1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০২:২৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :
কেশবপুরে প্রকাশ্যে যুবদল কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা! সবুজসহ তিনজন আটক, এলাকায় উত্তেজনা! শওকত আলম শওকত ও হাজী মোঃ আবু আকতার বোয়ালখালী বিএনপির অগ্রসৈনিক ওসি বাবুল আজাদের নেতৃত্বে থানার লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে চারবারের সেরা ওসি আফতাব উদ্দিন দিলরুবা খানম : বহুমাত্রিক প্রতিভায় দীপ্ত এক মানবিক শিল্পী সাংবাদিকতা নাকি ব্যবসা? পেশার পবিত্রতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ! প্রধান উপদেষ্টার বরাবর চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের স্মারকলিপি প্রদান সাংবাদিকের বিভ্রান্তিকর পরিচয় ব্যবহার: চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের প্রতিবাদ বক্তা ও বক্তৃতা নিয়ে কিছু অপ্রিয় কথা ঢাকা সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুজন কারাগারে আত্মহত্যা

সাতকানিয়ায় গণপিটুনির আড়ালে রক্তাক্ত ক্ষমতার লড়াই: ‘ডাকাতি’ নাকি পূর্বপরিকল্পিত হত্যা?”

মোঃ কামাল উদ্দিন
  • প্রকাশিত: বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া গণপিটুনিতে নিহত দুই ব্যক্তি— নেজাম উদ্দিন (৪৪) ও আবু সালেক (৩৫)— কে ‘ডাকাত’ হিসেবে প্রচার করা হলেও, গভীরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঘটনাটির আসল রূপ ভিন্ন। এটি ছিল রাজনৈতিক প্রতিশোধ, পুরনো শত্রুতার নিষ্পত্তি এবং এলাকায় নতুন করে ক্ষমতা কায়েমের জন্য রচিত এক ভয়াবহ চক্রান্তের ফলাফল।
ঘটনার সারসংক্ষেপ
সোমবার (৪ মার্চ) রাত ১০টার দিকে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় কথিত ডাকাত সন্দেহে নেজাম ও সালেককে ধরে ফেলে স্থানীয় জনতা। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়— “ডাকাত পড়েছে!” এরপর মুহূর্তের মধ্যেই একদল লাঠিসোঁটা ও রড হাতে জনতা ছুটে আসে। গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন নেজাম ও সালেক। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য— এই গণপিটুনি স্রেফ উত্তেজিত জনতার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং একটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতিশোধ।
নেজাম বনাম মানিক: পুরনো শত্রুতার রক্তাক্ত পরিণতি-
সাতকানিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছিল দুইটি শক্তিশালী গ্রুপ—নেজাম উদ্দিন বাহিনী (জামায়াতপন্থী ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারী)। নজরুল ইসলাম মানিক গ্রুপ (সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, বর্তমানে পলাতক)।
নেজাম উদ্দিন ছিলেন একসময়কার কুখ্যাত সন্ত্রাসী, যিনি জামায়াতের রাজনীতির ছত্রছায়ায় বড় হয়ে ওঠেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ৩৪টিরও বেশি মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে, নজরুল ইসলাম মানিক দীর্ঘদিন সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিলেন। তবে দলীয় কোন্দল, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং চাঁদাবাজির অভিযোগের কারণে তিনি বিতর্কিত হয়ে পড়েন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন হিসাব-নিকাশ গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবং ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা সরকার বিদায় নেওয়ার পর সাতকানিয়ায় রাজনৈতিক চিত্র বদলাতে শুরু করে।


নতুন সরকারের আসার পর—
জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা ধীরে ধীরে এলাকায় ফিরে আসতে শুরু করে।
নেজাম উদ্দিন পুনরায় তার পুরনো বাহিনী সংগঠিত করতে থাকেন।
মানিকের অনুগামীরা নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করতে শুরু করেন।
এই পরিস্থিতিতে নেজাম বাহিনী মানিকের ব্যবসা, লুটপাট ও জমির দখল পুনরুদ্ধার করতে তৎপর হয়ে ওঠে।
‘ডাকাতি’ নাকি মানিকপন্থীদের প্রতিশোধ? স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গণপিটুনির দিন নেজাম ও তার অনুসারীরা সিএনজি অটোরিকশায় করে মানিকের অনুগামীদের খুঁজতে গিয়েছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল—মানিকের বাহিনীর সদস্যদের খুঁজে বের করা।
এলাকায় নিজেদের আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু পরিকল্পনা ভেস্তে যায়, যখন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়— “ডাকাত এসেছে!” স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন,”হঠাৎই মাইকে ঘোষণা শোনা যায়। তারপর শত শত লোক রাস্তায় নেমে আসে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিটুনি শুরু হয়ে যায়।” তবে প্রশ্ন হলো— যদি নেজাম বাহিনী ডাকাতি করতেই আসতো, তবে তারা গুলি চালানোর আগেই কেন এত সহজে ধরা পড়ে গেল?
কেনই বা এতদিন চুপ থাকা মানিকের অনুসারীরা হঠাৎই এত সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণ করলো?
এর উত্তর মেলে মানিকের স্ত্রী রুনা আকতারের বক্তব্যে।
মানিকের স্ত্রী রুনার বিস্ফোরক অভিযোগ-রুনা আকতার অভিযোগ করেছেন,”নেজাম উদ্দিন ও তার বাহিনী আমাদের এলাকা দখল করতে চেয়েছিল। তারা মানিকের ব্যবসা ও সম্পত্তি লুটপাটের চেষ্টা করছিল। তাই সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।”
তিনি আরও বলেন, “নেজামের নেতৃত্বে গত এক মাসে মানিকের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ২ কোটি টাকার সম্পদ লুট করা হয়েছে।” এই বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে—এটি শুধুই সাধারণ জনতার প্রতিক্রিয়া ছিল না। এর পেছনে ছিল মানিকের অনুগামীদের সুপরিকল্পিত প্রতিশোধ। গণপিটুনির সময়কার গুলিবর্ষণ: কার নির্দেশে?
গণপিটুনির সময় এলাকাবাসীর উপর গুলি ছোঁড়া হয় এবং এতে পাঁচজন আহত হন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে—
একটি বিদেশি রিভলভার গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলেছেন নেজামের মৃত্যুদেহের সাথে উদ্ধারকৃত পিস্তল পুলিশের লুন্ঠিত অস্ত্র – এই অস্ত্র নিয়ে এখন প্রশ্ন হলো, এই অস্ত্র কার ছিল?
স্থানীয়দের মতে, এটি মানিকের বাহিনীর সদস্যদের পরিকল্পিত প্রতিরোধের অংশ ছিল। নেজাম ও তার বাহিনীর অপরাধজগত-নেজাম উদ্দিনের অপরাধ কর্মকাণ্ড এতটাই ভয়াবহ ছিল যে
মানিকের পরামর্শে পুলিশ প্রশাসন
২০১৯ সালে তাকে ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে তিনি বেঁচে যান।
নেজামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে—
অস্ত্র ব্যবসা ও অবৈধ চাঁদাবাজি।
সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বাঁশখালীতে জঙ্গি কার্যক্রমে অর্থায়ন।
বিদেশ থেকে অস্ত্র এনে বিক্রি করা।
সাতকানিয়ায় এখন নতুন আতঙ্ক: ‘আদাইয়া বাহিনী’
নেজাম বাহিনীর পতনের পর নতুন আতঙ্ক হয়ে উঠছে ‘আদাইয়া বাহিনী’।
আদাইয়া একসময় মানিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সে নিজের আলাদা বাহিনী গঠন করেছে এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে—সাতকানিয়া আরও ভয়াবহ সংঘর্ষের কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
মানিকের বাহিনী ও জামায়াতপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন রক্তক্ষয়ী লড়াই শুরু হতে পারে।
নিহতের পরিবারের বক্তব্য ও জামায়াতের প্রতিক্রিয়া-
নেজাম উদ্দিনের স্ত্রী আরজু আক্তার বলেন, “আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ডাকাতির অভিযোগ মিথ্যা।” সাতকানিয়া জামায়াত এক বিবৃতিতে জানিয়েছে—
“নেজাম ও সালেককে রাজনৈতিক প্রতিশোধের শিকার করা হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যা।”
পুলিশের বক্তব্য- সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম বলেন,”এটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জের ধরে সংঘটিত হয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্যই মূলত এই ঘটনা ঘটেছে।”
সাতকানিয়ার সাম্প্রতিক গণপিটুনির ঘটনা কেবল ডাকাত সন্দেহে উত্তেজিত জনতার প্রতিক্রিয়া নয়। এর পেছনে রয়েছে—
রাজনৈতিক প্রতিশোধ। ক্ষমতার পালাবদল ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াই।
প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে—
সাতকানিয়া নতুন করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ময়দানে পরিণত হবে। ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করতে আরও সহিংসতা দেখা দেবে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য–সাতকানিয়ার সাম্প্রতিক গণপিটুনির ঘটনা কেবল সাধারণ ডাকাতির প্রতিক্রিয়া নয়, বরং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বের এক ভয়াবহ প্রকাশ। নেজাম উদ্দিন ও মানিক গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের, যা নতুন সরকার আসার পর আরও তীব্র হয়েছে।
এই ঘটনায় স্থানীয় জনতার ভূমিকা, মসজিদের মাইকের ব্যবহার এবং পিটুনির ধরন বিবেচনা করলে এটি একটি পরিকল্পিত প্রতিশোধ বলে মনে হয়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়— যদি সত্যিই তারা ডাকাত হত, তবে পুলিশের কাছে আগে থেকে কোনো তথ্য ছিল না কেন?
অন্যদিকে, নেজাম বাহিনীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, অস্ত্র ব্যবসা ও জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও উপেক্ষা করা যায় না। গণপিটুনিতে নিহতদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হলে সেটিও ন্যায়বিচারের লঙ্ঘন।
এই ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশ আগে থেকেই সংঘাতের ইঙ্গিত পেলেও কেন ব্যবস্থা নেয়নি?
সাতকানিয়া এখন ক্ষমতার শূন্যতায় নতুন সংঘর্ষের মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে। প্রশাসন যদি দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর না হয়, তবে সহিংসতা আরও বাড়বে, যার মূল্য দিতে হবে সাধারণ মানুষকে।
সাতকানিয়ায় কি তবে নতুন ‘গডফাদার’ তৈরির প্রস্তুতি চলছে?

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট