১৬ই মার্চ ১৮৬ তম জন্ম বার্ষিকী
পৃথিবীতে যতগুলি পুরষ্কার প্রদান করা হয়। তাঁর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মানী পদক নোবেল পদক, এই নোবেল পদক প্রদান প্রথম শুরু হয় ১৯০১ সালে, সেই প্রথম পদক পেয়েছিলেন এই মহান সাহিত্যিক রেনে ফ্রাঁসোয়া আর্মাদ প্রুদহোম তিনি আজ থেকে ১৭৭ বছর পূর্বে আজকের এই দিনে জন্ম গুহণ করেছিলেন। আমি একজন সাহিত্যকর্মি হিসেবে এই মহান সাহিত্যিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর সাহিত্যকর্মের কিছু ইতিহাস তুলে ধরছি–
ফরাসি সাহিত্যিক ও দার্শনিক স্যালি প্রুদহোম ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। লিসে বোনাপার্তে ছিল তৎকালীন প্যারিস শহরের বিখ্যাত বিদ্যালয়। ঐ বিদ্যালয়ে প্রুদহোমে লেখাপড়া করেন। ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে তিনি কৃতিত্বের সাথে বিজ্ঞানে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। যুব বয়সে চক্ষু রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর লেখাপড়ায় বেশ কিছুদিন ছেদ পড়ে।
১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ২৬ বছর বয়সে তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘স্ট্রাঁসেস এত প্যোমেস’ প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটি প্রকাশের পর বোদ্ধা সমাজে সাড়া পড়ে যায়। শব্দ চয়ন, উদাহরণ ও ভাব প্রকাশে চমৎকার অভিনবত্ব এবং বিষয় নির্বাচনের বিচক্ষণতা বিদগ্ধ সমাজের দৃষ্টি কাড়ে। তিনি সাহিত্যিক হবেন এমন ভাবনা ছিল না। বিজ্ঞনী বা আইনবিদ হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কাব্যগ্রন্থটি তাঁর সে প্রত্যাশায় ছাই নিক্ষেপ করে। সাহিত্য সাফল্যে উদ্ভাসিত প্রুদহোমে সব কিছু ছেড়ে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করার সংকল্প নেন। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে তার প্রথম অনুবাদ ‘লে সলিটুডে’ প্রকাশিত হয়। এটি ছিল বিখ্যাত লেখক লুক্রেতিউস এর লেখা। যা তিনি ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে তার লেখা ‘লা বনিউর’ কবিতাটি অসম্ভব জরপ্রিয়তা অর্জন করে। এ কবিতাটির মাধ্যমে তিনি পাঠক ও শ্রোতাবৃন্দের হৃদয়ে একই সাথে আনন্দ, উৎসাহ, প্রফুল্লতা, উদ্দীপনা, উৎসাহ এবং আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হবার প্রেরণায় উজ্জীবিত করতে সক্ষম হন।
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ছিল তাঁর জীবনের এক কষ্টকর অধ্যায়। ঐ বছর তাঁর বহু নিকটাত্মীয় মারা যায়। এ ঘটনা তাকে শোকে মুহ্যমান করে দেয়। তবে তিনি আবার আস্তে আস্তে নিজেকে ফিরিয়ে আনেন এবং লেখায় মনোনিবেশ করেন। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে হতে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত তিনি ফরাসি একাডেমীর সদস্য ছিলেন। কবিতাই ছিল তার লেখার মূল ক্ষেত্র। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি কবিতাকে তাঁর সৃষ্টিকর্ম সীমাবদ্ধ রাখেন। এরপর তিনি প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেন। তাঁর প্রবন্ধগুলো দার্শনিক ভাব ও মনস্তাত্বিক গভীরতায় ঋদ্ধ। তিনি ছিলেন মূলত দার্শনিক কবি। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘লা ইউসটিস’ কবিতায় তার দার্শনিক মানসিকতার পরিচয় মেলে।
কবিতায় প্রুদহোমের বিচক্ষণতা বহুমুখী ও বৈচিত্র্যময় ধারার সন্নিবেশে অভিভ’ত প্রকাশ।১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে ‘কে সাই-ইয়ে’ নামক কবিতাটি পাঠকদের সামনে নতুন আঙ্গিকে উপস্থিত হয়। এপি ছিল বিজ্ঞানভিত্তিক কবিতা। এ কবিতায় তিনি বিজ্ঞানের বাস্তবতার সাথে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় ঘটিয়ে অপূর্ব ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করেন। ফরাসি গনিতজ্ঞ ও পদার্থবিদ প্যাসক্যালের চিন্তাধারা এং রেনে দেকার্তের চিন্তা-চেতনা প্রুদহোমের কবিতায় প্রতিফলিত।
১৯০১ খ্রিস্টাব্দ হতে নোবেল পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। স্যালি প্রুদহোমে নোবেলপুরস্কারের ইতিহাসে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ইতিহাসে অনন্য সম্মানের অধিকারী। স্যালি প্রুদহোম তার ছদ্মনাম। তার আসল নাম রেনে ফ্রাঁসোয়াআর্মাদ প্রুদহোমে (চৎঁফযড়সসব জবহব ঋৎধহপড়রং অৎধসধহফ)।
১৯১০ খ্রিস্টাব্দে সুইডিস একাডেমী প্রুদহোমেকে কাব্য প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভ’ষিত করেন। কাব্যে বিশ্ববিশ্রুত এ কবির শেষ জীবনের পারিবারিক অবস্থা সুখের ছিল না। শেষ জীবন ছিল অত্যন্ত নিঃসঙ্গ ও যাতনাময়। ঘণিষ্ঠজন কেউ তার কাছে ছিল না। শ্যাতেনে তিনি প্রায় নিঃসঙ্গ ও একাকী জীবন কাটাতেন। এ অবস্থায় ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এই মহান সাহিত্যিককে নিয়ে এবং তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ নিয়ে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে কিছু লেখার আশা পোষণ করছি।