1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
কেশবপুরে প্রকাশ্যে যুবদল কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা! সবুজসহ তিনজন আটক, এলাকায় উত্তেজনা! শওকত আলম শওকত ও হাজী মোঃ আবু আকতার বোয়ালখালী বিএনপির অগ্রসৈনিক ওসি বাবুল আজাদের নেতৃত্বে থানার লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে চারবারের সেরা ওসি আফতাব উদ্দিন দিলরুবা খানম : বহুমাত্রিক প্রতিভায় দীপ্ত এক মানবিক শিল্পী সাংবাদিকতা নাকি ব্যবসা? পেশার পবিত্রতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ! প্রধান উপদেষ্টার বরাবর চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের স্মারকলিপি প্রদান সাংবাদিকের বিভ্রান্তিকর পরিচয় ব্যবহার: চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রতিবাদ বক্তা ও বক্তৃতা নিয়ে কিছু অপ্রিয় কথা ঢাকা সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুজন কারাগারে আত্মহত্যা

বাটালি হিলের শতায়ু অঙ্গনে নববর্ষ: পান্তা-ইলিশ, কবিতা আর কলমের উচ্ছ্বাস

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

সাংবাদিক, লেখক ও টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে যখন আলো-বাতাস প্রকৃতি সাহিত্য সংস্কৃতির জগত নিয়ে ভাবতে থাকি তখন কিছু কিছু না বলা কথা লিখতে ইচ্ছে হয়,তারই আজকের এই লেখার বহিঃপ্রকাশ – পহেলা বৈশাখ। শুধু আরেকটি দিন নয়, বরং এক অনন্ত উৎসবের নাম। এই দিনে জীবন যেন নতুন পাতার মতো খোলে, আর সময়ের নদী বয়ে আনে গান, গদ্য, গল্প আর ভালোবাসার ঢেউ। আমি সেদিন উপস্থিত ছিলাম চট্টগ্রামের বাটালি হিলের শতায়ু অঙ্গনে, যেখানে ইতিহাস, প্রকৃতি আর মানুষ মিলেমিশে গড়ে তুলেছিল এক অবিস্মরণীয় নববর্ষ।
বাতাসে ছিল শিউলি ফুলের গন্ধ, পাতার ফাঁকে সূর্যের হেসে ওঠা, আর মানুষের চোখে-মুখে ফুটে থাকা প্রত্যাশার আলো। শতধরণের মানুষ—কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, তরুণ-তরুণী, শিল্পী, আর সবচেয়ে বেশি যে দলটি চোখে পড়ল তা হলো শিক্ষকসমাজ। যেন পুরো চট্টগ্রামের বিদ্যাপীঠগুলো নেমে এসেছে বটমূলের ছায়ায়, কলরবে, আলাপে, আর আড্ডায়।
সেই আড্ডা কেবল সাধারণ আড্ডা ছিল না—তার মধ্যে মিশে ছিল মজার কথা, জীবন ছোঁয়া গল্প, হঠাৎ জুড়ে দেওয়া তাজা কবিতা, আর একে অপরকে মুগ্ধ করে তোলার নিরন্তর চেষ্টা। কোথাও গিটারের ঝংকার, কোথাও ঢাকের ধ্বনি, আর তার ফাঁকে ফাঁকে হাসি—মিষ্টি, নির্ভেজাল, আর জীবনমুখী।
মঞ্চে গান হচ্ছিল, পাশে চলছিল পান্তা-ইলিশের আসর, ছাতা হাতে ঘুরছিল সুন্দরীরা—রঙের বর্ণচ্ছটা যেন আলপনা হয়ে উঠেছিল চারপাশে। এমন একদিনে আমি ঠিক করেছিলাম কেবল উপভোগ করব না—নিজেকেও নতুন করে লিখে ফেলব। আর তাই মানুষের ভিড়ের মাঝেও আমি ছিলাম নিজের ভেতর, কলম আর খেয়ালের সঙ্গে।
মনে হচ্ছিল প্রতিটি মুহূর্তই একেকটি কবিতার পঙক্তি। আমি সেই পঙক্তিগুলো তুলে নিচ্ছিলাম চোখে, মনে, আর খাতায়। কে যেন হেসে বলল, “আপনিও তো দেখি আজ লেখায় মগ্ন!” আমি হেসে বললাম, “উৎসবের প্রাণ তো এখানেই—মনে যা উথলে, তা ধরে রাখা শব্দে।”
এই দিনটা আমাকে আবার মনে করিয়ে দিল কেন আমি লিখি। আমার চোখে বয়ে যাওয়া এই বৈশাখ যেন ছিল এক কাব্যিক বাস্তবতা—যেখানে আনন্দ আর চিন্তা পাশাপাশি বসবাস করে, যেমন আমি বসে ছিলাম কাঠের বেঞ্চে, হাতে কলম, হৃদয়ে ভাবনা। এই নববর্ষের দিনটি কেবল আমার নয়—এটি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের দিন। যারা এসেছিলেন শুধু গান শুনতে, তারা গান নিয়ে ফিরলেন। যারা এসেছিলেন পান্তা-ইলিশের লোভে, তারা ফিরলেন পেট ভরে। আর আমি, আমি ফিরলাম হৃদয়ভরে—অনুপ্রেরণা আর লেখার রসদ নিয়ে।
নববর্ষে এমন আয়োজন, এমন সহযাত্রা—তা কেবল স্মৃতির পাতা নয়, সাহিত্যের পাতাতেও জায়গা করে নেয়। আর আমি সেই সাহিত্যের একজন ক্ষুদ্র সাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকি—প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি অনুভবে। পহেলা বৈশাখের সকালে বাটালি হিলের উঁচু চূড়ায় বসে পুরো শহরটা একবারে চোখে ধরা দেয়। নিচে যতদূর চোখ যায়, ইট-পাথরের দালান, গাড়ির দীর্ঘ সারি, হর্নের আওয়াজ, আর ধোঁয়ার কালো রেখা। অথচ তারই ফাঁকে ফাঁকে আজকের দিনটাকে ঘিরে মানুষের মুখে হাসি, গায়ে রঙিন সাজ, কাঁধে ঢাক—নতুন বছরের আবাহনে হৃদয় জেগে উঠেছে। এই বৈপরীত্যের শহর—যেখানে সকালবেলা কেউ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়, আর কেউ কোনো জানালার আড়াল থেকে তাকিয়ে দেখে সেই আনন্দ, অথচ সে অংশ নিতে পারে না। আমি বসে আছি সবকিছুর ওপরে, গাছগাছালির ছায়ায়, নিঃশব্দে—ভেবেই চলেছি, এই শহরটা, এই পৃথিবীটা আসলে কার?
চারপাশে এত উৎসব, তবু কোথাও এক অজানা ক্লান্তি। আনন্দের মাঝে যেন একটা অদৃশ্য হাহাকার। শিশুরা আজও ফুটপাতে বসে পাটি বুনে, তাদের হাতে নেই বেলুন কিংবা পান্তা-ইলিশ। কোনো মা সকাল থেকে বসে আছে হাসপাতালের বারান্দায়, তার জন্য আজ কোনো নববর্ষ নেই। তবু শহর উদযাপন করে। বছর বদলায়, চেনা মানুষেরা বদলায়, বদলায় না শুধু এই বৈষম্য।
প্রকৃতি এখনও তার মতো করে রঙ ছড়ায়—গোলাপ ফুল ফুটেছে রাস্তার পাশে, বাতাসে বৈশাখের তাপ আর একটি মুক্তির আশ্বাস। আমি চুপচাপ বসে সেই বাতাসে হারিয়ে যেতে চাই। মনে হয়, যদি পারতাম শহরটাকে একটুখানি ভালোবাসা দিতে, তবে সে হয়তো এতটা কঠিন হতো না।
এই বৈশাখে আমার মনে হয়, আমরা যারা স্বপ্ন দেখি, যারা কাগজে লেখি, যারা কবিতা তৈরি করি কষ্টের ভিতর থেকে—তারা হয়তো এই শহরের সবচেয়ে নীরব সৈনিক।
তারা বদলে দিতে চায় পৃথিবীর মুখ।
তবু প্রশ্নটা থেকে যায়—
এই পৃথিবীটা, এত কোলাহল আর নিঃসঙ্গতার মাঝে দাঁড়িয়ে—
তুমি আসলে কার?
শেষ পঙক্তি: এই নববর্ষেও আমি লিখে গেলাম—যেখানে আনন্দ ছিল ছন্দে, আর ভাবনা ছিল ভালোবাসার ভাষায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট