ইট-কাঠ-পাথরের নগরে সবুজ মানে যেন নিঃশ্বাসের অবকাশ, চোখের আরাম, মনের প্রশান্তি। আজ যখন সকালে সূর্যের আলো ব্যস্ত নগরীর কাঁধে ধীরে ধীরে পড়ছিল, তখন আমরা কিছু মানুষ এক অদৃশ্য দায়বদ্ধতায় এগিয়ে গেলাম প্রকৃতির দিকে। সময়টা ছিল সকাল ১১টা। স্থান—চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও বাস সিগনালের ঠিক টিকে ওয়েল পয়েন্টের সামনে। আমাদের এই নগরী প্রতিদিন একটু একটু করে নিঃশ্বাস হারাচ্ছে। বহুতল দালানের ছায়া গিলে খাচ্ছে রোদ, ধুলা-ধোঁয়ায় আকাশ ধূসর হয়ে আসছে। ঠিক তখনই কিছু মানুষ একসাথে দাঁড়ালাম হাতে চারাগাছ নিয়ে। এই চারাগুলো আমাদের স্বপ্ন, আমাদের প্রতিবাদও—এক নির্মম নগরায়ণের বিরুদ্ধে। বন্ধু সেলিম উল্লাহ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী, সদা উদ্যোগী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনের স্বপ্ন আর পরিশ্রমে এই কর্মসূচির সূচনা হলো। “Green Chattogram” শিরোনামে এই প্রকৃতি প্রীতি উদ্যোগে আমরা একে একে গাছের চারা রোপণ করলাম ফুটপাতের পাশে, যেখানে কখনো স্রোত বইতো কেবল যানবাহনের, আজ সেখানে গাঁথা হলো সবুজের বীজ।
জাতীয় পার্টির সম্মানিত নেতা ইয়াকুব হোসেনের উপস্থিতি ও সহমর্মিতায় আমরা উজ্জীবিত হলাম। বন্ধু ওসমান গনি দেলোয়ার এবং একাধিক গণমাধ্যমকর্মী—যাঁদের মুখে ছিল আন্তরিকতা, চোখে ছিল দীপ্তি—এই আয়োজনকে করলেন আরও পরিপূর্ণ, আরও গুরুত্বপূর্ণ।
কেউ এসে বললেন—“শুধু গাছ লাগালেই হবে না, এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।” আমরা সবাই সেদিন যেন প্রতিজ্ঞা করলাম, শুধু মাটি খুঁড়ে চারাগাছ পুঁতে নয়, তাকে বাঁচিয়ে রাখাও হবে আমাদের দায়িত্ব। যেমন করে মা তার সন্তানকে আগলে রাখে, তেমনি এই চারাগুলোকেও আগলে রাখতে হবে আমাদের ভালোবাসায়, যত্নে ও সচেতনতায়।
এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে একটা নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো—নগরের ব্যস্ততম অংশে, সরাসরি জনগণের দৃষ্টিসীমায় প্রকৃতিকে ফিরিয়ে দেওয়ার এক প্রতীকী প্রয়াস। এমন ছোট ছোট উদ্যোগই একদিন গড়ে তুলতে পারে সবুজ শহর, শীতল বাতাস, নির্মল নিঃশ্বাস। আজ যারা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা সবাই একেকজন বৃক্ষপ্রেমী সৈনিক। যারা হাতে তুলে নিয়েছিলেন প্রকৃতির সুরক্ষার অস্ত্র—গাছের চারা। আপনাদের সবাইকে জানাই হৃদয় নিংড়ানো শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে সেলিম উল্লাহ ও কামাল সওদাগর—তাঁদের এই উদ্যোগে আমরা যারা শরিক হতে পেরেছি, তা আমাদের জীবনের এক গর্বের মুহূর্ত হয়ে রইলো।
আমাদের বিশ্বাস, একদিন এই ছোট চারাগুলোই হবে ছায়াদানকারী বৃক্ষ, পথিকের আশ্রয়, পাখির বাসা, শিশুদের খেলার সাথি। এবং তখন আমরা গর্ব করে বলতে পারব—হ্যাঁ, একদিন আমরা এই বৃক্ষরোপণে অংশ নিয়েছিলাম।
সবুজ হোক আমাদের চারপাশ, সবুজ হোক আমাদের চিন্তা। বৃক্ষ হোক বন্ধুর মতো, আশ্রয়ের মতো, ভালোবাসার মতো—আমৃত্যু।