1. mail.bizindex@gmail.com : newsroom :
  2. info@www.bhorerawaj.com : দৈনিক ভোরের আওয়াজ :
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
“বাঁশখালীতে ৪ হাজার ইয়াবাসহ টেকনাফের মাদক কারবারি আটক: ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ” হোমনায় মহান মে দিবস উপলক্ষে  বিএনপির বর্ণাঢ্য র‍্যালি  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর শুভ আগমনে বোয়ালখালীবাসীর পক্ষ থেকে হাজী মোহাম্মদ আলম ববির শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা পুলিশ পরিচয়ে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের ৮ জনকে বেঁধে ছয়টি দোকান ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে মালামাল লুট করেছে দুর্বৃত্তরা রোদেলা দুপুরে পারকি সৈকতের বালুকাবেলায় কলম যোদ্ধারা,স্মৃতিময় এক মে দিবস! ড. মোহাম্মদ ইউনূসের দক্ষিণ চট্টগ্রাম সফর সিএমপি কমিশনার ও পাঁচ ওসি পেলেন আইজিপি ব্যাজ সাহস, দক্ষতা ও মানবিক পুলিশিংয়ের স্বীকৃতি আইজি পি ব্যাজ পেলেন ওসি আফতাব উদ্দিন চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের সূচনালগ্নের সাহসী পুরুষ ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন! দৃষ্টি আকর্ষণ

“আমি পাগল হতে চাই”

 মো. কামাল উদ্দিনঃ
  • প্রকাশিত: বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৯৫ বার পড়া হয়েছে

আমি কেন পাগল হতে চাই?

পাগলামিরও কত রকমফের! কেউ শীতের পাগল, কেউ গরমের পাগল, কেউ আবার টাকার পাগল! শীতে কেউ কম্বলের নিচে লুকিয়ে থাকতে ভালোবাসে, আবার কেউ ঠান্ডা বাতাসে নাক লাল করে স্টাইল মারে। গরমে কেউ রোদে পুড়ে ভাবে—”আহা! আরেকটু কালো হলেই তো শাকিব খানের মতো হ্যান্ডসাম লাগত!” আবার কিছু লোক আছেন, যারা টাকার পাগল! সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের প্রতিফলনে দেখে বলেন—”টাকা আমার জান, টাকা আমার প্রাণ!” টাকা দেখলে তাদের চোখ এমন চকচক করে, যেন মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বলে উঠেছে! ঘুষখোরদের কথা না-ই বলি, ঘুষ দিতে বা নিতে না পারলে তারা এমন অস্থির হয়ে যান, যেন কেউ তাদের প্লেট থেকে মাছের মাথাটা কেড়ে নিয়েছে!

এদিকে কিছু লোক বউয়ের পাগল! বউ যা বলে, সেটাই ধ্রুব সত্য। বাড়িতে ঝড়-তুফান বয়ে গেলেও তারা বলেন—”আরে, আমার বউ যখন বলেছে, ভালো বলেছে!” আবার কেউ কেউ ক্ষমতার পাগল, ক্ষমতা হারিয়ে এমন অসহায় হয়ে যান, যেন তাদের পৃথিবীটাই শেষ হয়ে গেছে!

তবে এসবের ঊর্ধ্বে এক ধরনের পাগল আছেন, যারা আল্লাহর পাগল। তারা দুনিয়ার সব মোহ ত্যাগ করে আল্লাহকে পাওয়ার জন্য ছুটে চলেন, ঠিক যেন এক প্রেমিক তার প্রেমিকার টানে ছুটে চলে! এইসব পাগলদের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হলো—আচ্ছা, আমি তাহলে কীসের জন্য পাগল? টাকার জন্য? শীতের জন্য? নাকি বউয়ের জন্য?

ভাবতে ভাবতে এক সময় বুঝতে পারলাম—আমি তো আসলে লেখার পাগল! কতক্ষণ ধরে বসে এসব লিখেই যাচ্ছি! তাহলে বলুন তো, এই পাগলামিটা ভালো না খারাপ? চলুন-তো দেখি আমি কেন পাগল হতে চাই!!”

এবারের কাণ্ড নিখাদ পাগলামি! আমি পাগল হতে চাই! যদি কেউ এই পাগলামি নিয়ে সংশয়ে থাকেন, তবে দয়া করে লেখা পড়বেন না। আর যদি পড়েন, তাহলে আমার মতো পাগলামি করবেন না—এই অনুরোধ রইল।

এক পাগল তাঁর বাড়ির সামনের বারান্দায় বসে পানিভরা একটি গামলায় ছিপ ফেলে মাছ ধরছিলেন। পথচারীদের মধ্যে একজন কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

— মশাই, কয়টা মাছ ধরলেন?

পাগল দাঁত বের করে উত্তর দিলেন,

— আপনাকে নিয়ে তিনটে! এর আগে দুটো বোকা ধরেছি!

ভদ্রলোক লজ্জায় জিব কেটে বললেন,

— কী বলেন দাদা! বারান্দায় গামলায় মাছ আসবে কী করে? আপনি কি পাগল?

পাগল দুই রকম— রাস্তায় পাগল আর ঘরের পাগল। আমি কেন পাগল হতে চাই, তা পরে বলব। তবে আমার পাগল হওয়ার ইচ্ছে বহু পুরোনো। নানা কারণে সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। তবে আমি অনেক পাগলের সঙ্গেই মিশেছি।

নূর মিঞা পাগল ও তার রাজত্ব

যেমন, আমাদের চেরাগী পাহাড়ের নূর মিঞা পাগল। তাঁর পাগলামি দেখলে আমারও পাগল সাজতে ইচ্ছে করে। বয়স হবে ২৮-৩০ বছর, তবে তাঁর বাড়ি কোথায় কেউ জানে না। কেউ বলে তাঁর একসময় সংসার ছিল, কেউ বলে সে এক শিক্ষিত যুবক, যে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে পাগল হয়ে গেছে। কিন্তু এখন?

এখন সে শুধু রাস্তার রাজা। গাঁজা দিয়ে বিড়ি বানিয়ে খেয়ে রাস্তায় রাজা সেজে পড়ে থাকে। চোখেমুখে কোনো দুশ্চিন্তার ছাপ নেই। আমি মাঝে মাঝে তাঁর সঙ্গে বসে থাকি। কখনো কখনো আহারও করি।

আমার কেন জানি ইচ্ছে হয়, আমি যদি নূর মিঞা পাগলের মতো নির্ভার হতে পারতাম!

পাগল হতে গিয়ে যাঁরা বিপদে পড়লেন

আমি কেন পাগল হতে চাই, সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আমার এক পরিচিতজনের কথা বলি, যিনি পাগল হতে গিয়ে ভয়ংকর বিপদে পড়েছিলেন।

নগরের এক বিশ্রুত মদ্যপের কথা সবাই জানেন। তিনি প্রতি সন্ধ্যায় গ্লাসে অল্প অল্প করে পানীয় ঢালতেন, আর ভাবতেন— “একদিন আমি সমাজের নিয়ম ভেঙে দেব, আমি হবো স্বাধীন! আমি হবো পাগল!”

শুরুতে এটা ছিল নিছক আনন্দ। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি সত্যিই সবকিছু ভুলতে লাগলেন। পরিচিত মানুষজন তাঁকে এড়িয়ে চলতে শুরু করল। বন্ধুরা মজা করে বলত—

— “দাদা, আপনি তো সত্যিকারের পাগল হয়ে যাচ্ছেন!”

শুরুতে তিনি হাসতেন, কিন্তু একদিন সত্যিই পাগল হয়ে গেলেন। সেই মদ্যপ লোকটি আজও রাস্তায় বসে বিড়বিড় করেন, নিজের নাম ভুলে গেছেন, নিজের স্বপ্ন ভুলে গেছেন।

আমি তাঁকে দেখে শিখেছি— পাগল হতে হলে চিন্তাহীন হতে হবে, নেশায় ডুবে নয়!

আমি কেন পাগল হতে চাই?

আমি পাগল হতে চাই, কারণ—

পাগলরা দুঃখ বোঝে না।

পাগলরা হিসাব করে না।

পাগলরা সত্য কথা বলে, কাউকে ভয় পায় না।

পাগলরা সমাজের নিয়ম মানতে চায় না, কারণ সমাজের নিয়মগুলো তাদের কাছে অদ্ভুত লাগে।

আমি ক্লান্ত— এই হিসাব-নিকাশ, এই কূটনীতি, এই সমাজের মিথ্যে মুখোশ দেখে।

তাই আমি পাগল হতে চাই!

তবে হ্যাঁ, আমি সেই পাগল হবো না, যে নিজের জীবনের দিক-নির্দেশনা হারিয়ে ফেলে। আমি হবো সেই পাগল, যে নিজের ইচ্ছে মতো বাঁচতে চায়!

আমি হবো চেরাগী পাহাড়ের নূর মিঞা পাগলের মতো, যে রাজা হয়ে বাঁচে!

খুব অল্পতেই কান্না পেয়ে যেত তাঁর। আমার অবস্থা আবার তার ঠিক উল্টো—যতই খাই, কিছুতেই নেশা হয় না! অল্প খেয়েই তাঁর বিলাপ শুরু হয়ে যেত, তারপর ক্রমশ আরও খেতে থাকতেন। ফলস্বরূপ, নেশা আরও বাড়ত, আর নেশা না হওয়ার আক্ষেপও বেড়ে যেত। নটবর হালদারের কথা মনে পড়লেই আমার পাগল হওয়ার এক কাহিনি মনে পড়ে যায়। তিনি সত্যিই পাগল হতে চেয়েছিলেন! কেউ একজন তাঁকে বলেছিল, কাকের মাংস খেলে মানুষ পাগল হয়ে যায়। কথাটি কানে যেতেই তিনি বহু কষ্টে একটি কাক সংগ্রহ করলেন, সেটি কেটে রান্না করলেন এবং খেলেন। কেমন লেগেছিল, তা তিনিই ভালো জানেন! কিন্তু এরপর থেকে প্রতিদিনই তিনি একটি করে কাক ধরে এনে রান্না করে খেতে লাগলেন। আর প্রতিবারই দুঃখ করে বলতেন, “কীভাবে যে পাগল হব, বলুন তো! কাকের মাংস খেলে নাকি পাগল হওয়া যায়? কত খেলাম, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না!” নটবর হালদারের কিছু না হলেও পাড়ার লোকজন ঠিকই পাগল হয়ে উঠল। কারণ, নটবর হালদার জবাই করা কাকের পালক ফেলে দিতেন রাস্তায়। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে যত কাক ছিল, সব নটবরবাবুর পাড়ায় এসে চেঁচামেচি শুরু করল। হাজার হাজার কাকের কর্কশ শব্দে কান পাতা দায় হয়ে উঠল। জানালার কার্নিশ, ছাদ, বৈদ্যুতিক খুঁটি—সব জায়গায় শুধু কাক আর কাক! সারাক্ষণ তাদের চিৎকার ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না।

এই অবস্থা চলতে থাকল দিনের পর দিন। পাড়ার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ল। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেল, দুটি স্কুল বন্ধ হয়ে গেল, এমনকি বাড়িভাড়াও কমতে কমতে মাত্র পনেরো শত টাকায় নেমে এল। পাড়ার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে অভিযোগ জানালেন, কিন্তু কিছুই করা সম্ভব হলো না। কোথাও কোনো আইন নেই, যা অনুযায়ী কাকের মাংস খাওয়া বা কাকের পালক রাস্তায় ফেলা নিষিদ্ধ করা যায়। অবশেষে পশু কল্যাণ সমিতিতে অভিযোগ করা হলো। সমিতির পক্ষ থেকে নটবরবাবুকে একটি চিঠি পাঠানো হলো, যেখানে বলা হলো, “কাকের মতো নিরীহ পাখি হত্যা করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ, বিশেষত আপনার মতো একজন সদাশয় মানুষের পক্ষে।”

নটবর হালদারের উত্তর এল পরদিনই—”আমি মোটেও সদাশয় নই। আমাকে খেপাবেন না মশাই! আমি পাগল হতে চাই, তাই কাকের মাংস খাই। আর কাক মোটেই নিরীহ নয়। না হলে তাদের অত্যাচারে পাড়ার লোকজন এলাকা ছেড়ে পালাত না। তাছাড়া মানুষ তো যুগ যুগ ধরে হাঁস-মুরগি খেয়ে আসছে। আগে সেটার প্রতিরোধ করুন, তারপর আমাকে বলুন।”

এরপর পশু কল্যাণ সমিতি আর কিছু বলার সাহস পেল না। কিন্তু পুলিশের কাছে পাড়ার লোকের অভিযোগ এতটাই বেড়ে গেল যে, একদিন পুলিশ নটবরবাবুর বাড়িতে হাজির হলো। প্রথম দিন কাকের ভিড়ের কারণে পুলিশের দল ঢুকতেই পারল না। পরদিন সন্ধ্যায় তারা আবার এল। কিন্তু তারা নটবরবাবুকে কী বলবে?

পুলিশ অনেকভাবে ভয় দেখাল, কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। তাঁকে কোনোভাবেই দমানো গেল না। পুলিশ আইন মোতাবেক আত্মহত্যা চেষ্টার জন্য কাউকে আটকাতে পারে, কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পাগল হতে চায়, তার বিরুদ্ধে কী করার আছে?

আমি অবশ্য নটবরবাবুর মতো পাগল হওয়ার জন্য কাকের মাংস খাওয়ার সাহস পাইনি, কারণ কাকের চিৎকার সহ্য করা আমার পক্ষে অসম্ভব! তবে দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে আমি এমনিতেই পাগল হয়ে যাচ্ছি। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ভেজাল খাবার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, খুন-গুম, নারী নির্যাতন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নিরাপত্তাহীনতা—এসব দেখে ধীরে ধীরে আমি সত্যিকারের পাগল হয়ে যাচ্ছি।

কিন্তু আমি পাগল হতে চাই—এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য! আমি পাগল হতে চাই, যাতে রাষ্ট্রযন্ত্রের অন্ধকার রহস্য উন্মোচন করতে পারি, দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে প্রকাশ্যে শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারি! কথায় আছে, “পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়!” তাই আমি সত্যি পাগল হতে চাই।

আমার স্বপ্ন—একটি বিশাল “পাগল সম্মেলন” ডাকা! যেখানে দেশজুড়ে যত পাগল আছে, সবাই একত্রিত হবে। আমরা সবাই মিলে পাগলামির মাধ্যমে দেশকে পাগলমুক্ত করব!

শেষে ছোট্ট একটি পাগল কাহিনি বলেই শেষ করব। একবার এক মন্ত্রী পাগলাগারদ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখানে জরুরি প্রয়োজনে থানায় ফোন করলেন।

মন্ত্রী বললেন, “ওসি সাহেব, আমি পাগলাগারদ থেকে মন্ত্রী বলছি।”

ওসি উত্তর দিলেন, “এই পাগল! তুই আবার কোথা থেকে আমার নম্বর পেলি?”

মন্ত্রী বললেন, “আমি সত্যিই মন্ত্রী বলছি!”

ওসি হাসতে হাসতে বললেন, “আমি জানি, এখানে যারা আসে, সবাই নিজেকে মন্ত্রী ভাবে!”

যাক, বাবা! যদি সত্যিই একবার পাগল হতে পারি, তাহলে হয়তো আমিও মন্ত্রী হতে পারব!

লেখক: সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও টেলিভিশন উপস্থাপক

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট