চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের শেষ মাথায় একটা ছোট্ট গলি। সেখানে প্রতিদিন ধুলোমাখা পায়ে হাঁটে রাহিম নামের এক শিশু। তার গায়ের জামাটি ছেঁড়া, চোখে তবুও অদ্ভুত এক জ্যোতি—যেটা স্বপ্ন দেখায়। একদিন সে হয়তো স্কুলে যাবে, হয়তো একদিন একটা খেলনা গাড়ি পাবে, কিংবা একটা গল্পের বই যেখানে লেখা থাকবে তার নিজেরই মতো কোনো ছোটো ছেলের কথা।
হঠাৎ একদিন মাইকিং শুনল রাহিম—
“আসছে শুক্রবার, ২৩ মে, বিকেল ৪টা, চট্টগ্রাম শিশু একাডেমিতে আয়োজিত হচ্ছে ‘ইচ্ছেপূরণ’ — পথশিশুদের জন্য ভালোবাসার আয়োজন।”
এই ঘোষণা যেন রাহিমের কানে নয়, মনে বাজল। আয়োজন করেছে “মানবিক চট্টগ্রাম”, আর আহ্বায়ক নূর জামাল চৌধুরী। বলা হচ্ছে, এই দিনে পথশিশুদের দেয়া হবে উপহার, খাবার, আর কিছু না বলা স্বপ্নের বাস্তব রূপ। কোনো শিশু ফিরবে না খালি হাতে, না খালি মনে।
এখনও অনুষ্ঠান হয়নি। কিন্তু শহরের বাতাসে একটা আশা ছড়িয়ে পড়েছে। ছোট ছোট মুখগুলো যেন গুনছে দিন, অপেক্ষায় আছে মুহূর্তটির—যখন কেউ তাদের নাম ধরে ডাকবে, তাদের হাতে কিছু তুলে দেবে, বলবে—”তুমিও আমাদের মতোই, তুমিও অধিকার রাখো স্বপ্ন দেখার।”
রাহিম প্রতিদিন শিশু একাডেমির পাশ দিয়ে হেঁটে যায়, যেন জায়গাটার গায়ে তার ভবিষ্যতের ছায়া লেগে আছে। হয়তো ওই শুক্রবার বিকেলেই সত্যি হয়ে উঠবে তার অনেক দিনের না বলা চাওয়া—একটা ব্যাগ, একটা খাতা, আর একজন মানুষ—যে তাকে গুরুত্ব দিয়ে বলবে, “তুমি পারবে, রাহিম!”
এই অনুষ্ঠান শুধু একটি আয়োজন নয়, এটি সমাজের উপেক্ষিত শিশুদের সঙ্গে একটা মানবিক প্রতিশ্রুতি। নূর জামাল চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘মানবিক চট্টগ্রাম’-এর এই উদ্যোগ পথশিশুদের চোখে নতুন আলো জ্বালাবে। আমরা অপেক্ষায় আছি সেই শুক্রবার বিকেলের, যখন শহরটা একটু বেশি সুন্দর হয়ে উঠবে—কিছু ছোট মুখের হাসিতে।