবুল ভেন্ডারের মাধ্যমেই তাদের জমির দলিল সম্পন্ন করা হয়। জমিটির প্রকৃত মূল্য ছিল পাঁচ লক্ষ টাকা, কিন্তু সুপরিকল্পিতভাবে মাত্র ৮০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে বাকি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। দলিল লেখক বাবুল ও তার সহযোগী জুরান আলী মোল্লা, বাবু মোল্লা ও ছাহেরা এই প্রতারণায় সরাসরি জড়িত।প্রতারণার মূল অভিযোগ হলো—বাবুল ভেন্ডার সু-কৌশলে দলিল রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া না মেনে এবং জমির প্রকৃত মালিকদের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে ফেলে, ক্রেতাদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। এমনকি রেজিস্ট্রির সময় অনিয়ম ও কারসাজির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা তিন দফা দাবি তুলে ধরেছেন:
১. জমির প্রকৃত মূল্য পরিশোধ
২. দলিল লেখক বাবুল ভেন্ডারের সদস্যপদ বাতিল
৩. প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্ত।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে এনডিসি লাবিউজ্জামান মুস্তাবিন অভিযোগ গ্রহণ করেন এবং ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “আপনাদের অভিযোগ জেলা প্রশাসক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেবেন।”টাঙ্গাইল জেলা রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম জানান, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”কালিহাতী দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি তদন্তাধীন। সত্যতা মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”অভিযুক্ত বাবুল ভেন্ডার নিজেই স্বীকার করেছেন, জমির মালিকদের মাত্র ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “দলিল হওয়ার পর ক্রেতারা পালিয়ে যায়।”এই ঘটনায় কালিহাতী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতি এবং দলিল লেখকদের ভূমিকা নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।