আমি কবিতার ভাষায় বলতে চাই-
“পুনর্জাগরণের কাব্য, দৈনিক আমার দেশের নতুন ভোর”
বাধার পরা গ্লানি মুছে,
জেগে ওঠে ন্যায়ের শিখা।
সত্যের পথের প্রদীপ হাতে,
শুরু হলো নতুন দিশা।
হিম শীতল রাতের শেষে,
আলো জ্বালে ভোরের গান।
গণমাধ্যমের শৃঙ্খল ভেঙে,
নির্ভীক কণ্ঠ পায় নব প্রাণ।
লাঞ্ছনা আর দমন পেরিয়ে,
অধিকার আজ ফের জাগে।
আমার দেশ—এই পত্রিকা,
ন্যায়ের পথে পথ চলবে।
মানুষের কথা, মাটির গল্প,
আলোর পানে পথিক প্রণাম।
দীর্ঘ দিনের লড়াই শেষে,
দৈনিক আমার দেশ জানায় সালাম। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে দৈনিক আমার দেশ একটি অনন্য অধ্যায়। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পত্রিকাটি দেশের গণমাধ্যম জগতে সাহসী ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের প্রতীক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পত্রিকাটির নীতিগত অবস্থান সবসময়ই ছিল সত্যের পক্ষে এবং দুর্নীতিবিরোধী সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে এটি হয়ে উঠেছিল জনগণের আস্থার একটি মুখপত্র। তবে, এর সাহসী সাংবাদিকতার কারণে এটি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ এবং মুক্ত মত প্রকাশের জন্য এটি যে ধরনের চাপ ও দমননীতির শিকার হয়েছিল, তা দেশের গণমাধ্যম স্বাধীনতার ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে স্থান পায়। বন্ধ হওয়ার ফলে শুধু সাংবাদিকতাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বরং জনগণের তথ্য জানার অধিকারও হরণ করা হয়েছিল।
এই দীর্ঘ সময় ধরে আমার দেশ পত্রিকা ছিল নীরব, তবে এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিকরা নিজেদের অবস্থান থেকে অন্যায়, অবিচার এবং দমননীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছেন। তারা কখনো তাদের আদর্শ ও নীতিতে পিছপা হননি। দীর্ঘ এক দশকের অপেক্ষার পর, আমার দেশ আবারও পাঠকের কাছে ফিরে আসছে। এর পুনরায় প্রকাশ শুধু একটি পত্রিকার কার্যক্রমের শুরু নয়, বরং সত্য ও সাহসিকতার পক্ষে একটি নতুন লড়াইয়ের সূচনা। এই পুনর্জন্ম গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে সংগ্রামের এক উজ্জ্বল প্রতীক হয়ে থাকবে।
পুনরায় প্রকাশিত হওয়ার এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে দৈনিক ভোরের আওয়াজ এবং The Daily Banner পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, আমার দেশ তার ঐতিহ্য ধরে রেখে আবারও জনগণের জন্য সত্য প্রকাশের নির্ভীক মশাল হয়ে উঠবে। এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিজয় এবং সাহসী সাংবাদিকতার প্রতি শ্রদ্ধার পুনর্বাসন। আমরা বিশ্বাস করি, আমার দেশ এর নতুন যাত্রা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে এবং গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও মজবুত করবে।
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করার মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার যে অন্যায় করেছে, তা শুধুমাত্র স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর আঘাত নয়, বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করার একটি নজিরবিহীন উদাহরণ। গণমাধ্যম বন্ধ করা এবং সাংবাদিকদের বেকারত্বে ঠেলে দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার নীতিমালার আলোকে সরকারে এমন সিদ্ধান্তকে নিঃসন্দেহে স্বৈরাচারী আচরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
২০১৩ সালে যখন এই পত্রিকা বন্ধ করা হয়, তখন আমি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলাম এবং সেই লেখাটি আমার সমকথা বইয়ে স্থান পেয়েছে। আমার দেশ পত্রিকা শুধুমাত্র একটি সংবাদমাধ্যম নয়, এটি সত্য বলার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার এবং জনগণের পক্ষের সাংবাদিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। সরকারের নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে এ পত্রিকা ছিল এক সাহসী প্ল্যাটফর্ম, যা স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাসীনদের বিরাগভাজন হয়েছিল।
আজ যখন আমার দেশ আবারও তার যাত্রা শুরু করেছে, এটি নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং তার সহযোদ্ধারা পুনরায় এই পত্রিকাকে সক্রিয় করে প্রমাণ করেছেন যে, সত্য কখনো স্থায়ীভাবে দমন করা যায় না। চট্টগ্রামে এই পত্রিকার নেতৃত্বে থাকা জাহিদুল করিম কচির মতো অভিজ্ঞ ও দক্ষ সাংবাদিকের হাত ধরে চট্টগ্রামবাসী আশা করছেন, আমার দেশ পত্রিকা আবারও জনগণের আস্থা অর্জন করবে এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবিচল থাকবে। এই পুনর্জন্ম শুধু পত্রিকার নয়, বরং দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি নতুন করে আশা জাগিয়েছে। যারা কলম সৈনিক হিসেবে সত্য ও মানবতার পক্ষে দাঁড়ান, তাদের জন্য আমার দেশ পত্রিকা নতুন এক মাইলফলক স্থাপন করতে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের জনগণ এখন অপেক্ষায় আছেন, এই পত্রিকা কিভাবে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে এবং তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখবে।
লেখকঃ যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান-
দৈনিক ভোরের আওয়াজ এবং The Daily Banner পত্রিকার, টেলিভিশন উপস্থাপক।