রংপুর মহানগরের খটখটিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় দীর্ঘদিনের দুর্নীতি ও চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মাদ্রাসা উন্নয়ন কমিটি।
গত বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে নগরীর সুমি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে একাধিক গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
খটখটিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা উন্নয়ন কমিটির পক্ষে রাজন, মিনার ও খাইরুল দাবি করেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এ মাদ্রাসাটি গত ২৬ বছর ধরে একটি দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠীর দখলে ছিল। তাদের অভিযোগ, পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবুল কালাম আজাদ ও আলতাফ মাহমুদ নেতৃত্বাধীন একটি চক্র দীর্ঘদিন মাদ্রাসার সহ-সভাপতি ও ট্রাস্টি হিসেবে থেকে বিপুল পরিমাণ অনুদান ও দানের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
তারা আরও জানান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শুধু অর্থ কেলেঙ্কারি নয়, মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল ও সামাজিক অশান্তি তৈরির মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। দীর্ঘদিনের এই দুর্নীতির কারণে শিক্ষার্থীরা ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল এবং পুরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় এলাকার সচেতন যুবসমাজের নেতৃত্বে নতুন একটি কমিটি গঠিত হয়। মাত্র দুই মাসের মধ্যেই তারা বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু করে, নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয় এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সাবেক দুর্নীতিগ্রস্ত গোষ্ঠী এই উন্নয়নকাজে বাধা দিতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ‘আলোকিত টিভি’ নামের একটি অনলাইন পেজে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর একদল দুস্কৃতকারী সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে—যেমন, “জবাই করে ফেলবো” ধরনের ভয়ঙ্কর হুমকির কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
এছাড়া, একই দিন রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরে ওই দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী একটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন নতুন কমিটির নেতারা। তারা এই “নাটকীয় প্রচারণার” তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং এর পেছনে থাকা গোষ্ঠীর মুখোশ উন্মোচনের আহ্বান জানান।সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:
মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে চলা দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হুমকির ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় সহায়তা নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে নেতারা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, সত্যের জয় অনিবার্য। রংপুর মহানগরের সচেতন নাগরিক, দেশপ্রেমিক সাংবাদিক সমাজ এবং প্রশাসন অবশ্যই আমাদের এই ন্যায়সংগ্রামের পাশে থাকবেন।”