1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:১৩ অপরাহ্ন

‘অভিযান’ নাকি পরিকল্পিত লুটপাট ও হয়রানি!

বিশেষ প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫
‘অভিযান’ নাকি পরিকল্পিত লুটপাট ও হয়রানি!
ব্যবসায়ীর ঘর ভাঙচুর, অর্থ লুট, মিথ্যা মামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ”
চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানা সংলগ্ন- কল্পলোক আবাসিক এলাকায় বসবাসরত সাবেক প্রবাসী ব্যবসয়ায়ী ও কক্সবাজারের বৈধ মাছ ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী সম্প্রতি র্যা ব-৭ এর সিপিসি-৩ চান্দগাঁও ক্যাম্পের একটি অভিযানের বিরুদ্ধে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, অর্থ লুট, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন এবং সাজানো মাদকের মামলার অভিযোগ তুলে ধরেছেন। আইয়ুব আলী, একজন সাধারণ নাগরিক। তার জীবনে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক মহলে। এই অভিযোগের কপি পাঠানো হয়েছে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), র্যা বের মহাপরিচালক, এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মানিত কমিশনারের দপ্তরে।
আইয়ুব আলীর অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতা, হয়রানি ও অন্যায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার ওপর চালানো হয়েছে শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন, যা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের সামিল। এই পরিস্থিতিতে, ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য আইয়ুব আলী নিরুপায় হয়ে লিখিতভাবে সরকারের শীর্ষ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন এবং ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আইয়ুব আলী আশা করেন, এ ধরনের অন্যায় ঘটনা যাতে আর কোনো নাগরিকের জীবনে না ঘটে, সে জন্য কঠোর প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনাটি ঘটে ২০২৫ সালের ১২ জুন-ভুক্তভোগী আইয়ুব আলীর অভিযোগ অনুযায়ী, ঐ দিন বিকেলে র্যাবব-৭ এর একটি দল লে. কমান্ডার তাওহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে তার বাসায় হঠাৎ করে অভিযান চালায়। অভিযানের সময় কোনও প্রকার আদালতের অনুমতি বা ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিতি ছাড়াই তারা ঘরে প্রবেশ করে। অভিযানের আড়ালে বাসা থেকে ৩৩ লক্ষ টাকার মধ্যে মাত্র ১২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা জব্দ তালিকায় দেখানো হয়, বাকি প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকা লুট করে নেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। ‘ক্রসফায়ারের’ ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা-আইয়ুব আলী দাবি করেন, তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়, এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার জন্য একাধিকবার ‘ইচ্ছেমতো স্বীকারোক্তি দিতে’ বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় তার স্ত্রীকেও নারী পুলিশ ছাড়াই পুরুষ র্যা ব সদস্য দ্বারা হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সাজানো মাদক মামলা, ব্যবসায়িক সুনাম ধ্বংস-
পরদিন ১৩ জুন তারিখে র্যােব সদস্যরা নিজেদের সঙ্গে আনা কিছু ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার দেখিয়ে আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা দায়ের করে (বাকলিয়া থানার মামলা নম্বর-২৩)। এতে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলার কোন নিরপেক্ষ সাক্ষী, ভিডিও ফুটেজ বা আইনসম্মত জব্দ তালিকার অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত।
ষড়যন্ত্রের মূল নেপথ্যে জমি বিরোধ ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব-ঘটনার পেছনে স্থানীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবু এবং তার ভাই যুবলীগ নেতা মো. আবু তৈয়বের নাম উঠে এসেছে। আইয়ুব আলীর অভিযোগ, পারিবারিক জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে এ প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারটি র্যাোব সদস্যদের প্ররোচিত করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই অবৈধ অভিযান পরিচালনা করায়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন
এই ঘটনায় র্যানব-৭ এর কিছু সদস্যের ভূমিকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অধিবাসী ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা। আইয়ুব আলী বলেন, “একজন ব্যবসায়ী ও প্রবাসী নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে আমি সুরক্ষা চেয়েছিলাম, কিন্তু উল্টো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পোশাকে আমাদের ঘরবাড়ি লুট করা হলো।” পরিবারের নিরাপত্তাহীনতা ও বিচার দাবিতে আবেদন
বর্তমানে আইয়ুব আলী ও তার পরিবার চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন, র্যা ব সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় আরও মিথ্যা মামলা বা প্রাণনাশের শিকার হতে পারেন। এজন্য তিনি সরকারের কাছে জীবনের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ, মামলা প্রত্যাহার এবং অভিযুক্ত র্যারব সদস্যদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন।
মামলাটি কি এবং কিভাবেই দায়ের হয়-গ্রেফতারকৃত দুই আসামির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানায় র্যারব-৭ এর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর ৩৬(১) সারণির ১০(ক)/৪১ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পরিকল্পিতভাবে ইয়াবা সংগ্রহ, পরিবহন ও বিক্রয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসায় সক্রিয় ছিল। উদ্ধারকৃত ২২৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং নগদ ১২ লক্ষাধিক টাকা এ অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা মাদক ব্যবসার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে। সিডিএমএস বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে ইতঃপূর্বে ঢাকার মতিঝিল, দক্ষিণখান, ভাটারা ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানায় একাধিক মাদক ও অন্যান্য ফৌজদারি মামলা রয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট হয়, এ ধরনের অপরাধে তার পূর্ব ইতিহাসও রয়েছে এবং এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।
এ মামলায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রমাণাদি (ইয়াবা ও নগদ অর্থ) থাকায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। মামলার তদন্তভার এখন থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তদন্ত কর্মকর্তা আরও বিস্তারিত অনুসন্ধানের মাধ্যমে অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একজন প্রতিবেদকের দৃষ্টিতে, এই ঘটনায় সমাজে মাদক ব্যবসার বিস্তৃতি ও তার ভয়াবহতা আবারও প্রকাশ পেল। বিশেষ করে পারিবারিকভাবে মাদক ব্যবসায় জড়িত হওয়াটা সমাজে মাদকের আগ্রাসনের এক বিপজ্জনক দিককে সামনে এনেছে। র্যা ব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন কার্যকর অভিযান সাধুবাদযোগ্য, তবে এই চক্রের পেছনে থাকা বড় কারবারি বা অর্থদাতাদের খুঁজে বের করাও এখন সময়ের দাবি। শুধু ক্ষুদ্র বিক্রেতা বা বহনকারীদের গ্রেফতার করে মাদকের মূল উৎপাটন সম্ভব নয়—সার্বিক দৃষ্টিতে শক্তিশালী গোয়েন্দা তৎপরতা এবং কঠোর বিচার প্রক্রিয়া ছাড়া এ ভয়াবহতা থেকে মুক্তি কঠিন।
অভিযোগকারীর দাবি অনুযায়ী তদন্তের দাবিসমূহ: র্যা ব সদস্যদের বিরুদ্ধে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন, আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত, সাজানো মামলা প্রত্যাহার,মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার,পরিবারকে সরকারি নিরাপত্তা প্রদান,এই বিষয়ে র্যাফব-৭ এর  আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নিয়ে আগামী সংখ্যায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা হবে-
 তবে আইয়ুবের অভিযোগপত্র সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন আছে বলে একটি প্রশাসনিক সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
মিথ্যা সাজানো মামলায় শিকার আইয়ুব আলী প্রতিবেদককে বলেন -আমি আজ একজন ক্ষতবিক্ষত নাগরিক, যিনি রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার আশায় আস্থা রেখেছিলেন, কিন্তু সেই আস্থাই আজ প্রশ্নবিদ্ধ।
আমার অনুরোধ—মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়, সরকারের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ, মানবাধিকার সংগঠনসমূহ ও গণমাধ্যম কর্মীরা দয়া করে এ ঘটনার সঠিক তদন্তে অগ্রণী ভূমিকা নিন। আমি চাই, সত্য বেরিয়ে আসুক। আমার পরিবার যেন নিরাপদে বাঁচতে পারে। আমার সন্তানেরা যেন না দেখে—রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার কতটা ভয়ংকর হতে পারে।আমি বিচার চাই, ন্যায়ের আশায় আছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট