1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
নবীনগরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফল মেলা ও বিনা মূল্যে চারা বিতরণ জুলাই শহীদ দিবসে গলাচিপায় শ্রদ্ধা, স্মরণ ও তরুণ প্রজন্মে দেশপ্রেমের জাগরণ পতিত সরকারের অবৈধ চেয়ারম্যান লিংকনের খুটির জোর কোথায়! জয়পুরহাট নার্সিং ইনস্টিটিউটে অগ্নিকাণ্ড,২ দিনের ছুটি ঘোষণা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে অশালীন বক্তব্যের প্রতিবাদ ‎জয়পুরহাটে সমবায় সমিতির নির্বাচনে সাইদুর সভাপতি নির্বাচিত সরাইল শাহবাজপুরে ভোক্ত আধিকারে আভিযান তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ২২ হাজার টাকা জরিমানা নবীনগরে মেধাবী শিক্ষার্থী প্রমা কর্মকারের পাশে দাঁড়ালেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম নজু গলাচিপায় ভিজিডি চাল বিতরণে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে প্যানেল চেয়ারম্যান সেনাবাহিনীর হাতে আটক গোবিন্দগঞ্জে সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ সীম,নগদ অর্থ,দেশীয় অস্ত্রসহ ৪ হ্যাকার গ্রেফতার

সাংবাদিক ও লেখকদের উপর নিপীড়ন এবং PEN International-এর দায়িত্ব

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

মতপ্রকাশের অধিকার সংকুচিত হচ্ছে: সাংবাদিক ও লেখকদের উপর নিপীড়ন এবং PEN International-এর দায়িত্ব”

পেন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ৪৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাহী কমিটির নির্বাচনের এই আয়োজনে অংশগ্রহণ আমার জন্য শুধুমাত্র একটি সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন ছিল না—বরং ছিল এক গভীর সাহিত্যিক ও নৈতিক সংযোগের উপলক্ষ। ধানমন্ডির ৫৬ নম্বর বাড়ির ছায়াঘেরা পরিবেশ, এবং তার অভ্যন্তরে জড়ো হওয়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লেখক, কবি, সাংবাদিক ও চিন্তাবিদদের মুখোমুখি হওয়া—এইসব মিলিয়ে যেন এক সাংস্কৃতিক অভিসার, যেখানে সাহিত্যের সীমানা পেরিয়ে মানবিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে গড়ে উঠছিল এক নতুন আলোচনার পরিসর। এই সভার বিশেষ মুহূর্ত ছিল—আমি যখন সদ্য নির্বাচিত সভাপতি- ড.প্রফেসর শামসাদ মোর্তুজা, সাধারণ সম্পাদক -সাংবাদিক জাহানারা পারভিন এর হাতে আমার লেখা ‘সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কথা’ বইটি তুলে দিই। এ বইটি কেবল একটি প্রকাশনা নয়, বরং এটি আমার তিন দশকের অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম এবং সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণের ফসল। এই বই পেন-এর এই দুই শীর্ষ নেতৃত্বের হাতে তুলে দেওয়ার অর্থ, আমি যেন তাদের হাতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীন লেখার অধিকারের প্রতীক তুলে দিলাম। আজকের সভার প্রেক্ষাপটটি ছিল এমন এক সময়ে, যখন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে লেখক ও সাংবাদিকরা ভয়, দমননীতি ও আইনি নিপীড়নের ছায়ায় কাজ করছেন। লেখার জন্য গ্রেফতার হওয়া, সত্য প্রকাশের দায়ে অপপ্রচারের শিকার হওয়া কিংবা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা সাংবাদিকদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই বাস্তবতায় পেন ইন্টারন্যাশনাল শুধু একটি সাহিত্য সংগঠন নয়, এটি এখন ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া একটি প্রতিবাদী প্ল্যাটফর্ম—যেখানে কলম হলো প্রতিরোধের অস্ত্র এবং শব্দ হলো সাহসের ভাষা। পেন ইন্টারন্যাশনালের মূল শক্তি তার আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং নৈতিক অবস্থান। লেখক গ্রেফতার হলে, সাংবাদিক নিখোঁজ হলে, বা কোনো বই নিষিদ্ধ হলে—এই সংগঠনই প্রথম উচ্চকণ্ঠে বলে উঠে: “এটা মেনে নেওয়া যায় না।” আন্তর্জাতিক পরিসরে এই প্রতিবাদটি পৌঁছে দেয় রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতাকেন্দ্রে। এমনকি জাতিসংঘ ও অন্যান্য বৈশ্বিক ফোরামেও পেন-এর হস্তক্ষেপ বহু লেখকের জীবন ও লেখার অধিকার রক্ষা করেছে। আজকের নির্বাচনী সভায় নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের হাতে আমার বই প্রদান যেন একটি মৌন বার্তা বহন করে—এই যে সংগ্রাম, এই যে সত্য প্রকাশের লড়াই, তা যেন সংগঠনের কেন্দ্রস্থলে জায়গা করে নেয়। সাংবাদিক ও লেখকদের পাশে দাঁড়ানোর এ যাত্রায় পেন বাংলাদেশ যেন আরও সক্রিয় হয়, আরও মানবিক হয়, এবং কলমের স্বাধীনতাকে পাহারা দেয় দায়িত্ব নিয়ে। এই আয়োজনের পরতে পরতে আমি অনুভব করেছি—পেন মানেই কেবল সাহিত্যিক মিলনমেলা নয়, বরং এটি এক আত্মিক ঐক্য, যেখানে লেখা মানে প্রতিবাদ, এবং সাহিত্যের আসর মানেই বিবেকের সংঘর্ষ। সাহিত্যের সীমানা নেই—যেমন সত্যেরও নেই। আর সেই সীমাহীন সত্যের যাত্রায় পেন ইন্টারন্যাশনাল-এর মতো সংগঠন আমাদের সাহস ও আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সেই আলোকে পেন ইন্টারন্যাশনাল এর ভুমিকার কিছু কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছি -সত্য বলা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা কিংবা মত প্রকাশ করা—একটি গণতান্ত্রিক সমাজের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আজকের দুনিয়ায় এই অধিকারই সবচেয়ে বেশি বিপন্ন। সাংবাদিক, লেখক, ব্লগার—যারা কলমের মাধ্যমে সমাজকে জাগিয়ে তোলেন, সত্যের পক্ষে দাঁড়ান, তারাই আজ হয়ে উঠেছেন রাষ্ট্রের চোখে ‘অপরাধী’। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, হয়রানি, এমনকি প্রাণনাশের হুমকিও যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই উদ্বেগজনক বাস্তবতায় লেখক ও মতপ্রকাশকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে একটি আন্তর্জাতিক সাহিত্য ও মানবাধিকার সংগঠন—PEN International।লেখার অপরাধে কারাবাস-বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর শত শত সাংবাদিক ও লেখক মিথ্যা মামলার শিকার হন। Reporters Without Borders এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সারা বিশ্বে প্রায় ৫৬০ জন সাংবাদিক কারাবন্দি ছিলেন। শুধু সাংবাদিক নন, কবি, ঔপন্যাসিক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরাও তাঁদের লেখার কারণে গ্রেফতার হয়েছেন। চীন, ইরান, তুরস্ক, রাশিয়া, মিয়ানমার—এইসব দেশে লেখকদের অবস্থান সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
বাংলাদেশও এই তালিকা থেকে খুব একটা আলাদা নয়। গত এক দশকে বহু সাংবাদিক ও লেখকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং আইসিটি আইনের আওতায় মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। লেখক মুশতাক আহমেদ এর মৃত্যুর ঘটনা গোটা জাতিকে কাঁদিয়েছিল। তিনি কোনো সন্ত্রাসী ছিলেন না, ছিলেন একজন মতপ্রকাশকারী লেখক—কিন্তু তাঁর জন্য ছিল নির্যাতন, জেল এবং অবশেষে মৃত্যু।বাংলাদেশের বাস্তবতা: বাকস্বাধীনতার সংকট-
বাংলাদেশে যারা সত্য কথা বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিবাদ করেন, তাদেরকেই নিশানা করা হয়। সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, লেখক শফিকুল ইসলাম কাজল, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনামূলক পোস্ট দেওয়া সাধারণ নাগরিকরাও এ চক্রের বাইরে নন। সরকারপন্থী মহল ও দমনমূলক আইন ব্যবহারের মাধ্যমে একটি ভয়ভীতির সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে—যেখানে একজন লেখক কলম ধরার আগে ভাবেন, “এই লেখার জন্য জেলে যেতে হবে না তো?”
PEN International: বিশ্বজুড়ে লেখকদের অভিভাবক-
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত PEN International আজ বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে সক্রিয়। এটি শুধু সাহিত্যচর্চার সংগঠন নয়—এটি একটি নৈতিক প্রতিরোধের বলয়, যারা বিশ্বাস করে, “লেখকের কণ্ঠ স্তব্ধ করা মানে মানুষের চেতনায় আঘাত হানা”।
PEN-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হলো Writers in Prison Committee (WiPC)। এই কমিটির কাজ হলো:
* বিশ্বের যেসব লেখক অন্যায়ভাবে গ্রেফতার বা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের পক্ষে জোরালো প্রতিবাদ।
* কারাবন্দিদের মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক প্রচারণা ও আইনগত সহায়তা।
* জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে লবিয়িং।
* লেখকের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং আর্থিক সহযোগিতা।
প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর ‘কারারুদ্ধ লেখক দিবস’ (Day of the Imprisoned Writer) পালন করে PEN, যেখানে নির্যাতিত লেখকদের স্মরণে বিশ্বব্যাপী লেখক-সাহিত্যিকরা কলম ধরেন।
লেখকের উপর অবিচার হলে PEN কী করে?১. দ্রুত তদন্ত ও তথ্য যাচাই করে। ২. লেখককে “Writers at Risk” তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ৩. রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি খোলা চিঠি, প্রতিবাদ বিবৃতি, সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে। ৪. যদি লেখক দেশত্যাগে বাধ্য হন, তবে রাজনৈতিক আশ্রয় ও মানবাধিকার সহায়তা দেয়। ৫. আইনি সহায়তা ও জরুরি অর্থায়ন নিশ্চিত করে।
উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো—বাংলাদেশে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর PEN International ও PEN Bangladesh একযোগে প্রতিবাদ করে, যা আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এ ধরনের পদক্ষেপ বহু লেখকের জীবন বাঁচিয়েছে, অনেককে জেল থেকে মুক্ত করেছে।
একটি নির্ভীক কলমই সমাজের চোখ খুলে দেয়-লেখক, কবি, সাংবাদিক—তাঁরা শুধুই শব্দের কারিগর নন, তাঁরা সমাজের বিবেক। যখন রাষ্ট্র সেই বিবেককে স্তব্ধ করতে চায়, তখন প্রয়োজন হয় একটি নৈতিক প্রতিরোধের—যা PEN International যুগের পর যুগ ধরে চালিয়ে যাচ্ছে। আজ বাংলাদেশে ও বিশ্বজুড়ে যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখছেন, তারা একা নন। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে PEN-এর মতো সংগঠন, যারা বিশ্বাস করে—”A writer in prison is a wound in humanity”। এখন সময়, সত্য বলার এই যাত্রাকে আরো জোরদার করা। যারা কলমের স্বাধীনতা হরণ করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে নৈতিক ও বৈশ্বিক প্রতিরোধ। কারণ, কলমের রক্ত—তলোয়ারের রক্তের চেয়েও শক্তিশালী।
লেখক সাংবাদিক গবেষক টেলিভিশন উপস্থাপক ও সদস্য – পেন ইন্টারন্যাশনাল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট